তারকাদের সংসার ভাঙার গল্প…

অনেকেই বলে তারকাদের সংসার তাসের ঘরের মতো। এই গড়লো তো এই ভেঙে গেল। অনেকেই আফসোস করে বলেন এমনটাতো হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু এমনটা কেন হয়? সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া হৃদয় খান ও সুজানার গল্প দিয়েই শুরু করি।

ভালোবেসেই বিয়ে করেন হৃদয় খান ও সুজানা। প্রায় চার বছরের সাধনায় হৃদয় খান পান সুজানাকে। পত্র-পত্রিকা আর টিভির সামনেও স্বগর্বে নিজের প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বলেছেন হৃদয় খান। গত বছরের ১ লা আগস্ট থেকে একই ছাদের নিচে বসবাস করা এই তারকা দম্পতির বিয়ে এক বছরও টিকলো না। কারণ আর কিছুই নয়, পারস্পরিক সমঝোতা না হওয়া। এমনটাই জানিয়েছেন সুজানা। এ প্রসঙ্গে সুজানা বলেন, ‘প্রথমদিকে ও আমাকে ভালোবাসলেও পরে বুঝেছি তার ভালোবাসা ছিল মুখে মুখে। ওর সঙ্গে আমার মানসিক মিল কখনোই হয় নি। সংসার করার জন্য ওর আরও ম্যাচিউরিটি দরকার। আর সবচেয়ে বড়কথা আমি ওর কাছ থেকে কখনোই সম্মান পাই নি। আমার কাজে স্বাধীনতা পাই নি। এ কারণেই ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।’

এ তো গেল সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া হৃদয় সুজানার গল্প। কিন্তু এর আগেও আরও অনেক বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। অহনা, তিন্নি-হিল্লোল, মিমো, মোনালিসা, অপি করিমসহ আরও অনেকের ঘর ভেঙেছে। সংসার ভালো যাচ্ছে না এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে আরও অনেকের।

এমন ঘটনা যে শুধু সম্প্রতি ঘটছে তা কিন্তু নয়। তারকাদের ঘর ভাঙার ইতিহাস ঘাটলে চলে যেতে হবে ষাটের দশকে। বরেণ্য পরিচালক জহির রায়হান ও সুমিতা দেবী থেকে শুরু করতে হবে। নায়িকা সুচন্দার সঙ্গে জহির রায়হানের প্রেম থাকার কারণেই ভেঙে গিয়েছিল সুমিতা দেবী ও জহির রায়হানের সংসার। এরপর তো সুচন্দাকে বিয়েই করে ফেললেন জহির রায়হান।

এমন ঘটনা ঘটেছিল নায়ক আলমগীরের ক্ষেত্রেও। রুনা লায়লার সঙ্গে আলমগীরের প্রেমের কারণেই ভেঙে গিয়েছিল আলমগীর ও খোশনুরের সংসার। আর নায়ক আলমগীর এখনো বাস করছেন রুনা লায়লাকে নিয়ে।

এ তালিকা থেকে বাদ গেলেন না প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূণ ফরিদী ও সুবর্ণা মুস্তাফাও। বদরুল আনাম সৌদের সঙ্গে সুবর্ণার প্রেমকেই অনেকে দেখছেন তাদের ঘর ভাঙার কারণ হিসেবে। কিন্তু সে সময়ে সুবর্ণা বলেছিলেন ফরিদীর ধুমপান ও মদ খাওয়ার কারণেই ফরিদীর সংসার ছেড়েছেন তিনি।

এ তালিকায় আরও আছেন শমী কায়সার-রিংগো, গাজী রাকায়েত-আফসানা মিমি, সোহেল আরমান-অভিনেত্রী তারিন, নকীব খান-সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ-মডেল অভিনেত্রী রুনা, ইলিয়াস কাঞ্চন-নায়িকা দিতি।

দিতি ও ইলিয়াস কাঞ্চনের ব্যাপারটা নাকি ভিন্ন ছিল। একদিকে মারা যান দিতির স্বামী নায়ক সোহেল চৌধুরী অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন কাঞ্চনের স্ত্রী। সন্তানদের কথা বিবেচনা করেই এ দুই তারকা আশ্রয় নিয়েছিলেন একই ছাদের নিচে। কিন্তু সেই সন্তানরাই নাকি তাদের এক পরিবার ভাবতে পারেন নি। তাই আবারো বিচ্ছেদের দহনে ভুগেছেন দিতি ইলিয়াস কাঞ্চন।

আরেকটি আলোচিত বিচ্ছেদ হচ্ছে ব্যান্ড তারকা জেমস এবং রথির সংসারের ভাঙন। এর পেছনে দোষ জেমসেরই ছিল বেশি। সে সময়ে জেমস মজে গিয়েছিলেন প্রবাসী এক তরুনীর প্রেমে। আর এতেই ভেঙে যায় তাদের সংসার। এ তালিকায় আরও আছেন রবি চৌধুরী ও ডলি সায়ন্তনীও। সে সময় শোনা গিয়েছিল রবি চৌধুরীর পরকিয়া প্রেমের কারণেই সংসার ভাঙে তাদের।

বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা ও জেনিও বিয়ে করেন ভালোবেসে। কিন্তু তাদের সংসারও বেশিদিন টিকে নি। কারণ আর কিছুই না অমিতাভ রেজার বেখেয়ালি জীবন যাপন। সেসময় জেনি বলেছিলেন, ‘অমিতাভের সঙ্গে আমার বোঝাপড়ার ঝামেলার কারণেই আমরা পৃথক হয়েছি।’

পারিবারিকভাবেই প্রবাসী ফাইয়াজকে বিয়ে করেছিলেন মোনালিসা। কিন্তু বেশিদিন টিকে নি তাদের সংসার। এ প্রসঙ্গে মোনালিসা বলেন, ‘ফাইয়াজ প্রথমদিকে ভাল থাকলেও পরে ওর বিরূপ আচরণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠি। ওর সঙ্গে আর বনিবনা হচ্ছিল না, তাই আলাদা থাকছি।’

মোনালিসার মতো জয়া আহসান আর ফয়সালের বিচ্ছেদও নাড়া দেয় তার ভক্তদের। প্রথম দিকে জয়া আহসান ফয়সালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও পরে অসুস্থ ফয়সালকে তালাক দিয়ে আলাদা হয়ে যান জয়া।

তারকাদের সংসার কেন ভাঙে? এ ব্যাপারে দিতি বলেন, ‘তারকারাও মানুষ। আর দশটা মানুষের মতো তারাও জীবন-যাপন করে। সাধারণ মানুষ আর তাদের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য করি না। তবে আমি মনে করি সাধারণ মানুষের চেয়ে তারকাদের সংসার কম ভাঙে। আর সংসার ভাঙার কারণ সাধারণ মানুষ আর তারকাদের একই হয়। তবে এর মধ্যে নায়িকাদের সংসারটা বেশি ভাঙে। কারণ নায়িকাদের জনপ্রিয়তা, পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকা এসব ভাল চোখে দেখে না স্বামীরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংসারে ভাঙন ঘটে।

তারকাদের সংসার ভাঙা প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী বলেন, ‘দেখেন সবাই কিন্তু এক নয়। তারকারা বেশি উচ্চাবিলাসি। সংসারে খুব একটা সময় দিতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্বামী অথবা স্ত্রীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে তাদের। আবার পুরুষ অভিনেতাদের পরকিয়ায় জড়িয়ে যাওয়ার ফলেও সংসারে ভাঙন ঘটে।’



মন্তব্য চালু নেই