আর কত যৌন নিপীড়ন? এবার বখাটেদের কারণে এক অদ্যম মেধাবী ছাত্রীর জীবন অনিশ্চিত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নাসিরনগর উপজেলার নবম শ্রেণীর এক মেধাবী ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে বখাটেরা। আর এ কারণে বন্ধ হতে চলেছে তার লেখাপড়া।
যৌন নিপীড়নের ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উল্টো নিপীড়কদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করায় পুলিশ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবার ও মামলার সাক্ষীদের। ফলে এই ছাত্রীর পরিবার ও সাক্ষীরা ভুগছে আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায়।
বখাটে পল্লব উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামের কামরুল ইসলাম প্রকাশ কমর মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী এই কিশোরী স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর বখাটে পল্লব ও তার ৪ সহযোগী মিলে তাকে অপহরণ করে। এরপর তাকে জোর করে একটি কক্ষে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে যৌন নিপীড়ন করে। পাশাপাশি তার নগ্ন শরীরের ভিডিও করে বখাটেরা। পরে এ বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে বখাটেরা এই ভিডিওটি ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় পর থেকে স্কুলে যেতে পারছে না মেয়েটি। এতে করে তোলপাড় শুরু হয় পুরো নাসিরনগরে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় শালিসকারকরা বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার জন্যে পরিবারটিকে আশ্বাস দেন। কিন্ত প্রায় তিনমাসেও কোনো বিচার না পেয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে মেয়েটির বাবা। পুলিশ তাদের লিখিত অভিযোগ আমালে না নিয়ে নিজের মতো করে পর্ণোগ্রাফি আইনে গত ২৪ এপ্রিল বখাটে পল্লবসহ ৫ জনকে আসামি করে নাসিরনগর থানায় মামলা রুজু করে। কিন্তু মামলা রেকর্ড হওয়ার একমাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আসাসি গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। উল্টো মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বিভিন্ন সময়ে মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। যৌন নিপীড়নকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। কিন্ত এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ কয়েকজনকে হুমকিও দেয়।
এ ব্যাপারে মামলার সাক্ষী ফারুক মোল্লা জানান, এ মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারের লোকজনসহ জানমালের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে বখাটেরা। পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার কথা জানালেন তিনি।
মামলার অপর সাক্ষী মো. সোয়েব রেজা জানান, দীর্ঘ একমাসেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারায় আমরা মানববন্ধন করতে গেলে মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা থানা থেকেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, মানববন্ধন করায় পুলিশ আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
নির্যাতিতা মেয়েটি জানান, সামনে তার পরীক্ষা। স্কুলে যেতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাকে স্কুলে যেতে বারণ করছে। যে স্যারদের কাছে প্রাইভেট পড়তাম তাদেরও না পড়ানোর জন্য বলে দিয়েছে। আমার স্কুলে যেতে মন চায় কিন্তু পারছি না স্যারদের অসহযোগিতার কারণে।
স্কুলে না যাওয়ার কারণে মেধাবী এ মেয়েটির শিক্ষা জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তায়। মেয়েটিকে স্কুলে আনার জন্য কোনো পদক্ষেপেও গ্রহণ করেননি তারা।
এ ব্যাপারে আশুতোশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধার শিক্ষক মো. আব্দুর রহিম জানান, আমরা মেয়েটির ফরম ফিলাপ নিজেরাই করে দিয়েছি। তবে মেয়েটি স্কুলে আসলে আমাদের কোনো বাধা নাই।
আপনারা মেয়েটিকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মেয়েটিকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি।
আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কিত মেয়েটির বাবা। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলেও জানান তিনি।
মেয়েটির বাবা জানান, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্কুলের স্যাররা যেমন আমার মেয়েটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, পাশাপাশি আমরা পুলিশের কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না।
মামলা সম্পর্কে জানতে নাসিরনগর থানায় গিয়ে ওসিকে পাওয়া যায়নি।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার শাহরিয়ার আল মামুন জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তারা এলাকা থেকে সরে গিয়েছে। আমরা তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারিনি এখনো। তবে দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মেধাবী এই ছাত্রীটিকে স্কুলে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়েছে।
পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে মেধাবী ছাত্রীটির স্বাভাবিক শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষরা।
মন্তব্য চালু নেই