বাইরের খাবারে বিষাক্ত চিনি !

দেশে ঢুকছে হাজার হাজার টন নিষিদ্ধ ঘন চিনি। যার রাসায়নিক নাম সোডিয়াম সাইক্লামেট। সাইট্রিক এসিড নামেও আমদানি হচ্ছে এটি। যা ব্যবহার করা হচ্ছে মিষ্টি, বেকারি আইটেম, আইসক্রিম, বেভারেজ, জুস, চকোলেট, কনডেন্সড মিল্কসহ আরও অনেক খাবারে।

চিনির চেয়ে প্রায় পঞ্চাশ গুণ বেশি মিষ্টি এই ঘন চিনি পৃথিবীর অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয় ছয়-সাত বছর আগে। কিডনি বিকল, হজম শক্তি হ্রাস, হৃদরোগ, প্রেসারসহ নানা জটিল রোগের সঙ্গে ঘন চিনির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাওয়ার পরই আসে ওই নিষেধাজ্ঞা।

সাইট্রিক এসিডের মতো দেখতে বলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই এসডি নামে ও কোডে আমদানি করছে ঘন চিনি। এ ছাড়া সোডিয়াম সাইট্রেট নামেও আসছে নিষিদ্ধ এ বিষ। মিটফোর্ডে দুই রকম ঘন চিনি বিক্রি হয়। একটি বিশুদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট অন্যটা ভেজাল মেশানো। বিশুদ্ধ ঘন চিনির কেজি ২২০ টাকা এবং ভেজাল ঘন চিনি ১৪০ টাকা।

ভেজাল মিশ্রিত ঘন চিনির সঙ্গে মেশানো হয় ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। এটাও দেখতে চিনির মতো দানাদার, দাম ১৫/২০ টাকা প্রতি কেজি। তবে এটা স্বাদহীন। গত ১১ জুন তারিখে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের একটি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল থেকে এসব জানা গেছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে এই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠান চট্রগ্রাম বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. মাহবুব কবীর। তিনি বলেন, মিটফোর্ড থেকে ভেজাল এক কেজি ঘন চিনি কিনে সরকারিভাবে চিঠি দিয়ে ১০০ গ্রাম নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠালাম সরকারি ল্যাব (সারের জন্য) খামার বাড়ির মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে। রিপোর্টে পেলাম সেই ঘন চিনির নমুনায় ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার পাওয়া গেছে।

sugar test letter

ঘন চি‌‌‌নি বিক্রি করে এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক কেজি ঘন চিনির দাম ২২০-২৪০ টাকা আর পঞ্চাশ কেজি চিনির দাম ২ হাজার টাকা। আমরা এক কেজি ঘন চিনি দিয়ে পঞ্চাশ কেজির কাজ সারতে পারি।

মাহবুব কবীর বলেন, শুধু চট্রগ্রাম বন্দর, কাস্টমস নয়, বাংলাদেশের সমস্ত স্থল ও সমুদ্র বন্দরকে সতর্ক করতে হবে যাতে কোনওভাবেই সাইট্রিক এসিড, সোডিয়াম সাইট্রেট এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নামে কোনও ঘন চিনি দেশে ঢুকতে না পারে।

ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের শুল্ক কম এবং দেখতে ঘন চিনির মতো একই হওয়ায় তিন নামেই ঘন চিনি আমদানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ এ চিনি দিয়ে তৈরি খাবার ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট খেয়ে আমাদের পরিণতি কী হচ্ছে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. সামিউর রশিদ রিফাত বলেন, আমাদের শরীরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ- অগ্ন্যাশয়, লিভার ও কিডনি আক্রান্ত হবে।

ডা. রিফাত আরও বলেন, মানবশরীরের প্রতিটি অঙ্গই একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। ক্ষতিকর কিছু গ্রহণ করলে স্বাভাবিকভাবেই তা পাকস্থলীতে যায়, রক্তে মেশে। ঘন চিনির কারণে অতিরিক্ত ইনসুলিনের ক্ষরণ হয়। এতে অগ্ন্যাশয়ে চাপ পড়ে ইনসুলিন তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখনই দেখা দেয় ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ। এ ছাড়া লিভার অকার্যকর হয় এবং কিডনির নিষ্কাশন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়।



মন্তব্য চালু নেই