১৫ দিনের ফলোআপ, বৈঠক দেড় মাস পর

নূর হোসেনকে দেশে ফেরত আনার সুপারিশ

ভারতে আটক নারায়ণগঞ্জের ৭ হত্যাকাণ্ডের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফেরত আনার সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় জড়িত কাউকে কোনো ধরনের ছাড় না দেয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছে বৈঠকে।

বুধবার সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে কমিটির সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘সম্প্রতি কলকাতায় নূর হোসেন ধরা পড়ায় কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রকে।’

এ সময় আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্দিবিনিময় চুক্তির আইনী প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে কীভাবে তাকে দ্রুত দেশে ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে।

নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ভারতে মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতে নূর হোসেন যে অপরাধ করেছে তা গৌণ। বাংলাদেশে তার অপরাধ অনেক মারাত্মক। এ কারণে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হলে তাকে দ্রুত ফেরত আনা সম্ভব হবে।’

আবু সাঈদ আল মাহমুদ জানান, বৈঠকে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিমান বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে শ্রমিক শ্রেণী ও অন্যান্য বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত মানুষ যাতে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে কমিটি। বিশেষ করে বিমান বন্দরে হয়রানী পর্যবেক্ষণে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারীরর পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে এর আগে গত ৬ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বৈঠকের কার্যপত্র থেকে দেখা গেছে, ছায়া মন্ত্রণালয় খ্যাত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হয়নি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৫ দিন পর ফলোআপ বৈঠক করবেন। কিন্তু ওই বৈঠকের এক মাস ১২ দিন পর বৈঠক হলো স্থায়ী কমিটির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ঘন ঘন বৈঠক করা সম্ভব নয়।’

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছাড়া বৈঠক ফলপ্রসু হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের সময় ও উপস্থিতি নিশ্চিত করেই বৈঠক করা হয়।’

এদিকে মাদকের বিস্তার রোধে কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে ভারত ও মিয়ানমারকে সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেনসিডিল ও ইয়াবা কারখানা বন্ধের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধম্যে দেশ দুটিকে চিঠি পাঠানোর কথা থাকলে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি দেড়মাসে। তবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারত ও মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠিত মাদকদ্রব্যের কারখানাগুলো বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে জানায় মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ।

সংসদ সচিবালয় জানায়, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশ বিভাগ ও মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বর্তমান সরকারের ঘোষিত ৫০ হাজার জনবল সৃজনের অংশ হিসেবে সব জেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোতে পদ সৃজনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কমিটি সভাপতি টিপু মুন্সির সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কমিটি সদস্য মো. মোজাম্মেল হোসেন, শামসুল হক টুকু, ওমর ফারুক চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম ও বেগম কামরুন নাহার চৌধুরী অংশগ্রহণ করেন।



মন্তব্য চালু নেই