ভোলার বোরহানউদ্দিনে ভূমি দস্যুদের থাবায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারে নেমে এসেছে ভয়াবহ ভোগান্তি

ভোলার বোরহানউদ্দিনে ভূমি দস্যুদের থাবায় প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ভয়াবহ ভোগান্তি নেমে এসেছে। এছাড়া পৌরসভার সরকারি মার্কেটের জমি তাদের বলেও দাবি করেছে। জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ওই পরিবারগুলোর প্রায় ৪ শত একর জমি উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের মৃত হাচন আলীর ছেলে আলমগীর, তার ভাই জাকির হোসেন (কুয়েত জাকির), তাদের স্বজন সহ বোরহানউদ্দিন এলাকার কাশেম পঞ্চায়েত, তৈয়ব পন্ডিত ও তাদের সহযোগীরা ১৯৫৫, ১৯৫৬, ১৯৫৭ সালের নিলাম (ডিক্রী) বলে মালিকানা দাবি করছেন। ওই জমি গুলো যারা ভোগ দখলে আছে তারা কোন বাড়ি কিংবা স্থাপনা তৈরী করতে এলেই ভূমিদস্যু চক্র বাঁধা সৃষ্টি করে।

প্রায় ১০ বছর আগে ওই চক্র জমি দখল করতে গেলে উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারের কালা চাঁদ দাস ষ্ট্রোক করে মারা যান। এর ধারাবাহিক ভাবে প্রতিদিনই নিরিহ ভূমি মালিকরা আর্থিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে গত দুই দিন ধরে স্থানীয় ভূমি অফিসে ভূক্তভোগীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১ টি আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে তারা জনপ্রতিনিধি সহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভূক্তভোগী সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহাজাদা তালুকদার, কুতুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ, কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল দে, বোরহানউদ্দিন পৌরসভার প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন পঞ্চায়েত জানান, ভূমিদস্যু চক্র ওই জমি তাদের পূর্ব পরুষ মৃত হাচন আলী ও মৃত আফসের আলীর নামে বরিশাল মুন্সেফ আদালতের ডাকা নিলাম ক্রয় দেখান ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে। কিন্তু তার প্রায় ৬ বছর আগে রভালায় মুন্সেফ আদালত কাজ শুরু করে। নিলাম হলে রভালার আদালতের মাধ্যমে হবার কথা।

গত বছরের ২১ অক্টোবর ভোলার যুগ্ম রজলা জজ ৬০/১৯৫৬, ৬১/৫৬, ১৯/৫০ নং মামলায় টাকার নিলামে র (ডিক্রী) ইনডেক্স রেজিষ্টার বরিশাল থেকে আদালতে তলব করেন। সেখানে ডিক্রীর (নিলাম) কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা আরো জানান,প্রকৃত পক্ষে ওই ভূমিদস্যুরা নিজেরাই ক্যামিকেল দিয়ে লেখা উঠিয়ে নিজেরাই কাগজ তৈরী করেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ভূমিদস্যুর মূল হোতা ৩ বিয়ে করা আলমগীর দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে ভোলা সদরের ভূমি অফিসের পাশে থাকেন। ওই বাসায় কেউ গেলে সেটাকে ভূমি অফিস বলে ভুল করতে পারে। নকল কাগজ বানানোর সব ওই বাসায় আছে। এদিকে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার একমাত্র মার্কেটটির জমিও ওই গংদের বলে তারা দাবি করেছে।

পৌর সচিব আব্দুর রব জানান, ১ নাম্বার খাস খতিয়ানভূক্ত ওই জমি হাটের যা পৌরসভার ব্যাবস্থাপনায় আছে। আলমগীর গং কিভাবে মালিকানা দাবি করে তা বোধগম্য নয়। সাবেক পৌর মেয়র সাইদুর রহমান মিলন জানান, এক দশক আগে নিরিহ মানুষদের বাঁচাতে ভূয়া ডিক্রীধারীদের সামাজিক ভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন তারা নিরব থাকার পর ইদানিং সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বর্তমান মেয়র মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, জনস্বার্থে আইনি ও সামাজিক ভাবে তাদের দমন করা হবে। এদিকে মালিকানার ১১৪/২০০০ নাম্বার মামলা কোর্টে নিষ্পত্তি হওয়ার পর সম্প্রতি ডিক্রীধারীদের দখলে আছে এমন ভূয়া রিপোর্ট দেয়ায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ আছে কুতুবা ইউনিয়ন সহকারী তহশীলদার মুশফিকুর রহমান মোটা অংকের টাকার মিনিময়ে এ অপকর্ম করেছেন।

এছাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের ২-১ জন অসাধু কর্মকর্তাও বিনিময় সূত্রে ভূমি দস্যুদের সহায়তা করেন বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কোন বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে জানান, চাকুরি বিধিতে অফিসিয়াল বিষয়ে মন্তব্য করা যায়না।



মন্তব্য চালু নেই