কীভাবে একজন মানুষ সুখী হতে পারে ?

আসলে কী একজন মানুষকে সুখ দিতে পারে? এটা কি টাকা-পয়সা? এটা কি সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে? এটা কি অনেক খ্যাতি? এটা আসলে কী?
একটি বাস্তব ব্যাপার যা প্রতিটি পরিণত মানুষই উপলব্ধি করে যে, যে যা চায় তা তাকে সুখ দেয়। কিন্তু এটাও একটি বাস্তব ব্যাপার যা সেই পরিণত প্রতিটি মানুষই উপলব্ধি করে যে, সে যা চেয়েছে তা পাওয়ার পর ক্ষণিক সময়ের জন্য ঠিকই সুখী হয়েছে, কিন্তু ক্ষণিক সময় পর তার মধ্যে সেই সুখানুভূতি আর থাকে না। যার জন্য সে এতো আরাধনা করেছে, তা পাওয়া সত্যেও তার মধ্যে সেই জিনিসটার প্রতিটি আগ্রহ আর বেশী সময় থাকেনা। সে ভাবতে শুরু করে এটার আর কি গুরুত্ব, এটাতো একটি সাধারণ জিনিস। তবে যা চায় তা যে পাওয়া উচিত নয়, তা নয়। যা চায় তা পাওয়া উচিত। এতে যেটা হয়, তার মধ্যে অতৃপ্তি থাকে না। তবে চাওয়া জিনিস পেলেই যে সে চিরসুখী মানে স্থায়ীভাবে সুখী হবে এটা কখোনই সত্য নয়। তখন সে আরো একটি নতুন জিনিসের প্রতি আগ্রহী হয়। কিন্তু নতুন জিনিসটি পাওয়ার পরও আবার একটি ঘটনা ঘটবে।

তাহলে কি জগতে কোন সুখ বলতে কিছু নেই? এই পাওয়া আর আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং নতুন করে চাওয়ার নামই কি জীবন?
আসলে তা নয়। সুখ আছে। কিন্তু কি সেটা? সেটা হলো যা আছে তা নিয়েই সুখী থাকা। আল্লাহ-র কাছে বলা যে, হ্যাঁ, আমার কিছু আছে। যদি কেউ এটা বলতে পারে তবেই সে সুখী হবে। এটা যদি বলতে না পারে তবে হাজার কোটি টাকাও তাকে সুখী দিতে পারবে না। অনেক খ্যাতিও তাকে সুখ দিতে পারবে না। এর ফলেই কোটি কোটি থাকা সত্যেও, অনেক খ্যাতিমান হওয়া সত্যেও প্রচন্ড কষ্টে অনেক খ্যাতিমান ও অনেক কোটিপতি আত্মহত্যা করে। এটা হচ্ছে দু-এটি ঘটনা, যা প্রকাশ পায়। কিন্তু আর সব মানুষ নিজেদের কষ্টটা কোনমতে চেপে রাখে। আত্ম-হত্যা করতে চেয়েও করে না, কোন মতে নিজেকে সামলায়। এতো ধন-সম্পদ ও খ্যাতিও তাদের সুখ দিতে পারে না। হ্যাঁ তারা সুখ পাবে, যখন বলবে, আমার যা আছে তা নিয়েই আমি খুশি। হ্যাঁ আমার কিছু আছে। এই কথাটা যদি একজন গরীবও বলে, তবুও সে সুখী হবে।

এতক্ষণ যা বললাম তা হলো বাস্তবতা যে, বস্তু কখনো সুখ দিতে পারে না। যত চাই, কোন সুখ নাই, যেন আরো পাই। এখন বিশ্লেষণে আসি কেন বস্তু সুখ দিতে পারে না এবং কেন কৃতজ্ঞতা সুখ দিতে পারে।

আসলে আল্লাহ-র দুনিয়াতে প্রতিটি বস্তুর মধ্যে সুখ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আর আরো একটি সত্য হলো, প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু আছে। তাই যদি যার যা আছে তার মধ্যে সুখ খুঁজে, তবে সেই বস্তু থেকে সে সুখ পেয়ে যাবে। অন্য একটি বাস্তবতা হলো যে, প্রতিটি মানুষের সুখ ভোগের ক্ষমতা সীমিত। একটি পর্যায়ের পর যতই সুখের উপকরণ থাক সে, সুখ ভোগ করতে পারবে না। এই যে সুযোগ থাকা আর না পারা এটাও একটা অসুখের কারণ। আরো একটি কারণ, ভুল বোঝা। সব মানুষ ভাবে আমার এতো আছে, নিশ্চয়ই আমার জীবন সুখে ভরা। কিন্তু আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। আরো কারণ হলো, সব জিনিসই সাধারণ। যখনই চাই তখন বুঝি না যে, এটার মাহাত্ম্য কি? কিন্তু যখন পাই তখন দেখি এটাও আর দশটা জিনিসের মত সাধারণ। এটাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলার অন্যতম কারণ।

সুখে থাকার একমাত্র উপায় হলো, যা আছে তার মধ্যেই সুখ খোঁজা। কারণ আল্লাহ-র দুনিয়াতে যা আছে তার সব কিছুই কম বেশী সুখ দিতে সক্ষম। আর মানুষের সুখ ভোগের ক্ষমতা সীমিত। যদি যা আছে তার মাঝেই সুখ খুঁজে তবে, ধনী গরীব যেই হোক, তার সেই পাওয়া জিনিসটা তার সুখের সীমা পূর্ণ করে দিবে। সীমা পূর্ণ হলেই তো হলো। আর দরকার কি? তাই যার যা আছে সেই নিয়েই যদি কেউ আল্লাহ-র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে সেই জিনিসটাই তার সুখ-আনন্দের কারণ হবে।

তাইতো যারা ধার্মিক, তারা যেমনই থাকে তার সুখী থাকে, কারণ তারা যা আছে তাতেই আল্লাহ-র প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। আর যারা অধার্মিক তাদের সারা দুনিয়া দিয়ে দিলেও সুখী হবে না। কারণ তারা যা আছে তাতে সুখ খোঁজে না, ফলে তার কাছের জিনিস আর তাকে সুখ দিতে পারে না। কেউ কিছু না নিলে কি তাকে দেয়া যায়? সে তার যা আছে তাতে সুখ খুঁজে না, ফলে তার যা আছে তা তাকে সুখ দিতেও পারে না। সে খুঁজে নতুন জিনিসে। ফলে যতক্ষণ সে নতুন জিনিস না পায় ততক্ষণ সুখ পায় না। পাওয়া পর সুখ পায়, কিন্তু দেখে যে, যা পেলাম সেটাও একটি সাধারণ জিনিসই, আমর যা আছে সেগুলো মত। ফলে সে সেটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, আর সেটাতেও বেশীক্ষণ সুখ পায় না। তাই আমাদের যা আছে আমরা যদি সেটার যে সুখ দেওয়া ক্ষমতা সেটা ভোগ করি, তবে আমাদের সুখ ভোগের এই সীমিত ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে এবং আমরা সুখী হবো। তাই ইসলাম ধর্মের ধার্মিক ব্যক্তিরা সব সময় খুশী। কারণ তারা আল্লাহ যা দেন, তাতেই প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যদি কিছু চায় তবে প্রভু কাছে প্রার্থনা করে। প্রভু দিলে, তাতে আবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাদের যা পায় তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কারণে তারা সুখী। এটা আল্লাহ এই দুনিয়াতে নিয়ম করে দিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই