কোপায় মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ে

আর্জেন্টিনার প্রতিশোধের ম্যাচ!

গত কোপা আমেরিকায় উরুগুয়ের কাছে হেরে বিদায় ঘটে আর্জেন্টিনার। চার বছর পর আবার মুখোমুখি হচ্ছে দল দুটি। মেসিরা কী প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবেন না? চার বছর আগের কষ্ট কী মেসি-আগুয়েরোদের তাতিয়ে তুলবে না?

কোপা আমেরিকায় মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মঙ্গলবার উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে মেসির আর্জেন্টিনা। শুধু গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নয়, বরং কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে মঙ্গলবারের ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই জেরার্ডো মার্টিনোর দলের।

এই সমীকরণে গ্রুপ ‘বি’র দ্বিতীয় ম্যাচে উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। মঙ্গলবারের ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর পাঁচটায় অনুষ্ঠিত হবে। সরাসরি সম্প্রচার করবে সনি সিক্স এইচডি ও সনি কিক্স।

নিজেদের প্রথম ম্যাচ হতাশায় কাটে আর্জেন্টিনার। কোপা আমেরিকার গতবারের রানার্স-আপ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও ২-২ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মেসি-আগুয়েরোদের।

অন্যদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অতিথি দল জ্যামাইকার বিপক্ষে উরুগুয়ে খুব একটা ভালো খেলতে না পারলেও ১-০ গোলের জয় দিয়ে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে।

ফলে মঙ্গলবারের ম্যাচটি আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে উভয় দলের জন্যই নিজেদের প্রমাণের ম্যাচ। প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের শক্তির জানান কতোটা দিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। আবার লুইস সুয়ারেজকে ছাড়া ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের কতো দূর যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে সেটির ওপরও চোখ থাকবে সবার।

প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ায় লিওনেল মেসি ও কোচ জেরার্ডো মার্টিনো উভয়ের কণ্ঠেই হতাশা ঝরে। শুধু মেসিরা নন, হতাশ হয়েছেন কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্ত।

প্রথম ম্যাচের হতাশাজনক ড্র সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। তবে প্রতিপক্ষ উরুগুয়েকে কঠিন প্রতিপক্ষ মানছেন তিনি।

রোমেরো বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে জ্যামাইকার বিপক্ষে ‍খুব একটা ভালো না খেললেও উরুগুয়ে খুব সহজে ছেড়ে কথা বলবে না। প্রতিপক্ষ হিসেবে তারা কঠিন। তাছাড়া তাদের ক্রিশ্চিয়ান রদ্রিগেজ ও এডিনসন কাভানির মতো ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার রয়েছে।’
আর্জেন্টাইন তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া

তবে নিজেদের সেরা খেলা খেলতে পারলে উরুগুয়েকে হারানো কঠিন হবে না বলেও জানান আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক।

তিনি বলেন, ‘আশা করি মঙ্গলবার নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারবো। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথমার্ধে যেমনটা খেলেছি সেভাবে খেলতে পারলে তাদের হারাতে পারবো আমরা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রথমার্ধটি ভালো ছিল না, বরং অসাধারণ ছিল। আমাদের কাছে বল ছিল এবং কোচ যেমনটা চেয়েছিলেন আমরা ঠিক তেমনটাই খেলেছি।’

প্রথম ম্যাচে জ্যামাইকার বিপক্ষে চেনা ছন্দে না থাকলেও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উরুগুয়ে উন্নতি করবে বলে জানান কোচ অস্কার তাভারেজ।

তাভারেজ বলেন, ‘দলের উন্নতির জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাবো। প্রথম ম্যাচে আমরা সেরা ছন্দে ছিলাম না তবে এটা একমাত্র আমাদের সমস্যা নয়। অনেক দলই এখনো নিজেদের সেরা ছন্দে ফিরেনি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা উন্নতি করবো বলে আমার বিশ্বাস।’

উরুগুয়েকে হারাতে পারলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যেতে পারবে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে উরুগুয়ের সঙ্গে হার কিংবা ড্রয়ে কঠিন বিপদের মুখে পড়তে হবে মেসিদের। হেরে গেলে বা ড্র করলে হয় গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে মেসিদের নতুবা কোয়ার্টারে নেইমারের ব্রাজিলের সামনে পড়তে হবে। ফলে কোয়ার্টার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্রাজিলকে এড়ানোর জন্যও জয় দরকার আলবেসেলেস্তেদের।
কার্লোস তেভেজ ও লিওনেল মেসি

এদিকে একইদিন প্যারাগুয়ে ও জ্যামাইকা মুখোমুখি হবে। বাংলাদেশ সয় রাত তিনটায় ম্যাচটি অনষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবারের ম্যাচ শেষেই গ্রুপ ‘বি’র হিসেব মোটামুটি পরিষ্কার হবে।

মুখোমুখি লড়াই: আর্জেন্টিনার ও উরুগুয়ে একে অপরের চেনা প্রতিপক্ষ। এই দুই দক্ষিণ আমেরিকান পরাশক্তি এর আগে ১৫০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। আর্জেন্টিনার ৮৪ জয়ের বিপরীতে উরুগুয়ে জিতেছে ৫৫টিতে। বাকি ৪১ ম্যাচ ড্র হয়েছে।

তবে উরুগুয়ের জন্য স্বস্তির তথ্য হচ্ছে- কোপা আমেরিকায় গত আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে এই আর্জেন্টিনোকে হারিয়েই সেমিতে উত্তীর্ণ হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।

তাছাড়া দুই দলের সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেও জয়ী দলটির নাম উরুগুয়ে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের প্রথম লেগে উরুগুয়েকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিলেও ফিরতি লেগে ২০১৩ সালের ১৫ অক্টোবর মেসির দলকে ৩-২ গোলে হারায় অস্কার তাভারেজের দল।

তবে আর্জেন্টিনার জন্যও স্বস্তির পরিসংখ্যান রয়েছে। চিলিতে আর্জেন্টিনা-উরুগুয়ে এর আগে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে। সেই পাঁচ ম্যাচে ৩টিতে জিতেছে আলবেসেলেস্তেরা। উরুগুয়ের জয় একটিতে এবং অপরটি ড্র হয়। তাছাড়া চিলিতে দুই দলের সর্বশেষ তিন সাক্ষাতেই জয় পায় মেসির দেশ।

চিলিতে উরুগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয়টি আসে ১৯৫৫ সালে। সেবার উরুগুয়েকে ৬-১ গোলে হারায় আলবেসেলেস্তেরা।



মন্তব্য চালু নেই