নগরকান্দার কর্মসৃজন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ও রামনগর ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের চলমান কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালমা ও রামনগর ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজে খাতা-কলমে শ্রমিক সংখ্যা ঠিক রেখে বাস্তবে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করানো হচ্ছে। তালিকায় অধিকাংশ শ্রমিকের নাম ভুয়া ও ভুতুরে। এসব ভুয়া শ্রমিকদের নামের টাকা উত্তোলন করে ভাগ ভাটয়ারা করে নিচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নে ১৯৪ জন ও রামনগর ইউনিয়নে ১৩৩ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক এ প্রকল্পের অধিনে ৪০ দিন কাজ করার কথা রয়েছে। এ কাজে একজন শ্রমিক প্রতিদিন দুই’শ টাকা করে ৪০ দিনের কাজে ৮ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের এ কাজ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল, শনিবারে। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কাজ বন্ধ থাকবে এবং সপ্তাহের বাকি ৫ দিন কাজ চলার কথা রয়েছে। তালমা ইউনিয়নে ৩ টি প্রকল্প করে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে।
এ ইউনিয়নে একটি প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য আঃ ছালাম মিয়াকে। তার প্রকল্পে ৮৮ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ করতে দেখা গেছে মাত্র ৫৩ জন শ্রমিককে। তবে ঐ প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য আঃ ছালাম বলেন, আমার প্রকল্পে কাজ করছে ৬০ জন শ্রমিক। আর একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য তারা মিয়াকে। এ প্রকল্পে কাজ করার কথা রয়েছে ৫৫ জন শ্রমিক। বাস্তবে কাজ করছে মাত্র ৩৯ জন শ্রমিক।
এ প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য তারা মিয়া বলেন, আমার প্রকল্পে কাজ করছে ৪৪ জন শ্রমিক। এবং অন্য আর একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে। এ প্রকল্পে ৫১ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ করছে মাত্র ৩৬ জন শ্রমিক। তবে এ কাজের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার প্রকল্পে কাজ করছে ৪২ জন শ্রমিক। রামনগর ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে ৩টি প্রকল্প করে কাজ চলছে। এ ইউনিয়নে একটি প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য জমেলা বেগমকে। তার প্রকল্পে ৪৭ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ করতে দেখা গেছে মাত্র ২৪ জন শ্রমিককে। তবে এ কাজের প্রকল্প কমিটির সভাপতি জমেলা বলেন, আমার প্রকল্পে কাজ করছে ২৯ জন শ্রমিক। আর একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগমকে। তার প্রকল্পে ৪৯ জন শ্রমিক কাজ করা কথা থাকলেও বাস্তবে কাজ করছে মাত্র ২৯ জন শ্রমিক।
এ কাজের সভাপতি আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার প্রকল্পে ৩৪ জন শ্রমিক কাজ করছে। এবং অন্য আর একটি প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য আমিরন বেগমকে। এ প্রকল্পে কাজ করার কথা রয়েছে ৩৭ জন শ্রমিকের। তবে বাস্তবে কাজ করছে মাত্র ২৩ জন শ্রমিক। এ প্রকল্প কমিটির সভাপতি আমিরন বেগম বলেন, আমার প্রকল্পে ২৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে ও প্রকল্প কমিটির সভাপতিদের বক্তব্য থেকে প্রমান পাওয়া গেছে যে, তালিকায় থাকা শ্রমিক সংখ্যা ও নামের সাথে বাস্তবে এসব প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিক সংখ্যার তেমন কোন মিল নেই।
এলাকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষেরা জানান, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করা হলেও, অধিকাংশ প্রকৃত গরীব মানুষেরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোন সুবিধা পাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা খাতা কলমে শ্রমিক সংখ্যা ঠিক রেখে কম শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের কাজ করাচ্ছে। তারা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ও গরীব মানুষদের সুবিধা বঞ্চিত করে হাতিয়ে নিচ্ছে কর্মসৃজন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে তালমা ইউপি’র চেয়ারম্যান ফিরোজ খান বলেন, কাজ কোথায় কি ভাবে হচ্ছে আমি জানি না।
এ ব্যাপারে যে মেম্বররা পিআইসি আছে তারা ভাল বলতে পারবে। রামনগর ইউপি’র চেয়ারম্যান কাইমুদ্দিন মন্ডল বলেন, একটু উন্নিশ বিশ হতে পারে । নাম দিলেও সবাই কাজে আসেনা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, হত দরিদ্রদের কর্ম সংস্থানের জন্য সরকার এ প্রকল্প দিয়েছে। গরীবদের কাজ না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করলে আল্লাহ গজব দিবে। ট্যাগ অফিসারদের দায়িত্ব কাজ কেমন হচ্ছে দেখা। একজন শ্রমিকের টাকাও কেউ আত্মসাৎ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এক চুল ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, প্রকল্পে যে কয়জন শ্রমিক কাজ করছে শুধু তাদেরকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। এর বেশি শ্রমিকের নামে কেউ টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথাযত ব্যবস্থা নিবো।
মন্তব্য চালু নেই