মা হাঁসের সন্তান-প্রেম
বন্যপশু বিশেষজ্ঞ টিম হোয়াইট আচমকাই তার দালানের বাইরে থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখলেন। কী জন্য ধোয়া উড়ছে তা দেখতে তৎক্ষণাৎ ছুটে যান টিম ও তার মেয়ে। দালানের বাইরের যে অংশে কিছুটা জংলা অঞ্চল সেখান থেকেই ধোঁয়া উড়ছে দেখে বাবা-মেয়ে ছুটতে লাগলেন কী হয়েছে দেখার জন্য। জংলায় ঢোকার পর তারা দেখতে পান একটি হাঁসের ডিম পাড়ার বাসায় আগুন জ্বলছে এবং তার মাঝে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আছে মা হাঁস।
বাবা-মেয়ে যতদ্রুত সম্ভব বালতিতে পানি এনে আগুন নেভান এবং অগ্নিদগ্ধ হাঁসটিকে স্থানীয় একটি পশু হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতাল থেকে সরবরাহকৃত তথ্য মতে, আগামী গ্রীষ্মের আগে হাঁসটির পাখা উড়বার উপযোগী হবে না। হাঁসটির শরীরের কিছু অংশ মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হওয়ায় পাখিটির পক্ষে উড়ে বেড়ানো সম্ভব হবে না দীর্ঘদিন। কানাডার স্যানডাস্কি শহরের টিম হোয়াইট পশুবিজ্ঞানী হওয়ায় তার মনে প্রশ্ন জাগে, পাখিটি উড়তে পারা সত্ত্বেও তবে কেন আগুন লাগলেও পাখিটি উড়ে যায়নি।
আগুন লেগে যাওয়া স্থানটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, পাখির যে বাসাটিতে আগুন লেগেছিল সেখানে ছয়টি হাঁসের ডিম ছিল, যেগুলোতে তা দিচ্ছিল ওই আহত মা হাঁস। অনাগত সন্তানদের কথা ভেবে আগুন লাগা সত্ত্বেও মা হাঁসটি তাই তার বাসা থেকে চলে যাননি। কোনো মানুষের ফেলে দেয়া সিগারেটের আগুন থেকে এই ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে বলে অগ্নি নির্বাপক সংস্থা থেকে জানানো হয়।
পশু হাসপাতাল দ্য ডোডো’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ওটা ছোটো একটি অগ্নিকাণ্ড ছিল। কিন্তু সেই আগুনের উপরই বসে ছিল মা হাঁসটি। সে নিজেকে পুড়তে দিয়েছে এবং ডিমগুলোর উপর বসে ছিল যাতে ডিমগুলো আগুন থেকে রক্ষা পায়। তবে আমাদের বিশ্বাস মা হাঁসটি ডিমগুলোকে বাচানোর জন্য তার পাখায় আগুন লাগিয়ে নেয়।’ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে ভেবেছিল যে হাঁসটি আর কোনোদিন উড়তে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে আরও পরীক্ষা করে দেয়া যায় যে, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তার পাখায় স্বাভাবিক জোর আনা সম্ভব।
এদিকে কানাডা পুলিশ আগুন লাগানোর জন্য দায়ী ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। কারণ কানাডার নিয়মানুযায়ী কোনো হাঁসকে হত্যা করা বা আঘাত করা আইনগত ভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
মা হাঁসেরা স্বাভাবিকভাবেই খুব ভালো মা। এবং অনেক সময় এমনও হয় যে তাদের সন্তান না হওয়ায় তারা অন্য হাঁসের সন্তানকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করে। পশু হাসপাতালের ডাক্তারদের মতে, মা হাঁসটি শুধু যে তার সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন তাই নয়, আগুনটি যদি আরও কিছুক্ষন থাকতো তাহলে পার্শ্ববর্তী দালানেও আগুন ধরে যেতে পারতো। আর তাহলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।
মন্তব্য চালু নেই