এ জ্বালা সইতে পারছি না, ক্ষমা করে দিও

‘তোমাদের গত দু’বছর ধরে বলে আসছি। কিন্তু তোমরা ওকে (বখাটে শাওন) থামাতে পারলে না। আমি আর এ জ্বালাতন সহ্য করতে পারছি না। আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।’

একথাগুলো শনিবার রাতে মাকে উদ্দেশ করে মাদারীপুর সদরের চরমুগরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আকতারের (১৪) শেষ কথা।

এসব বলার কিছুক্ষণ পরেই সবার অজান্তে কীটনাশক পান করে সাথী। টের পেয়ে গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত ৮টায় মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামে। বখাটে শাওন এ পুটিয়া গ্রামেরই মোতালেব হাওলাদারের ছেলে।

বখাটের পরিবার থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই আত্মহত্যা করেছে সাথী।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রমতে, বছর দুয়েক আগে থেকেই স্কুলে যাওয়া-আসার পথে সাথীকে উত্ত্যক্ত করতো শাওন। এনিয়ে শাওনের পারিবারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা হয়।এলাকাবাসীও চেষ্টা করেছে তাকে ফেরাতে। কিন্তু শাওন দিন দিন ভয়ঙ্কর বেপরোয়া হয়ে ওঠে।ঘটনার দিন বিকেলে স্কুল থেকে ফেরার পথে আবারো সাথীর পথরোধ করে শাওন। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাথী।

সাথীর মা জানান, রাতে সাথী আমাকে বলে, ‘গত দু’বছর ধরে তোমাদের বলেছি। কিন্তু তোমরা ওকে (শাওনকে) ফেরাতে পারনি। আমি আর এ জ্বালাতন সহ্য করতে পারছি না, মা। আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ এরপর রাতে সে বিষপান করে।

সাথীর বাবা চানমিয়া সিপাই বলেন, ‘শাওন আমার মেয়েকে স্কুলে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে তার পারিবারের কাছেও কয়েক বার নালিশ করেছি। কিন্তু কোনো বিচার পাইনি। তাই মেয়ে আমার লাঞ্ছনা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এখন মামলা করতেও তারা বাধা দিচ্ছে।’

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ‘রোববার দুপুরে মেয়েটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।’

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ জানান, মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শাওনের পারিবারের দাবি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সাথী আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল জানান, এ বিষয় নিয়ে কেউ অভিযোগ দিলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই