নগ্নতার শর্ত এবং নবাগতারা
হিন্দি সিনেপাড়ায় নায়িকাদের খোলামেলা পোশাক পরা বা অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় এখন আর নতুন কিছু নয়।
তবে প্রযোজক এবং নির্মাতা একতা কাপুর তার সিনেমায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে নগ্নতার শর্ত আরোপ করার পর থেকে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে বিষয়টি। নতুন প্রজন্মের তিন অভিনেত্রী এই শর্ত মেনে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন তার সিনেমা ‘এক্সএক্সএক্স’-এ।
এই শর্ত, সিনেমায় খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয়ের ব্যাপারে চিন্তাধারাসহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় দৈনিক মিড-ডে কথা বলে নবাগতা পাঁচ অভিনেত্রীর সঙ্গে।
কাইরা দত্ত
কেন ঘোষ পরিচালিত ‘এক্সএক্সএক্স’ সিনেমায় একতা কাপুরের নগ্নতার শর্ত মেনেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মডেল কাইরা দত্ত। মডেলিং থেকে অভিনয়ে আসার অভিজ্ঞতা নিয়ে কাইরা বলেন, “২০১৩ সালে কিংফিশার ক্যালেন্ডারের কাজ করার পর আমি মডেলিং শুরু করি এবং সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে শুরু করি। এসময় আমি অনুপম খেরের অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও ভর্তি হই।”
তিনি আরও বলেন, “একজন মডেল হিসেবে নিজের শরীর নিয়ে আমি স্বচ্ছন্দ। এরপরও ‘এক্সএক্সএক্স’-এর জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর এতে অভিনয় করা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। তিন ধাপের অডিশন ছিল, যখন আমাকে বলা হলো এর মধ্যে একটি চরিত্রের জন্য আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, প্রথমেই আমি আমার বাবা-মাকে জানাই। আমাদের পরিবারে মেয়েদের সব সময় তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহিত করা হয়। যখন আমি ‘এক্সএক্সএক্স’-এর ব্যাপারে তাদের বলি, তারা খুবই খুশি হয় যে, আমি আমার প্রথম সুযোগ বালাজির কাছ থেকে পেয়েছি।”
নগ্নতার শর্ত নিয়ে তিনি বলেন, “নগ্নতার শর্তের ব্যাপারে বলতে চাই, আমি জানতাম আমাকে কি কি করতে হবে। এ কারণে আমার কাছে এই বিষয়টি খুব বড় হয়ে ওঠেনি। সিনেমাটির ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি একজন নারী। যখন আপনি জানবেন, ক্যামেরার পেছনে মানুষটি একজন নারী, তখন আপনি এমনিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।”
মান্নারা চোপড়া
২০১৪ সালের ইরটিক থ্রিলার ‘জিদ’-এর মাধ্যমে হিন্দি সিনেমায় আসেন দক্ষিণের অভিনেত্রী মান্নারা চোপড়া। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই বোন সিনেমায় খোলামেলা উপস্থিতির পাশাপাশি আলোচিত হয়েছিলেন পোস্টারে অর্ধনগ্ন হয়ে আবির্ভূত হয়ে।
নিজের সিনেমা সম্পর্কে তিনি বলেন, “দক্ষিণে একটি সিনেমায় কাজ করার পর আমি কয়েকটি হিন্দি সিনেমায় অডিশন দিই, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘জিদ’- একটি ইরটিক থ্রিলার। আমি দুইবার অডিশন দিই এবং আমার হিন্দির উপর জোর দিই। আমি যখন নির্বাচিত হলাম, আমাকে সিনেমার অন্তরঙ্গ দৃশ্য সম্পর্কে বলা হল। আমি রাজি হই কারণ সিনেমাটি পরিবারের সঙ্গে দেখা সম্ভব।”
নগ্নতার শর্ত সম্পর্কে বলেন, “আমি অবশ্য নগ্নতার শর্তে কখনও রাজি হব না। আমি কোনো সীমা নির্ধারণ করিনি, তবে আমি এমন সিনেমাতেই অভিনয় করবো, যেগুলো পরিবার নিয়ে দেখা সম্ভব হবে।”
স্নেহা অরুন
‘এক্সএক্সএক্স’-এর অন্যতম অভিনেত্রী স্নেহা অরুন। এই সিনেমা দিয়েই হিন্দি সিনেজগতে অভিষেক হচ্ছে তার। তিনি বলেন, মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকলেও খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করাটা তার জন্য অনেক কঠিন ছিল।
“‘এক্সএক্সএক্স’-এর মাধ্যমে আমার অভিষেক ঘটছে। অডিশনের সময় আমি আমি খুবই অপ্রস্তুত ছিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ফিরে আসার, কিন্তু আমাকে বলা হয় একবার চেষ্টা করে দেখতে। প্রথমে খারাপ হলো, কিন্তু দ্বিতীয়বারে আমি ঠিকঠাক ভাবে উৎরে গিয়েছিলাম। আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু আমার শরীর তৈরি ছিল না। আমি একজন থিয়েটারকর্মী হওয়া সত্ত্বেও এরকম সাহসী দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলাম।”
সিনেমাটি নিয়ে পরিবারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্নেহা বলেন, “২০ দিন পরে আমাকে জানানো হলো যে আমি নির্বাচিত হয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বাবা-মাকে জানালাম সিনেমাটি এবং আমার চরিত্রটির সম্পর্কে। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। পুনেভিত্তিক একটি মহারাষ্ট্রীয় পরিবার থেকে আসার কারণে আমার জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে বলেন শুধু অভিনয় নিয়ে চিন্তা করতে; বাকিটা তারা সামলাবেন।”
“আমি কাজটিকে একজন অভিনয়শিল্পীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। আমি সানি লিওনির ভিডিও দেখা শুরু করলাম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমি আমার চরিত্রটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তবে আমি নিশ্চিত না এতে আমি স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করবো কি না। তবে সিনেমার পরিচালক কেন ঘোষের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে আমার মনে হয়েছে সবকিছু ঠিক আছে।”
সিনেমার খোলামেলা দৃশ্য নিয়ে তিনি বলেন, “একতা কাপুর এবং কেন ঘোষ নিশ্চিত করেছিলেন যেন ওই সময়ে সেটে অনেক কম মানুষ থাকে। যারা ছিলেন, তাদের মধ্যেও অধিকাংশ ছিলেন নারী। আমি আমার সহশিল্পীদের কেবল অভিনেতা হিসেবে নয়, নিজের মানুষ হিসেবে গণ্য করেছি। আর তাই অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিং এতো ভাল হয়েছে।”
নগ্নতার শর্ত নিয়ে তিনি বলেন, “যখন প্রথমবার নগ্নতার শর্তের ব্যাপারে আমি শুনলাম, এক মুহুর্তের জন্য সত্যিই আমি অনুভূতিশূণ্য হয়ে পড়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমাকে নগ্ন হতে হবে! তবে এরকম শর্ত কর্তৃপক্ষ জুড়ে দিয়েছিল, যাতে পরে আমরা সিনেমাটি থেকে পিছিয়ে আসতে না পারি।”
প্রিয়াঙ্কা তালুকদার
কলকাতার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা তালুকদার ‘এক্সএক্সএক্স’-এর তৃতীয় অভিনেত্রী। অল্প সময়ের মধ্যেই হিন্দি সিনেমায় অভিষেক হচ্ছে বলে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছেন তিনি।
সিনেমাটিতে নিজের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমি কলকাতা থেকে এসেছি, এবং এক বছর হলো মডেলিং করছি। ‘এক্সএক্সএক্স’-এর মাধ্যমে বলিউডে আমার অভিষেক হচ্ছে। কেন আমাকে সিনেমার অডিশনের জন্য ডাক দিয়েছিলেন। তিনি যখন আমাকে সিনেমাটি এবং এর চরিত্রের জন্য কি কি করতে হবে- এসব সম্পর্কে বললেন, একজন মডেল হওয়ায় বিকিনি পরা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা ছিল না। পরে তিনি আমাকে জানালেন, এর বেশিও আমাকে করতে হবে। আমি তার কাছে এর জন্য ভাবার সময় চাইলাম।”
“আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বললাম, এবং তারা আমাকে এগিয়ে যেতে বলল। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি একটা সিনেমায় অভিনয় করছি। প্রতিদিন মুম্বাইয়ে অনেক অনেক মানুষ আসে অভিনয়শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে, তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। আর তাই আমি যেহেতু এখন সিনেমায় অভিনয় করছি, তাই সিনেমাটি বেশি সাহসী কি না-এটা নিয়ে আমি ভাবছি না।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বাবা এখনও জানেন না, সিনেমাটির নাম। আমার মা একজন অভিনেত্রী এবং তিনি আমাকে বলেছেন, সিনেমাটি আমার বাবা কিংবা ভাই দেখবে কি না, এটা নিয়ে চিন্তা না করতে। অভিনেত্রী হিসেবে এটিকে একটি চরিত্র হিসেবেই দেখ এবং তোমার সেরাটা দাও। ভারতে এখন এই ঘরানার সিনেমা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
মানাসভি মামগাই
২০১৪ সালে অজয় দেভগানের বিপরীতে ‘অ্যাকশন জ্যাকসন’-এর মাধ্যমে অভিষেক ঘটে সাবেক এই মিস ইন্ডিয়া এবং সুপারমডেলের। অভিষেকের সিনেমাতেই স্বল্পবসনা হয়ে অভিনয় করতে হয়েছে তাকে।
তিনি এই ব্যাপারে বলেন, “যখন আমি “অ্যাকশন জ্যাকসন”-এর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম, আমি জানতাম আমরা চরিত্রের প্রয়োজনে আমাকে ছোট পোশাক পড়তে হবে। তবে আমাকে বলা হয়েছিল দৃশ্যগুলি নান্দনিক ভাবে ধারণ করা হবে। তবে আমি খুব একটা সংকোচ বোধ করিনি কারণ, আমার সহশিল্পী ছিলেন অজয় দেভগান এবং নির্মাতা ছিলেন প্রভু দেবা।”
সিনেমায় সাহসী দুশ্যে অভিনয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন আপনাকে বলা হবে, এরকম দৃশ্যে অভিনয় করতে, তখন আপনাকে দেখতে হবে সিনেমাটির নির্মাণের আয়োজন কি ধরনের। আমার অভিভাবকরা সিনেমায় আমার সাহসী চরিত্র নিয়ে কোনো সমস্যা বোধ করেননি। সময় পাল্টেছে এবং খোলামেলা হওয়াটা এখন আর খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়। এখন অনেক সাহসী সিনেমা তৈরি হচ্ছে এবং সেগুলো নান্দনিকভাবেই ধারণ করা হচ্ছে।”
নগ্নতার শর্ত নিয়ে মানাসভি বলেন, “নগ্নতার শর্তে চুক্তিবদ্ধ হওয়াটা একটু বাড়াবাড়ি এবং আমি নিশ্চিত নই এ ধরনের শর্তে আমি রাজি হব কিনা। এটা যদি সেক্স কমেডি হয়, তাহলে আমি সই করবো না। আমি এ ধরনের সিনেমা পছন্দ করিনা।”
মন্তব্য চালু নেই