আল্লাহর কসম! এ খোঁড়া পা নিয়ে আমি খোঁড়াতে খোঁড়াতে জান্নাতে যেতে চাই
বদর যুদ্ধে হযরত ‘আমরের (রা) যোগদানের ব্যপারে মতভেদ আছে। তবে সঠিক মত এই যে, তিনি বদরে যোগদান করেন নি। কোন কারণে তিনি পায়ে আঘাত পান এবং খোঁড়া হয়ে যান। এ অবস্থাতেও তিনি যুদ্ধে যেতে চাইলে ছেলেরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি নিয়ে তাঁকে তাঁর সংকল্প থেকে বিরত রাখেন। তাঁরা বোঝেন যে এ অবস্থায় তাঁর উপর জিহাদ ফরজ নয়।
ঊহুদের রণ-দামামা বেজে উঠল।‘আমর ছেলেদের ডেকে বললেন, তোমরা আমাকে বদরে যেতে দাওনি। এবার আমি তোমাদের কোন নিষেধ মানবনা। এ যুদ্ধে আমি যাবই। ইবন ইসহাক ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ
‘আমর ইবন আল-জামূহ ছিলেন মারাত্মক ধরণের খোঁড়া। সিংহের মত তাঁর চার ছেলে ছিল। সকল কাজ ও ঘটনায় তাঁরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে থাকতেন। উহুদের দিন তাঁরা তাঁদের পিতাকে যুদ্ধে গমন থেকে বিরত রাখতে চাইলেন।
তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে মা’জুর (অক্ষম) করেছেন। আপনার যুদ্ধে যাবার দরকার নেই। ‘আমর (রা) খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বললেনঃ আমার ছেলেরা আমাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করছে। আল্লাহর কসম! এ খোঁড়া পা নিয়ে আমি খোঁড়াতে খোঁড়াতে জান্নাতে যেতে চাই।
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তো আপনাকে মা’জুর করেছেন। জিহাদ আপনার উপর ফরজ নয়। একথার পরও ‘আমরকে তাঁর সিদ্ধান্তে অটল দেখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ছেলেদের বললেনঃ তোমরা আর তাঁকে বাধা দিও না। আল্লাহ পাক হয়তো তাঁকে শাহাদাত দান করবেন।
ইমাম সুহাইলি বলেনঃ অন্যরা আরো বলেছেন, ‘আমর বের হওয়ার সময় অন্তরে সবটুকু বিনীত ভাব ঢেলে দিয়ে দু’আ করেনঃ
‘ইলাহী! তুমি আমাকে মদীনায় ফিরিয়ে এনো না।’ আল্লাহ পাকের দরবারে তাঁর এ আকুল আবেদন কবুল হয়ে যায়। তিনি শহীদ হন।
উহুদের যুদ্ধ শুরু হল। ‘আমরও প্রাণপণ করে যুদ্ধ করছেন। প্রচন্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। তখন তিনি ছেলে খাল্লাদকে সাথে নিয়ে পৌত্তলিক বাহিনীর ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালান। দারুণ সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে পিতা-পুত্র একসাথে শাহাদাত বরণ করেন। হযরত ‘আমরের (রা) তীব্র বাসনা ও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হলো। তিনি খোঁড়াতে খোঁড়াতে জান্নাতে পৌঁছে গেলেন। এটা হিজরী ৩য়/খ্রীঃ ৬২৫ সনের ঘটনা।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে হযরত ‘আমরের (রা) প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। লাশটি দেখে চিনতে পেরে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। বললেনঃ ‘আল্লাহ তাঁর কোন কোন বান্দার কসম পূরণ করেন। ‘আমর তাদেরই একজন। আমি তাঁকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জান্নাতে হাঁটতে দেখতে পাচ্ছি।’
উৎসঃ আসহাবে রাসূলের জীবনকথা। ৪র্থ খন্ড
মন্তব্য চালু নেই