সাকিব বলতেই পারেন, ‘সেই তুমি এলে…’
কাব্য কিংবা কোনো নাটুকেপনার চূড়ান্ত সংলাপ হলে বলতে পারতেন, ‘তুমি এলে! এলেই তবে, এত দেরিতে কেন এলে!’
দীর্ঘক্ষণ ফিল্ডিং করতে হলো বাংলাদেশ দলকে। ক্লান্তির একটা ছাপ তো পড়বেই। সাকিব আল হাসানকে কি একটু বেশি ক্লান্ত লাগল? অপেক্ষার প্রহরটা দীর্ঘ হলে ক্লান্তি আসাটাই স্বাভাবিক। প্রথম উইকেটের জন্য যে তাঁকে অপেক্ষা করতে হলো ২১২ বল!
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক আগেই। ১৪১ উইকেট নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনিই। অথচ খুলনা টেস্টে গত দুই দিনে সাকিবকে ঠিক সাকিবের মতো লাগল না।
ক্রিকেটে ভালো কিংবা বাজে দিন আসতেই পারে। যেহেতু তিনি দলের প্রধান ভরসা, প্রতিপক্ষের পরিকল্পনাই থাকে তাঁকে বোতলবন্দী করে রাখার। সেটার পুরো প্রভাব পড়ে দলের ওপর। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম গতকাল তাই সাংবদিকদের বললেন, ‘দলের সেরা বোলার যখন ভালো বল করে না, সেটা দলের অন্যদের জন্যও খারাপ হয়ে যায়।’
ভান্ডারে নিশ্চয় দুই-একটি তূণ নিয়েই টেস্টের এক নম্বর অলরাউন্ডার হননি। যখন নিয়মিত অস্ত্রে কাজ হয় না, প্রতিপক্ষকে হকচকিয়ে দেওয়া গোপন অস্ত্রটা তো বের করতেই হয়। কিন্তু খুলনায় কিছুতেই খুলছিল না সাকিবের হাত। উইকেটে স্পিন যে ধরছিল না, তাও নয়। নইলে তাইজুল ইসলাম ৬ উইকেট কিংবা পাকিস্তানি তিন স্পিনার বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট পেলেন কী করে?
ইনিংসে ওভার প্রতি ৩.৯৪ রান দিয়ে দলের নিয়মিত বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরচে সাকিব। ১০টি চারের পাশাপাশি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা তাঁর বলেই বেশি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তানের পরিকল্পনাই ছিল সাকিবকে উইকেট না দিয়ে উল্টো আক্রমণ করে চাপে ফেলা। সাকিবকে ছন্দে আসতে না দেওয়ার পরিকল্পনার কথা গতকালই জানিয়েছিলেন খুলনা টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ হাফিজ।
সে কৌশলে পাকিস্তান অনেকটাই সফল। সাকিবকে মাত্র একটি উইকেট দিয়েছে পাকিস্তান। ৮৩ রান করা আসাদ শফিকের উইকেটটা আজ যখন পেলেন, ততক্ষণ করে ফেলেছেন ৩৫.২ ওভার, ২১২ বল। ইনিংস শেষে সাকিবের বোলিং ফিগার দাঁড়িয়েছে ৩৭ ওভারে ১৪৬ রানে ১ উইকেট।
টেস্টে সাকিবের এমন দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর কতবার কেটেছে? সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না। টেস্টে প্রথম উইকেট পেতে সাকিবকে ২০০ বলের ওপর অপেক্ষা করতে হলো মোট পাঁচবার। সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২০১২ সালের নভেম্বরে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই খুলনায়। সেদিন ক্যারিবীয়দের প্রথম ইনিংসে ২৮৯ বল অপেক্ষার পর প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন সাকিব। এর পরও ইনিংসে মোট ৫২ ওভার বল করে পেয়েছিলেন ৪ উইকেট।
দীর্ঘ অপেক্ষার পরের পরিসংখ্যান পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ৪১.৫ অর্থাৎ ২৫১ বল করে ১২১ রান দিয়ে পাননি একটি উইকেটও। তবুও সে ইনিংসে ইকোনমি ছিল ২.৮৯। অন্তত আজকের চেয়েও ভালো।
২০১০ সালের মার্চে চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৩৪.২ ওভার, ২০৬ বল অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রথম উইকেটের জন্য। সে ইনিংসে মোট ৩৪.৩ ওভার বল করে ১৩৩ রানে পেয়েছিলেন ১ উইকেট। এ ছাড়া ২০১২ সালের নভেম্বরে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে ৩৪ ওভার অর্থাৎ ২০৪ বল করে উইকেটের দেখা পাননি সাকিব।
বোলিংয়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট প্রায় ৬৫। গড়ে প্রতি ১১ ওভারে একটি করে উইকেট তিনি পানই। এ কারণেই এতগুলো ওভার হাত ঘুরিয়েও সাকিব উইকেট না পেলে অবাক হতে হয়। তবে এসব নিছকই পরিসংখ্যান। কেননা, ব্যর্থতায় সাকিব কখনোই ভেঙে পড়েন না। একবার ব্যর্থ হলে সাফল্যের নেশায় সাকিব জেগে ওঠেন আরও তেজ নিয়ে। সাকিবের সে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
প্রথম উইকেটের জন্য সাকিবের অপেক্ষা
প্রতিপক্ষ ভেন্যু ইনিংস বলেরঅপেক্ষা সাল
ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুলনা ২ ২৮৯ ২০১২
পাকিস্তান চট্টগ্রাম ২ ২৫১ ২০১১
পাকিস্তান খুলনা ২ ২১২ ২০১৫
ইংল্যান্ড চট্টগ্রাম ১ ২০৬ ২০১০
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢাকা ১ ২০৪ ২০১২
মন্তব্য চালু নেই