অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ছাত্রজোটের স্মারকলিপি
ভর্তি জালিয়াতির মধ্য দিয়েই বেরোবিতে ১ম মেধা তালিকা প্রকাশ
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে(বেরোবি)২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ মাথায় নিয়েই ১ম মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে । গতকাল সন্ধ্যায় এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এ দিকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে অনেকের মেধা তালিকায় নাম, এ ইউনিটের সমন্বয়কের ১৮ টি ও এম আর শীট তার নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ,ভর্তি পরীক্ষায় ৪ জন প্রক্সিদাতা এবং দুই দিনের ভাইভায় ১৩ জন ভুয়া প্রার্থী ধরা ধরা পড়া এবং এদর পেছনে জড়িত শক্তিশালী সিন্ডিকেট কে খুঁজে বের করে শাস্তি প্রদানের দাবিতে আজ বেরোবি শাখার প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর এক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারককলিপিতে অভিযোগ করা হয়,এক কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থে পুরো ভর্তি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতাকে নষ্ট করেছে।ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তাদের সকল অনৈতিক ও বেআইনি অভিযোগগুলো হলো
১.ওএমআর শীট ছাড়াই এ ইউনিটের ১১৬০২৪,১১৩৭৬৭ও ১১৫৯৫০(যাদের মেধাক্রম যথাক্রম ২৪,৩০ ও ৫৩)রোল নম্বরের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
২.এ ইউনিটের ওএমআর শীট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক(এ ইউনিট)একক সিদ্ধান্তে বাসায় নিয়ে যায়।
৩.ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও এ ইউনিটের মেধা তালিকায় মোস্তাফিজুর রহমান ১৬১ তম স্থান(রোল নম্বর-১৪৬০২০) করে অধিকার করে।
৪.অবৈধ পন্থায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও ভাইভা পরীক্ষায় ধরা পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা(সেকশন অফিসার গ্রেড-২) ও সরকারদলীয় পরিচয়দানকারী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিজেদের রক্ষার জন্য অপরাধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এ বিষয় গুলো আমলে নিয়ে সংগঠনটি তিন দফা দাবি উপস্থাপন করে।দাবিগুলো হচ্ছে-১.একটি স্বচ্ছ কমিটি গঠন ২.তদন্তে প্রমানিত অপরাধিদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করণ এবংঅপরাধিদের শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল স্থগিত রাখা।
এ দিকে ভাইভায় দুই দিনে ১৩ জন ভুয়া প্রার্থী আটক এবং তাদের পেছনে জড়িতদের বিষয়ে শাস্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ভিসি ধরা পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়েবলেন,আমরা দোষিদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছি।যথার্থ কাজ করেছি।তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,এটা পুলিশের কাজ ।
স্মারকলিপিতে গণিত বিভাগের প্রভাষক ইসমাইল হোসেন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটিতে থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে আইন লংঘনের অভিযোগ তোলা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী পরিবার/নিকটাত্মীয়ের কেউ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তিনি ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটিতে থাকতে পারবেন না।তবে তিনি এ বিষয়ে বলেন,আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না এবং কোনো সিনিয়র শিক্ষক এমনকি সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমন্বয়কের পক্ষ থেকেও তাঁকে জানানো হয়নি ।এই শিক্ষক আরো বলেন,আমি সদ্য নিয়োগ পাওয়া ।
তাই এ বিষয়ে আমি জানি না।তাঁর বোনের মেধা তালিকায় ২য় হওয়া বিষয়ে বলেন,এখানে আমার কোনো হাত ছিল না।সে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ রকম সংবাদ প্রকাশে তিনি আশ্চর্যন্বিত ও মনে কষ্ট পেয়েছেন বলে জানান। তাঁর বোনের বিষয়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহের ব্যাপার নিয়ে জড়ানো মিথ্যা অভিযোগটির তীব্র নিন্দা জানান।। তিনি বলেন, আমি যদি এ রকম করেই থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হোক।গতকাল কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।তবে ঐ অনলাইন পত্রিকায় তাঁর জড়িয়ে না থাকা বিষয়টি তাঁর উদ্ধৃতি সহ উল্লেখ করা হয়।
এ দিকে কলা অনুষদের ডিন ড. নাজমুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক জালিয়াতির বিষয়ে জড়িত থাকার ব্যাপারে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ইউনিটের ওএমআর শীট বাসায় নিয়ে যাওয়া,ওএমআর শীট ছাড়াই মেধা তালিকায় কিছু প্রার্থীর নাম,ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে মেধা তালিকায় নাম প্রর্ভতি অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে তাঁর সাথে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে সংযোগ পেলেও পরক্ষণে বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক প্রার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে মেধা তালিকায় নাম পাওয়ার বিষয়ে গত ১৯ মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং তিনি এটাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে মনে করেন।
অভিযোগ পাওয়া যায়, ওই অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার ১৮টি উত্তরপত্র (ওএমআর) মূল্যায়ন না করেই গত ১৩ মে ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং তালিকা অনুযায়ী ১৮ ও ১৯ মে তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার তাদের বিভাগ বন্টন করে সে অনুযায়ী ১ম মেধা তালিকার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে,১৮ ও ১৯ মে ভাইভা গ্রহণ করা হয়।এর আগে ৫ ও মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং ফলাফল প্রকাশ করা হয় ১৩ মে।
মন্তব্য চালু নেই