ভূমিকম্প খোদার হুশিয়ারি

আমাদের দেশে প্রায় প্রতি বছরই কম-বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনও এমনভাবে ধেয়ে আসে যার ফলে গ্রামের পর গ্রাম তছনছ হয়ে যায়। এসব হচ্ছে যেমন- ভূমিকম্প, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো ইত্যাদি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের কোনো হাত নেই। এ ধরনের দুর্যোগ মহান খোদাতায়ালা যে কোনো দেশে এবং যে কোনো শহরে যে কোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারেন। এমন এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসলিলার দৃশ্য গত শনিবার আমরা দেখেছি। কেউ বলতে পারি না কোন সময় নেপালের মতো এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকারে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তাই এসব প্রাকৃতিক আজাব থেকে যেন খোদা আমাদের নিরাপদ রাখেন এ জন্য সব সময় দোয়া করা উচিত।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ খোদাতায়ালার পক্ষ থেকে সতর্ক সংকেত। খোদা সতর্ক করছেন যে, তোমরা সহজ-সরল পথ অবলম্বন কর। সমাজ ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যাভিচার, অন্যায় এবং খোদাকে ভুলে বসে তখনই খোদাতায়ালা তার পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা দেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন’ (সূরা আশশুরা : ৩০)। ‘এমন কোনো জনপদ নেই যা আমরা কেয়ামতের আগে ধ্বংস না করব, অথবা অতি কঠোর আজাব দিব’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৫৮)। আল্লাহতায়ালার হুশিয়ারি আজ আমরা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হতে দেখছি। যেসব আজাব আমরা প্রত্যক্ষ করছি, তা কেয়ামত তথা মহাধ্বংসের লক্ষণ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। আর এসব পবিত্র কোরআন তথা ইসলামের সত্যতার জ্বলন্ত নিদর্শন বহন করছে। খোদাতায়ালা পরম করুণাময়, তিনি কোনো জাতিকে সাবধান না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করেন না। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সতর্ক করার জন্য রসূল প্রেরণ না করে কখনও আজাব অবতীর্ণ করি না’ (বনি ইসরাইল : ১৫)। তারপর আবার উল্লেখ রয়েছে- ‘নূহের পর আমরা কত প্রজন্মকেই ধ্বংস করেছি। আর তোমার প্রভু প্রতিপালক তার বান্দাদের পাপের খবরাখবর রাখার ক্ষেত্রে এবং পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে যথেষ্ট’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১৭)।

পৃথিবীর এমন কোনো দেশ বা এমন কোনো জাতি নেই যার ওপর আজাব না এসেছে, সে যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন। সব ধরনের আজাবের প্রবল আক্রমণ মরণাহত মানবের ওপর বারবার এসে আঘাত হানছে। মানব প্রকৃতি বিকৃত হয়েছে। তার কারণে আল্লাহর রুদ্ররূপও মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা যেভাবে ঘোষণা দিয়েছেন যে, কোনো সতর্ককারী প্রেরণ না করে তিনি আজাব দেন না, পৃথিবীবাসী যেহেতু আজ আল্লাহর সতর্ককারীর আহ্বানকে ভুলে বসেছে তাই তিনি তার রুদ্ররূপের বহিঃপ্রকাশ দেখাচ্ছেন, মানুষ যেন সতর্ক হয় এবং খোদার শিক্ষানুযায়ী জীবন পরিচালনা করেন।

খোদার পক্ষ থেকে শান্তিস্বরূপ যখন কোনো আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না। যেভাবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোনো শান্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অভিভাবক বা কোনো সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না’ (সূরা আহজাব : ১৭)।

মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে কেন আজাব-গজব পাঠান সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। একটা বিষয় সবার বোঝা উচিত, কেন বারবার খোদাতায়ালা আজাবের কথা উল্লেখ করলেন? তিনি যেহেতু রহমানুর রাহিম, তিনি চান না যে, তার বান্দা কোনোভাবে কষ্টে পড়ে যাক। তাই তিনি বারবার সতর্ক করছেন, যেন তার বান্দারা সঠিক পথে পরিচালিত হয়। এরপরও যদি হুশ না হয় তাহলে কি আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শাস্তি দেবেন না? তাই সময় থাকতেই আমাদের দোষ-ত্রুটির জন্য পরিপূর্ণভাবে আল্লাহপাকের কাছে তওবা করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই