পিন্টুর চিকিৎসা করতে না দেওয়ার অভিযোগ চিকিৎসকের

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইচ উদ্দিন শনিবার সকালে পিন্টুকে কারাগারে চিকিৎসা দিতে যান। কিন্তু তাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

ডা. রইচ উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘কারাগারে আনার কয়েক দিন পরেই বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ২৬ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আবারও তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে হাসপাতাল পরিচালককে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, বিএনপি নেতা পিন্টুর শারীরিক অবস্থান অবনতি হয়েছে। তবে তাকে হাসপাতালে নয়, কারা হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ কারণে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে কারাগারে পাঠানোর অনুরোধ করা গেল।’

‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুকে চিকিৎসা দিতে যাই। কিন্তু সেখানে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান আমাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেননি’ যুক্ত করেন ডা. রইচ উদ্দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সিনিয়র জেল সুপারকে বলেছিলাম, আপনারা পিন্টুর জন্য চিকিৎসক চাওয়ায় পরিচালক তাকে পাঠিয়েছেন। তবে কেন আপনারা তার সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দিচ্ছেন না?’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমি জেল সুপারকে বলেছি, আল্লাহ না করুক, বিএনপি নেতা পিন্টুর যদি কোনো দুর্ঘটনা হয়, তবে এ জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন। এরপরও তিনি আমাকের পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। বরং চা খাইয়ে বিদায় করে দেন।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মন্টু বলেন, ‘শনিবার সকালে তিনি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর সঙ্গে দেখা করেছেন। বেশকিছু সময়ও কাটিয়েছেন। আলাপকালে পিন্টু জানায়, অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও রাজশাহী কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে সময় মতো ওষুধ দিচ্ছে না।’

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান পিন্টুর অসুস্থতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু নানাবিধ অসুখে ভুগছিলেন। হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিক, ব্লাড প্রেসারসহ চোখ ও বুকের সমস্যা ছিল তার। রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিনি কারাগারের মধ্যে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কারাগারে নিয়োজিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম এস সায়েম তাকে চিকিৎসা দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবস্থার অবণতি হওয়ায় দ্রুত তাকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখান থেকে বিএনপি নেতা পিন্টুকে হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

‘পিন্টুর সঙ্গে রামেক চিকিৎসককে দেখা করতে দেওয়া হয়নি— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ২৩ এপ্রিল একটি চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বিএনপি নেতা পিন্টুকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ২৫ এপ্রিল কারাগারে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৫ এপ্রিল কোনো চিকিৎসক পাঠায়নি। ২৬ এপ্রিল পিন্টুকে রামেক হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দিয়ে ফের কারাগারে নেওয়া হয়। যেহেতু তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল এ জন্য শনিবার (২ মে) চিকিৎসক রইচ উদ্দিনকে বিএনপি নেতা পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’

সময়মতো ওষুধ না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা পিন্টুর চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের দেওয়া চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী চলছিল। এতে কোনো অবহেলা হয়নি।’

এদিকে, পিন্টুর মৃত্যুতে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের চরম নির্যাতন ও অবহেলার কারণে পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তার পিন্টুকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রইচ উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা হয় পিন্টুকে। তাৎক্ষণিক ইসিজি করা হলে তার হৃদস্পন্দন পাওয়া যায়নি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

তিনি দাবি করেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার অন্তত ২০-৩০ মিনিট আগেই পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে।’

পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা অভিযোগ করেন, ‘পিন্টুর চিকিৎসায় অবহেলা করে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে নেওয়া হয়।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, পিন্টুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা দেওয়া। আমরা আদালতের ওই নির্দেশনার কাগজ আইজি প্রিজনের কাছে দিলেও তাকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়।’

তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘পিন্টুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ’ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কেউ কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। পিন্টু হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। তাকে কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পিন্টুকে ২০ এপ্রিল রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।

নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বিরুদ্ধে পিলখানা হত্যা মামলাসহ দুর্নীতি ও ভাংচুরের সাতটি মামলা রয়েছে।

পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে ১৫২ জনকে ফাঁসি, পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই