আপাতত দল নিয়েই বিএনপির ভাবনা
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দু’দফা আন্দোলনে বিফল বিএনপি ঘুরে দাড়াতে এবার দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনে দৃষ্টি দিচ্ছে। আর দলের সর্বস্তরের পুনর্গঠন শেষে আয়োজন করা হবে ষষ্ঠ কাউন্সিল।
তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি দলের পুনর্গঠনে এবার নতুন নেতৃত্ব সামনে আনারও চিন্তাভাবনা করছে। সার্বিক বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে শিগগিরই ডাকা হচ্ছে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক। দলের শীর্ষ স্তরের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই তথ্য।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দলের তৃনমুল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সব স্তর থেকে দল পুনর্গঠনের জোরালো দাবি তোলা হচ্ছে। ভেতরে বাইরে থেকে নতুন কাউন্সিল নিয়েও দাবি তুলছেন তারা। তাঁদের মতে, দলের বর্তমান কাঠামো দিয়ে আন্দোলন সম্ভব নয়। সিটি নির্বাচনে মহানগরী কমিটির সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো বলে অনেকের মূল্যায়ন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পরবর্তী ধাপের আন্দোলন আগামী নভেম্বরের আগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই এর আগে দল গোছানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ঢাকা মহানগর কমিটি নয়, বিএনপির নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও পুনর্গঠনের আওতায় আনার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দল ঢেলে সাজানো দরকার বলে সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। তাই ঢাকার বাইরে একাধিক স্থানে খালেদা জিয়ার জনসভার পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার পরামর্শ দিচ্ছেন দলটির নেতারা। আর কাউন্সিলের মাধ্যমে দল ঢেলে সাজানোর কথাও বলা হচ্ছে। তাছাড়া দলে একজন পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সূূত্র মতে, দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জেষ্ঠ্য নেতারা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরপরই পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়া হবে। সে লক্ষ্যে আইনী প্রক্রিয়া জোরদার করা হচ্ছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ার কারণে ফখরুল সহসা মুক্তি না পেলে জেষ্ঠ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দল গোছানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জানা গেছে, দুই দফা আন্দোলনে ব্যর্থতার কথা চিন্তা করে দল পুনর্গঠনে খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সুযোগ সন্ধানী এবং নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। প্রাধান্য দেয়া হবে তরুণদেরও। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার এক মতবিনিময় সভায় পুনর্গঠিত কমিটিতে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের ইঙ্গিত দেন।
গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন এবং সাম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলও প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে পারেনি। নির্বাচনে নেতাকর্মী ও প্রশাসনের সহায়তায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটে প্রভাব বিস্তার করেছেন ধরে নেওয়া হলেও সিটি নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা চলছে। মহানগরীর অনেক নেতা ‘গা বাঁচিয়ে’ চলছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে দলীয় এজেন্টরা কেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেননি এ প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে উঠছে। বলা হচ্ছে, প্রায় ৯০ শতাংশ এজেন্ট ভোটকেন্দ্রেই যাননি।
এদিকে ঢাকার পাশপাশি দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কমিটিগুলোও। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সবটিতেই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জেলা কমিটি পুনর্গঠন শুরু হয়েছিল। ফের আন্দোলনে নামার কথা চিন্তা করে তখন ১২টি জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। এখন আবারো দাবি উঠেছে, জেলা কমিটিগুলো ঢেলে সাজানোর যোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠনের। একই সাথে অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তা কাটাতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার দাবি উঠেছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাংগঠনিক গতি ফিরিয়ে আনতে আগামী কয়েক মাস নানামুখী উদ্যোগ নেবে দলটি। বাধ্য না হলে আপাতত কঠোর কোনো কর্মসূচি নয়। রমজান থেকে শুরু করে কোরবানি পর্যন্ত সংগঠন গোছানো হবে। এরপর অক্টোবরে হতে পারে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। কাউন্সিল হলে স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢাকাসহ সারা দেশে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করে দলকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা হবে।’
সংগঠনকে গতিশীল করতে বিএনপি সাংগঠনিক পুনর্গঠনে হাত দেবে জানিয়ে দলটির অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন দলের নিয়মিত কাজের অংশ। দলের সব পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হবে। তৃনমুল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা না হলে কেউ ঝুঁকি নিয়ে দলের জন্য কাজ করবে না। অতীতে এর প্রমাণ মিলেছে। তাই দল পুনর্গঠনে এবার এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
মন্তব্য চালু নেই