এ কী করলেন নেইমার !

নেইমার যা করেছেন, তাতে পুরো বিশ্বই অবাক। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। মহা গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে পেতে পারতেন হ্যাটট্রিক। টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম এক ম্যাচে তিন গোল। শুধু তা-ই নয়, এই গোলটা তাঁকে এবারের আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় বসিয়ে দিত। নেইমার কী করলেন? নিজে গোল না করে বল ঠেলে দিলেন এমন একজনকে, যাঁর সঙ্গেই তাঁর সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ‘লড়াই’!

কাল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে বায়ার্নের মাঠে একদম শেষ মুহূর্তে হ্যাটট্রিকের দারুণ সেই সুযোগটা পেয়েছিলেন নেইমার। প্রথমার্ধেই ২ গোল করেছিলেন নেইমার। ১৫ আর ২৯ মিনিটে। কিন্তু বাম কোনা থেকে গোলে শট নেওয়ার ভালো সুযোগ থাকলেও নেইমার আড়াআড়ি পাস ঠেলে দেন লিওনেল মেসিকে। মেসিও অবশ্য গোলটা করতে পারেননি। কিন্তু এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে তুলে দিয়েছে আলোড়ন।

ফরোয়ার্ডদের রক্তের মধ্যে মিশে থাকা অসম্ভব গোলক্ষুধা তাদের স্বার্থপর করে তোলে। সহজাত প্রতিক্রিয়ায় বেশির ভাগ ফরোয়ার্ড প্রথমে নিজেই গোল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু লুইস এনরিকে অনেক আগেই দাবি করেছেন, তাঁর আক্রমণভাগের তিন ফরোয়ার্ড আসলে তিনজন নয়। তিনজন মিলে একজনই, একটা দল। এ কারণে বার্সা কোচ পারতপক্ষে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো একজন ফরোয়ার্ডের প্রশংসা করেন না। এমনকি সেমির প্রথম লেগে অবিশ্বাস্য খেলার পরও মেসিকে নিয়ে খুব একটা প্রশংসাবাক্য খরচা করেননি এনরিকে।

এবং তাঁর সেই দর্শন ধীরে ধীরে আশ্চর্য ফল দিতে শুরু করেছে। প্রথম দিকে সুয়ারেজ বা নেইমার দুজনকে বেশি করে নিজের লাভটার দিকে বেশি মনোযোগী মনে হয়েছিল। কিন্তু ‘তিনজন মিলে একজন’ হয়ে ওঠা অবশেষে সম্ভব হয়েছে। গতকালই যেমন নেইমারের প্রথম দুটো গোল করিয়েছেন সুয়ারেজ। ‘লিভারপুলের​ সুয়ারেজ’ হলে অবশ্যই প্রথমে চেষ্টা করতেন নিজেই শট নেওয়ার। মাত্রই কদিন আগে লিগে করদোবার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েও মেসি পেনাল্টি শটটি নেননি। তুলে দিয়েছিলেন ওই ম্যাচে তখনো গোল না করা নেইমারকে। বায়ার্নের বিপক্ষে প্রথম লেগে নেইমারের গোলের পর মেসির উল্লাস, দুজনের জড়াজড়ি-গড়াগড়ি উদ্‌যাপন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ‘চিরবৈরিতা’কে নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

আর কাল নেইমার যা করলেন, তাতে বিস্ময় তো থাকছেই, পুরো বিশ্ব প্রশংসার বৃষ্টিতেও ভেজাচ্ছে। না, শুধু নেইমারকে নয়। তিনজনকেই। তাঁরা তিনজনই যখন নিজেদের আলাদা করে ভাবছেন না, আলাদা করে তাঁদের প্রশংসা করাটাও তো অন্যায়!এই মৌসুমে এই ত্রিমুর্তি করেছেন ১১৪ গোল। ফাইল ছবিঅবশ্য হ্যাটট্রিকটা না হলেও এরই মধ্যে বেশ কিছু অর্জন নেইমারের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে। প্রথম মৌসুমে ৪১ ম্যাচে মাত্র ১৫ গোল করে​ প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন, মেসির ছায়ায় থেকে খেলা তাঁর পক্ষে কি সম্ভব? এই মৌসুমে ৪৭ ম্যাচে ৩৭ গোল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, হ্যাঁ সম্ভব। বার্সার হয়ে এরই মধ্যে ৫০ গোলের মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন। সেটিও মাত্র ৮৭ ম্যাচে। শুধু তা-ই নয়। কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগেই গোল করেছিলেন। নেইমার গোল পেলেন সেমিফাইনালের দুই লেগেও। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এই কীর্তি আছে আর মাত্র একজনের। এর সঙ্গে যদি ফাইনালেও গোল করতে পারেন, হয়ে যাবে ইতিহাস!

ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে এই ত্রিমুর্তিকেও। এই মৌসুমে এরই মধ্যে তিনজন ১১৪ গোল করেছেন। আর ৫টি গোল হলেই ভেঙে যাবে ২০১১-১২ মৌসুমে গড়া রোনালদো-বেনজেমা-হিগুয়েইনের গড়া ১১৮ গোলের রেকর্ড!

করদোবা ম্যাচের পর নেইমার বলেছিলেন, ‘এই ঘটনার প্রতিটা মুহূর্ত আমি মনে রাখব। ও হ্যাটট্রিক করতে পারত। কিন্তু তা না করে ও পেনাল্টিটা আ​মাকে তুলে দিল। আমি স্রেফ ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওর কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখছি, মাঠে, মাঠের বাইরে।’

নেইমারের ধীরে ধীরে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হয়ে ওঠার পেছনে মেসির অবদান অনেক। ভাবুন তো, আর্জেন্টিনার একজন ধীরে ধীরে ধার বাড়াচ্ছেন ব্রাজিলের একজনের—ভাবা যায়!
বন্ধুত্ব মানে এটাই। শর্তহীন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা!



মন্তব্য চালু নেই