সরকারের উপর বাড়তে পারে আন্তর্জাতিক চাপ

সরকারের উপর বিদেশি চাপ বাড়তে পারে। আর এই চাপ সামলানো সরকারের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর কুটনীতিকরা সরকারের উপর সিটি নির্বাচনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে ফের সংকট নিরসনের জন্য সংলাপ করারও তাগিদ দিচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে তার বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে সংকট নিরসনের বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়ার কথাটি নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেন। বান কি মুন ছাড়াও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমান বাংলাদেশ সফরকালে সরকারের জন্য সতর্ক বার্তা দিয়ে গেছেন।

আগামী দিনে তারা যত দ্রুত সম্ভব সংলাপ চান ও সংকটের নিরসন চান সেটাও বলে গেছেন। সেই জন্য সরকারের করণীয় সম্পর্কেও তিনি বলে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান এখন কি সেটা জানানোর পাশাপাশি আগামী দিনে করণীয় সম্পর্কেও আভাস দিয়েছেন। সেই আভাসে অনেকটাই চিন্তিত সরকারের সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের একজন নীতি নির্ধারক মন্ত্রীর দাবি বিদেশি চাপে কোন লাভ হবে না। বিদেশিদেরকে আমরাও বলবো বিএনপি কি করেছে। তাদের কথাগুলো শুনলে তারা এখন বিএনপির প্রতি যে বিশ্বাস রয়েছে সেটা থাকবে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে থাকবে না বলেই এসেছিল। পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। আন্দোলনের সুযোগ খুঁজতে তারা ইচ্ছে করেই পরিস্থিতির অবনতি করার জন্যই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। তারা জানতো যে নির্বাচনে থাকলে পরাজিত হবে। পরাজয় জেনেই মাঠ ত্যাগ করে। এখন আবার বিদেশিদের কাছে লবিং করছেন। খবর আমাদের সময়.কম।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে খবর রয়েছে বিএনপি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিদেশিদের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেটা পেলে তারা আবারো আন্দোলন শুরু করতে পারেন। এখন সব দেশের সমর্থন না পাওয়ার কারণে সেটা পারছেন না। তারা তারানকোর বাংলাদেশ সফরও চাইছেন। কিন্তু সরকার এই মুহুর্তে তা চাইছে না। তারানকোকে সরকার কোন আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসাবে আপাতত ওয়েলকাম করতে চাইছে না। এই কারণে তিনি বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল চাইছে, সব দেশ মিলে সরকারের উপর একটি চাপ তৈরি করার পরও তারানাকোকে বাংলাদেশে পাঠাতে। তারানকো গতবার আলোচনা শেষ না করেই ফিরে গিয়েছিলেন। প্রত্যাশা করেছিলেন সমাধান হবে। এবার তিনি আসলে সমাধান যাতে হয় সেই চেষ্টাই করবেন এই জন্য সময়ও নিবেন।

সরকারের নীতি নির্ধারক মহলের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ওয়েন্ডি শ্যারমান কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে গেছেন। কেবল তাই নয় তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন তা চিন্তার বিষয়।

একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েন্ডি শ্যারমানের বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। এই সময়ে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু কথা বলেছেন। আর ওই সব কথার মধ্যে সতর্কবার্তাও রয়েছে। প্রথমে শ্যারম্যান চেয়েছিলেন ওই সব কথাগুলো সরাসরি অংশীদারিত্বের সংলাপ করার সময়ে বলবেন। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দায়িত্বশীল একজন এই ব্যাপারে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছু না বলার অনুরোধ করা হয়। আর তার অনুরোধেই শ্যারম্যান ওই কথাগুলো বলেননি।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, শ্যারমান যে কথা বলে গেছেন তাতে আগামী দিনে তারা সরকারের উপর আরো চাপ বাড়াবে। এই জন্য যত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটাও তারা নিবে। এর প্রেক্ষিতে তাদের চাওয়া ও সরকারের করণীয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন সেটা যদি তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বলতেন তাহলে এর ফল ভাল হতো না। বরং নতুন করে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো। কিন্তু সেটা কোন ভাবেই সরকার হতে দিবে না। এই কারণেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ওই ব্যক্তি তাকে কথাগুলো না বলার জন্য অনুরোধ করেন। শ্যারমানও আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ পর্যন্ত বলেননি।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এখন সরকারের উপর বেশি চাপ তৈরি করছে। তারা দ্রুত সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান চায়। এর পাশাপাশি তারা ২০১৯ এর আগেই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। সিটি নির্বাচনের পর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি না যাওয়ার বিষয়টির কারণ এখন তাদের কাছে স্পষ্ট। বিএনপি এতোদিন ধরে তাদেরকে বলে আসছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা গেলে সরকার তাদেরকে পরাজিত করতো বলেই যায়নি। এবার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপিই তিনটি মেয়র পদে জয়ী হতো ও বেশি সংখ্যক কাউন্সিলর পদে জয় পেত। আর এটা সরকার আগে আঁচ করতে পেয়েই নিজেরা কারচুপি করে ভোটে জয়ী হয়। বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট ওই সূত্র আরো জানায়, বিএনপি নতুন করে আন্দোলনের সুযোগ খুঁজছে। সেটা পেলেই বিএনপিও নতুন করে আন্দোলনের করবে। তারা কূটনীতিকদের উপর ভরসা করেই পথ চলছে। আর এই পথ চলায় তারা কোন ঘটনা ঘটলে দেশের সব কথা বাইরের বিভিন্ন দেশের কাছে পাঠায়। আগে মৌখিকভাবে বললেও এখন তারা লিখিত দেওয়ার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ভিডিও চিত্রও পাঠায়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চিত্র নিয়ে তারা ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে। এই ব্যাপারে কাজ করছেন লন্ডনে তারেক রহমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। তারা এক ঘন্টার একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করছেন। সূত্র জানায়, তারা দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত ভিডিও চিত্র , সংবাদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যারা বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক এমন কয়েকজনের কাজ থেকেও সংগ্রহ করেছে। জামায়াতও নিজস্ব সোর্সে কিছু ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করেছে। আর ওই সব চিত্র বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশ, সংস্থার কাছে পাঠানো হয়। পাশাপাশি সরকারের ব্যাপারেও কিছু নেতিবাচক কথা তুলে ধরা হয়। ওই সব ভিডিও চিত্র ও সংবাদ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশে তার হাইকমিশন ও দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট বিভাগের রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। সেখানেও সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সব কথা রয়েছে। বিএনপি দাবি করে এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। অনিয়ম করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার বিবরণ দিয়ে তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এই ব্যাপারে কাজ করছেন। বিএনপির পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ড. ওসমান ফারুক কাজ করছেন। লন্ডনে কাজ করছেন তারেক রহমান নিজে। তার তরফ থেকে বেশ কয়েকজন নেতাও কাজ করছেন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন দেশেও বিএনপি জামায়াতের নেতারা কাজ করছেন। জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কাজ করছেন।

এদিকে বিদেশে বিএনপি ও জামায়াতের যেই সব নেতারা কাজ করছেন তাদেরকে গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে সার্বক্ষনিক গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে গোয়েন্দা নজরদারীতে রাখার কথা স্বীকারও করেছেন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য। সম্প্রতি তারেক রহমান আল-জাজিরায় একটি লেখা লিখেন। মন্ত্রী পরিষদের সদস্য শাহজাহান খান এর কঠোর সমলোচনা করেন। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ যখন চুরি করে আর ধরা পড়ে, তখন বাঁচার জন্য অনেক কথাই বলে, যার কোনো ভিত্তি নেই, যা সত্য নয়। সম্প্রতি আল-জাজিরা অনলাইনে লন্ডনে অবস্থানকারী এই বিএনপি নেতার একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, সে এখন দুর্নীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আর যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, যা খুশি তাই করছে। বর্তমান তারেক রহমান, খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নাই। বর্তমানে তাদের সেই আন্তর্জতিক অবস্থান নেই। তারেক রহমান তো লন্ডনে গোয়েন্দাদের নজরদারিতে আছে। নৌমন্ত্রী আরো দাবি করেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তারেক রহমানের লেখার কারণে বিদেশিরা বিভ্রান্ত হবে না।

উল্লেখ, আন্তর্জাতিক মহল সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপি, বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, কোন কোন ভোট কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং বিএনপি নির্বাচন প্রত্যাহার করার পরও রহস্যজনক বেশি ভোট পাওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছে। সম্প্রতি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শ্যারমানও নির্বাচনের সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার সমলোচনা করে এর তদন্ত চান। তাদের এই সব বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না সরকার। সরকার কোন আলোচনা চাইছে না বিএনপির সঙ্গে।



মন্তব্য চালু নেই