বয়:সন্ধিকালে মেয়েদের শিক্ষা

বয়:সন্ধি বা টিনএজ বয়সে ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এই সময়ে বয়:সন্ধিকাল সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকায় অনেকে লজ্জায় নিজের মধ্যে চেপে যান বিষয়গুলো। এছাড়া এই সময়টাতে তারা বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা পরবর্তীতে তার জীবনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই সময়টাতে তারা যেদিক দিয়ে দেখে পথ চলেছে সেদিকেই হাটা ধরে। কিন্তু তারা ভাবে না পথটি ভালো নাকি খারাপ। তাই এই সময়টাতে তাদেরকে যথাযথভাবে গাইড করতে হবে পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, শিক্ষক সবাইকে। আসুন বয়:সন্ধিকালে মেয়েদের কয়েকটি দিক নির্দেশনা সম্পর্কে আলোকপাত করি।

অটুট থাকুক ভবিষ্যতের লক্ষ্য:

একজন ভালো সন্তান, ভালো স্ত্রী, ভালো মা হবার পাশাপাশি একজন ভালো ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা দিন তাকে। সে জীবনে কী করতে চায় বা কী হতে চায়, তার জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত এ ব্যাপারে তাকে দিক নির্দেশনা দিন। তাকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করুন।

পরিবার সবার আগে:

টিনএজের মেয়েরা ঘরের চেয়ে বাইরের লোকেদের কথা অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মেয়েকে এটা অনুভব করান যে, একটা মানুষের জন্য পরিবার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত একজন নারীই থাকেন পরিবারের শেকড় হিসেবে। মেয়েকে বোঝান, তারও একসময় নিজের পরিবার হবে, সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখা, তাদের গুরুত্ব দেয়া – এ সবকিছু মেয়েকে শিক্ষা দেয়া একজন মায়ের অন্যতম দায়িত্ব।

কিছু ব্যাপার গোপন থাক:

মেয়েকে নিজের ব্যাপারে কিছু গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলুন। বিশেষ অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত লোকদের কাছে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কল্যাণে খুব সহজেই মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। আপনার টিনএজ কন্যাটি যেন কোনো সাইবার ক্রাইমের শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাকে বলুন, নিজের ফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা বা এমন কোনো তথ্য কাউকে না জানাতে যাতে সে বিপদে পড়ে। তার ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য যতটা সম্ভব কম লোকজনকে জানাতে বলুন।

সবার জীবনে প্রেম আসে:

সবার জীবনেই প্রেম আসে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনি যখন একজন টিনএজ কন্যার মা, তখন আপনাকে এটা মেনে নিতেই হবে যে, আপনার মেয়েরও কাউকে ভালো লাগতে পারে।টিনএজ বয়সটাই হলো অল্পতেই ভালো লাগার বয়স! বিশেষ করে এ সময়টাতেই মেয়েদের আগ্রহ জন্মায় ছেলেদের প্রতি। এই আগ্রহ জন্ম দেয় বিশেষ একজনকে ভালো লাগার। কিন্তু ভালোলাগা আর ভালোবাসা যে এক নয়, তা বোঝার মতো বোধবুদ্ধি থাকে না এ সময়। তাই অনেক মেয়েই ভালোলাগাকে ভুল করে ভেবে বসে ভালোবাসা!

মেয়েকে এটাই বোঝান যে, ভালোলাগা এবং ভালোবাসা এক নয়। আর যদি প্রেম হয়েও যায়, তাকে চাপ প্রয়োগ না করে এটাই বোঝান যে, প্রেম জীবনের সবকিছু নয়, বরং জীবনের একটা অংশ মাত্র! তাই এর পেছনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সময় ব্যয় করা মানে নিজেরই ক্ষতি করা। সাথে এটাও বুঝিয়ে বলুন যে, নির্দিষ্ট সময় এলে সে তার জন্য একজন ভালো সঙ্গী পাবেই।

শারীরিক সম্পর্কের নেতিবাচক দিক:

মায়েরা মেয়ের সাথে এ বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন। অথচ এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ সাধারণত টিনএজ বয়সের মেয়েরাই চিন্তাভাবনা না করে আবেগের বশে প্রেমিকের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। মেয়েকে অসময়ে বা অপরিণত বয়সে শারীরিক সম্পর্কের কুফল সম্পর্কে জানান, তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করুন। এর ফলে হওয়া শারীরিক সমস্যা, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, অকাল গর্ভপাত ইত্যাদির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত করুন।

পুরুষদের প্রলোভনের ফাঁদ:

টিনএজ একটি কমনীয় বয়স, নমনীয় সময়। মেয়েরা এ সময় থাকে সরল, এ সময়েই মেয়েরা তাদের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হয়। ফলে কেউ তাদের রূপের প্রশংসা করলে সহজেই অভিভূত হয়। অনেক পুরুষই এর ফায়দা লোটে। সরলতার সুযোগ নেয়। আপনার মেয়েকে পুরুষদের প্রলোভনের ফাঁদ সম্পর্কে অবহিত করুন। তাকে সতর্ক করুন পুরুষদের কুটিল মানসিকতা সম্পর্কে।



মন্তব্য চালু নেই