দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের আগুনে নোয়াখালীর ইব্রাহিম নিহত

দক্ষিণ আফ্রিকার পিটুরিয়া শহরের সোসাংগবি এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সে দেশের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী দুই বাংলাদেশী সহোদর। এদের মধ্যে মো: ইব্র্রাহিম (৪২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার সকাল ১০টায় মারা যায়। অপর আহত সহোদর ইসমাইল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা দুজন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রামপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের পুত্র।

নিহতের বন্দু মোজাম্মেল জানান, সন্ত্রাসীরা তাদের হাত-পা বেঁধে বেদম মারধর করে, টাকা পয়সা ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে তারা তাদের দোকানটিতে আগুনে ধরিয়ে দেয়। এসময় ইব্রাহিম ও ইসমাইল অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় বাংলাদেশীরা এগিয়ে আসে এবং আহতাবস্থায় ঐ দুই সহোদরকে হারাংকুয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। এদের মধ্যে ইব্রাহিমের শরীরের ৬০ শতাংশ এবং ইসমাইলের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে যায়।

নিহত ইব্রাহিমের পিতা নুরুল ইসলাম জানান, তার বড় ছেলে ইব্রাহিম গত ২০১১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায়। সংসারের অভাব অনটন গুছিয়ে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানকার পিটুরিয়া শহরের সোসাংগবি এলাকায় নিজেই মুদি দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। গত ৩০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় তারা দোকান বন্ধ করে ভিতরে ঘুমাচ্ছিল।

শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টায় মো: ইব্রাহিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যায়। আহত ইসমাইল এখন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গেলো দু মাস আগে তার সাথে ছেলে ইব্রাহিমের শেষ কথা হয়। কিছু দিনের মধ্যেই তার বাড়ি আসার কথা ছিল। সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দেখতে এবং নতুন করে ঘর তৈরীর ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল বাবাকে। ছোট দুই পুত্র ১৩ বছর বয়সি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া নোমান ও ১ম শ্রেনী পড়–য়া ৭ বছর বয়সি সোহান কে নতুন জামা-কাপড় আর মজার মজার খেলনা কিনে দেয়ার কথা জানিয়েছিল ইব্রাহিম। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

এখানো বুঝে উঠতে পারেনি তাদের ছেড়ে চলে গেছে তাদের বাবা না ফেরার দেশে। চার ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে ইব্রাহিম ছিল চতুর্থ। দু’মাস আগে ইব্রাহিমের মা আশারাফি খাতুন মারা যায়। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ছোট ভাই ইসমাইল সাউথ আফ্রিকায় আসে এবং ভাইয়ের দোকানে কাজ করেন। ইব্রাহিমের মৃত্যুর সংবাদে তার পরিবারে ও গ্রামবাসীদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া। ইব্রাহিমের মৃত্যুর সংবাদে তার স্ত্রী নিপা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের দাবি নিহত ইব্রাহিমের মরদেহ যেন দেশে নিয়ে আসা হয়।



মন্তব্য চালু নেই