গাড়ির জ্বালানি পানি আর বায়ু

যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনয়নে গাড়ির ভূমিকা অনেক। আর এই গাড়ির গতির প্রশ্নে জ্বালানি তেলের কোনো বিকল্প নেই। যদিও বিগত কিছু বছর ধরে জ্বালানি তেলের বদলে মিথেন গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক দেশে। জ্বালানি তেল পুড়লে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এই কারণে অনেক দেশই এখন তেলের বিপরীতে প্রকৃতিবান্ধব গ্যাস ব্যবহার করছে গাড়িতে। তবে এই গ্যাসও প্রকৃতিজাত বা খণিজাত হওয়ার কারণে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে কমবেশি সবাই ভাবিত এবং এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য।

সম্প্রতি বিখ্যাত জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আউদি তাদের গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছে ‘ই-ডিজেল’। দেশটির দারেসদেন অঞ্চলে অবস্থিত আউদির কারখানায় এই ডিজেলের সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলেও জানা যায়। মূলত পানি আর বাতাস দিয়ে তৈরি এই জ্বালানি ব্যবহারে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হবে না, তেমনি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অধিক কার্যকর বলেও জানানো হয়।

গ্রীনহাউস গ্যাসের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ গ্যাস হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। ফসিল ফুয়েল এবং অন্যান্য জ্বালানি পোড়ানোর কারণে প্রতিনিয়তই বৈশ্বিক পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড জমা হচ্ছে। আর বায়ুতে থাকা এই কার্বন ডাই অক্সাইডকেই পুনরায় ব্যবহার করে জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব বলে দাবি করছে আউদির সহকারী প্রতিষ্ঠান সানফায়ার। এই প্রতিষ্ঠানটির দাবি অনুযায়ী ই-ডিজেলে থাকছে না সালফার এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান। শুধু তাই নয়, গাড়ির ইঞ্জিন খুব ভালো ভাবেই কাজ করবে এবং অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় কম পরিবেশ ক্ষতি করবে এই গ্যাস।

মোট তিনটি ধাপে এই ফুয়েল তৈরি করা হয়। প্রথমত, বিজ্ঞানীরা উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে বাষ্প উৎপাদন করেন এবং সেই বাষ্প থেকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় পৃথক করেন। মূলত ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই কাজটি করতে হয়। দ্বিতীয়ত, একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার মধ্যে হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে মেশানো হয় কথিত নীলাভ ক্রুড পাওয়ার জন্য। সর্বশেষ, প্রাপ্ত নীলাভ ক্রুড ফুয়েলকে ফসিল ফুয়েল রিফাইন করার মতো রিফাইন করে গ্যাসোলিন বানাতে হয়।

গত সপ্তাহে জার্মানির শিক্ষা এবং গবেষণা মন্ত্রী জোহানা ওয়াঙ্কা তার গাড়িতে উদ্ভাবিত ফুয়েলের প্রথম পাঁচ লিটার ব্যবহার করেন এবং গোটা প্রকল্পটি সফল হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। নতুন জ্বালানি ফুয়েল আবিষ্কারের ঘটনায়, উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান সানফায়ার মাসে তিন হাজার লিটার ফুয়েল উৎপাদনের জন্য ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাদের মতে, এই জ্বালানির মূল্য প্রতি লিটার এক দশমিক ২০ ইউরো করে রাখা যাবে।



মন্তব্য চালু নেই