ফিরে দেখাঃ অতীতের আলোচিত সংবাদ

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ

অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরে অবস্থানের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের বর্ষপূর্তি ৫ মে । হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ শেষে লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষ শাপলা চত্বরে অবস্থান নিলে গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে যৌথ অভিযান চালিয়ে সকালের আলো ফোটার আগেই পুরো এলাকা জনশূন্য করে ফেলে। সেই অভিযানে অসংখ্য লোক হতাহত হওয়ার দাবি করে হেফাজত। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে অভিযানে কেউ মারা যায়নি বলে দাবি করা হয়। পর দিন ৬ মে সকালেও নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হন।

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ1সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, কুরআন ও মহানবী সা:-এর অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে আইন পাস, মহানবী সা:-এর এবং অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের গ্রেফতার ও শাস্তি, নারী ও শিক্ষানীতি সংশোধনসহ ১৩ দফা দাবির ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই হেফাজতে ইসলাম সর্বশেষ গত বছর ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল। সেই কর্মসূচি পালনকালে রাতে হেফাজত নেতাকর্মীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। মূলত সেটিই ছিল হেফাজতের সর্বশেষ বড় কোনো কর্মসূচি। ঘটনায় বহু লোক হতাহত হয় বলে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি দাবি করে। পরে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ৬১ জন নিহত হওয়ার কথা প্রকাশ করলে সংগঠনটির সম্পাদক আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়। অবশ্য পরে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তাদের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনে ৫ মে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩৯ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়। হেফাজত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে এলেও এখন পর্যন্ত দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ও ঘটনা তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি।

হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ2২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হয়। পরে ওই মঞ্চে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে রাজিব নামে একজন সন্ত্রাসী আক্রমণে খুন হলে ব্লগে ইসলাম ও মহানবীকে কটূক্তি করে তার লেখার বিষয়টি প্রকাশিত হয়। একইভাবে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পর্কিত আরো কয়েকজন ব্লগারের ইসলাম বিদ্বেষী লেখার বিষয়েও খবর প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে বেফাকের সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম ৯ মার্চ হাটহাজারীতে উলামা সম্মেলন করে ১৩ দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ শেষে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ থেকেই ৫ মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। নানা বাধা প্রতিবন্ধকতার পরও হেফাজত ঢাকা অবরোধ করে। অবরোধ শেষে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার জন্য সমবেত হতে থাকে। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ4একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকায় সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের সাথে হেফাজত কর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। অন্য দিকে শাপলা চত্বরে সমাবেশ চলতে থাকে। সন্ধ্যার আগেই বেশ কয়েকজন হেফাজত কর্মী মারা যান। সন্ধ্যায় হেফাজত শাপলা চত্বরে অবস্থানের ঘোষণা দিলে উত্তেজনা আরো ছড়িয়ে পড়ে। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে কমান্ডো স্টাইলে শাপলা চত্বরে অভিযান চালায়। ভোর হওয়ার আগেই শাপলা চত্বর জনশূন্য হয়ে পড়ে। রাস্তায় পড়ে থাকে ধ্বংস স্তূপ। ঘটনার সাথে সাথেই রাতের আঁধারে নিহতদের লাশ ও আহতদের সরিয়ে ফেলার গুজব উঠে। ঘটনায় অন্তত তিন হাজার হেফাজত কর্মী নিহত হন বলে গুজব উঠে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও ব্যাপক হতাহতের আভাস দেয়া হয়। পত্রপত্রিকায় আহত, নিহত ও ধ্বংস স্তূপের ছবিও প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনা ও অভিযানের বিভিন্ন ভিডিও কিপ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর দিন সকালে নারায়ণগঞ্জ-২ হাটহাজারীসহ হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ3কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষে আরো বেশ কয়েকজন লোক নিহত হন। এরপর সরকার হেফাজতের প্রতি কঠোর নীতি অবলম্বন করতে থাকে। ৬ মে সকালে হেফাজতের আমির আল্লামা শফীকে বিমানযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনয়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়। সারা দেশে হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করা হয়। মূলত এরপর থেকে হেফাজত এখন পর্যন্ত মাঠের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। হেফাজতের অন্যতম নেতা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসসহ কয়েকজন নেতা এখনো কারাবন্দী রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই