জাবিতে পাঁচ ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হলের পাঁচ ছাত্রকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে কেউ অভিযোগও করেননি। গত রোববার থেকে চার দিনে এসব মারধরের ঘটনা ঘটে।
হলটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিবরণ অনুযায়ী, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হলের ২২৩ নম্বর কক্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সারজিল ইমতিয়াজকে রড, পাইপ ও স্টাম্প দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মী কৌশিক বসাক, বিকাশ কুমার মহন্ত, অর্ণপ দত্ত ও মাকসুদুর রহমান। এতে তাঁর ডান পা ভেঙে যায়। ছাত্রলীগের কর্মীরা সারজিলের সিগারেট খাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন। কিন্তু তা অমান্য করায় তাঁকে মারধর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্র জানান, মারধরের সময় সারজিলকে কয়টি আঘাত করা হচ্ছে তা গণনার জন্য অন্য এক শিক্ষার্থীকে নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। চারজন মিলে গুনে গুনে সারজিলকে ৩০টি আঘাত করেন।
গুরুতর আহত সারজিলকে হলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে তাতেও বাধা দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হল প্রাধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে সারজিলকে সাভারের সিআরপিতে (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর ডান পায়ে প্লাস্টার করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগে রোববার ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোসাব্বিরুল সাব্বির ও সাদমান সৌমিককে ঢাকায় নিয়ে যান সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে দুজনের জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায়। পরে তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মীদের না জানিয়ে জুতা ঠিক করতে যান। এ কারণে পরদিন সোমবার রাত ১১টার দিকে ওই দুজনকে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মী কৌশিক সরকার।
ছাত্রলীগের কর্মী বিকাশ কুমার মহন্ত লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মাহবুব সরকারকে মাথা ন্যাড়া করতে ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জানে আলমকে চুলে ‘আর্মিকাট’ দিতে বলেছিলেন। তাঁরা সেই নির্দেশ না মানায় মঙ্গলবার রাতে তাঁদের মারধর করেন বিকাশ।
এসব বিষয়ে কথা বলতে গতকাল ছাত্রলীগের কর্মী মাকসুদুর রহমানকে ফোন করলে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর ও হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কিছুই হয়নি।
কৌশিক বসাকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে ফোন অপর এক কর্মীর কাছে দেন। অর্ণপ দত্তকে ফোন করলে তিনি ফোন কেটে দেন এবং এই মুহূর্তে কথা বলতে পারবেন না বলে খুদে বার্তা পাঠান।
কথা বলতে চেষ্টা করেও বিকাশের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একই হলের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ বলেন, ‘আমি সারজিল ইমতিয়াজের বিষয়টি শুনে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। বেশ কয়েকজনকে শাসনও করেছি। বিষয়টির সমঝোতা হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ঘটনাগুলো আমি শুনেছি। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারছি না। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
মন্তব্য চালু নেই