আনন্দবাজারকে অন্ধকার জীবন সম্পর্কে আশরাফুল
বাংলাদেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল এর একটি ফোন সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। সাক্ষাৎকারটি নেন বাংলাদেশ-ভারত চলতি ক্রিকেট ম্যাচ কাভার করতে আসা আনন্দবাজার পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়। আজ প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারটিতে বর্তমান ও আগামীর অনেক কথাই বলেছেন আমাদের এই ক্রিকেট তারকা।
সাক্ষাৎকারটিতে আশরাফুল সম্পর্কে ক্রীড়া সাংবাদিক রাজর্ষি লেখেন- বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ পর্যন্ত যে ক’জন নামী ক্রিকেট-ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছে, তার মধ্যে তার নামটা অগ্রগণ্য। দেশের অধিনায়ক ছিলেন। বিশ্বকাপ খেলেছেন। আশরাফুল জীবনে আলো দেখেছেন যেমন, অন্ধকারের গলিঘুঁজিও তার জন্য অপেক্ষা করেছে ঠিক ততটাই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে গড়াপেটা করে প্রথমে আট, পরে কমে পাঁচ বছরের নির্বাসন, যার মধ্যে দু’বছর মওকুফ হওয়ার দিকে। আগামী বছরের আগস্টেই তার ক্রিকেট-হাজতবাসের মেয়াদ ফুরোচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাক্তন অধিনায়ককে ফোনে ধরা হল যখন, তখন তিনি ঢাকার একটা সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলছেন। তারই মধ্যে বিগত কয়েক বছরের অন্ধকার জীবন নিয়ে আনন্দবাজার-কে যা বললেন…
প্রশ্ন: আপনাকে এখন রোজ ঢাকার একটা মাঠে সকাল ন’টা থেকে ব্যাট হাতে দেখা যাচ্ছে বলে খবর।
আশরাফুল: এখন নয়, অনেক দিন ধরেই তো যাচ্ছি। ঢাকার গুলশন ইয়ুথ ক্লাবে। সকাল ন’টা থেকে দেড়টা। রোজ নয়, সপ্তাহে চার দিন।
প্রশ্ন : তিরিশ বছর বয়স আপনার। এখন কোথায় কামব্যাক করবেন?
আশরাফুল: কেন, প্রথমে ঘরোয়া ক্রিকেট। তার পর জাতীয় দল।
প্রশ্ন: তা বলে তখন প্রায় বত্রিশে…
আশরাফুল: ভাল খেলতে গেলে ভাল প্রস্তুতি দরকার। বয়স নয়। মিসবাহ পঁয়ত্রিশে পেরেছে। আপনাদের শচিনও। তা হলে আমি পারব না কেন বত্রিশে জাতীয় দলে ফিরতে?
প্রশ্ন : কিন্তু আপনার জীবনে এমন কামব্যাকের তো প্রয়োজনই পড়ত না বছরদুয়েক আগে গড়াপেটার কান্ডটা না ঘটালে। ওটা করেছিলেন কেন?
আশরাফুল: কেন যে করেছিলাম, তার উত্তর আজও আমি পাই না। বললে বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, টাকার জন্য করিনি। প্রথম বার বিপিএল থেকে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, পেলামই না। তাতে তো কিছু বলিনি। বলতে পারেন, পরিস্থিতি আমাকে ওখানে ফেলে দিয়েছিল।
প্রশ্ন : সেটা কী?
আশরাফুল: বলে বোঝানো যাবে না। আর তাতে কিছু পাল্টাবেও না। আর আমি তো স্বীকার করি যে অত্যন্ত অন্যায় করেছিলাম। আমাকে নির্বাসনে পাঠানো একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: সাধারণত কাউকে কিন্তু এ ভাবে ‘আমি অপরাধী’ বলতে শোনা যায় না। গড়াপেটা করলেও না।
আশরাফুল: ঠিক। কেউ এটা করে না। কিন্তু আমি করি। আমি জানি এই সময়টা কী রকম গিয়েছে আমার। আমি জানি আমার নিজের কষ্ট কতটা ছিল।
প্রশ্ন : লোকে কী বলত তখন?
আশরাফুল: কী আবার বলবে? কেউ আশা করে যে দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার গড়াপেটা করবে? নিজে বহু বার ভেবেছি এটা কী করলাম? ক্রিকেট আমাকে এত কিছু দিল, আর তার সঙ্গেই এটা করলাম? পরে ভাবলাম, প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
প্রশ্ন : তাই আবার মাঠে যাওয়া?
আশরাফুল: হ্যাঁ। আমি ঠিক করে ফেলি যে অপরাধ স্বীকার করব। যা শাস্তি দেবে, মেনে নেব। তার পর ফিরব ক্রিকেটে। দেশবাসীকে দুঃখ দিয়েছি। ব্যাট হাতে আনন্দ দিয়ে তবে খেলা ছাড়ব।
প্রশ্ন : বুধবার থেকে তো ফতুল্লা টেস্ট শুরু। কী মনে হচ্ছে?
আশরাফুল: বাংলাদেশ কিন্তু ভাল করবে। সাকিব, তামিম, মুশফিকুরদের এই ব্যাচটা খুব ভাল। সাকিব, তামিমকে ওদের অভিষেক থেকে দেখছি।
প্রশ্ন : কিন্তু একটা ব্যাপার ভেবে দেখেছেন? পরের বছর জাতীয় দলে ফেরেনও যদি, সাকিব-তামিম তো বটেই, আপনাকে রুবেলের বয়সিদের সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে। পারবেন?
আশরাফুল: কী আছে? বললামই তো যে সাকিবদের অভিষেক দেখেছি। ওদের সঙ্গেও মানিয়ে নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : এমনি কামব্যাক এক জিনিস। গড়াপেটা করে ফেরা আর এক। আজহারকে শোনা যায়, তার সতীর্থরা একটা সময় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছিলেন।
আশরাফুল: আজহার আর আমার মধ্যে তফাৎ আছে। আমি ভুল করেছিলাম। কিন্তু আজহার হইনি। ও কি কিছু স্বীকার করেছিল? শুনিনি তো। আমি সেখানে টিমের সবার কাছে আলাদা করে ক্ষমা চেয়েছি। আমার মধ্যে সেই দমটা আছে। এর পর জাতীয় দলে ফিরলে যদি সতীর্থরা মেনে না নেয়, আর কী করতে পারি। কিন্তু এটাও বলতে চাই এটা ক’জন পারে করতে? এশীয় সংস্কৃতিতে এটা কখনও হয়েছে কি?
মন্তব্য চালু নেই