উখিয়ার ৩ যুবক দালালদের খপ্পরে পড়ে থাইল্যান্ড কারাগারে

কক্সবাজারের উখিয়ার উপকুলীয় এলাকার কিছু প্রভাবশালী মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চোরাই পথ দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে অবশেষে ৩ যুবকের ঠাঁই হল থাইল্যান্ডের কারাগারে। গত ৩ মাস ধরে আটক হয়ে কারাগারে মানবেতর দিন যাপন করছে ঐ ৩ যুবক। এভাবে অসংখ্য লোক উখিয়া-টেকনাফের উপকূল দিয়ে মানব পাচাকারীদের ফাঁদে পড়ে নিখোঁজ ও কারাগারে বন্দি জীবন যাপন করলেও অনেক ঘটনা অজানা রয়ে গিয়েছিল। পরিবারের টানাপোড়নের কারণে অনেকেই দালালদের বিরুদ্ধে থানা বা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেনি। যে কারণে ধামা-চাপা পড়ে গেছে মানব পাচারের অসংখ্য লৌমহর্ষক ঘটনা।

সম্প্রতি একের পর এক থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে মালয়েশিয়া যাত্রীদের গণকবরের সন্ধান উদ্ঘাটন ও বাংলাদেশী যুবকের কংকালসার জীবন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ নিরহ লোকজনের মধ্যে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৩ শীর্ষ মানবপাচারকারী নিহত হয়। এরা হচ্ছে শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া এলাকার সোলতান আহমদের ছেলে ধলু হোসেন (৫৫), সাবরাং কাটাবনিয়া এলাকার আব্দুল মাজেদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩০) ও হারিয়াখালী এলাকার কবির আহমদের ছেলে জাফর আলম (৩০)। এ সময় টেকনাফ থানার ওসি সহ ৪ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দেশীয় তৈরী ২টি এলজি, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি ও ১০ রাউন্ড কার্তুজের খোসা উদ্ধার করেছে। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান খন্দকার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে শীর্ষ মানব পাচারকারী ধলু হোসেন দলবল নিয়ে অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মানব পাচারের উদ্দেশ্যে টেকনাফ বিচ হ্যাচারী পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান করার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় মানব পাচারকারীরা পুলিশের উপর গুলিবর্ষন করলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে বেশ কয়েক রাউন্ড পাল্টা গুলি ছুড়ে। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ ৩ মানব পাচারকারীকে উদ্ধার করে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

মানব পাচার প্রতিরোধে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অর্গানাইজেশন রিলিপ ইন্টারন্যাশনালের অর্থায়নে পরিচালিত হেলপ্ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক মো: আবুল কাশেম জানান, মানব পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে গিয়ে পথিমধ্যে থাইল্যান্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে থাই মোরদহনা কারাগারে গত তিন মাস ধরে মানবেতর দিনযাপন করছে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পিনজিরকুল গ্রামের ফরিদ আলমের ছেলে রুবেল (২২), একই গ্রামের ফজল আহমদের ছেলে মো: রফিক (২১) ও লিয়াকত আলীর ছেলে শামীম উদ্দিন (২২)। পরিবারের অভিযোগ, তারা তিন জন গত ৩ মাস আগে ইনানী বীচে বেড়াতে গিয়ে মানব পাচারকারীর খপ্পড়ে পড়ে যায়। এ সময় পাচারকারীরা বিনা পয়সায় মালয়েশিয়া পৌছে দেওয়ার কথা বলে এক প্রকার জোর করে ফিশিং বোটে তুলে দেয়। তাদের আর হদিছ পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি থাইল্যান্ড কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসা চোয়াংখালীর এক যুবকের তথ্যমতে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ৩ যুবক থাই কারাগারে বন্দী জীবনযাপন করছে।

এ ঘটনা নিয়ে হেলপ এর নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম বাদী হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই ৩ যুবকের পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য উখিয়া থানা পুলিশের নিকট নির্দেশ প্রদান করেন। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ তদন্ত করছে।



মন্তব্য চালু নেই