নেতাদের দিয়ে ছাত্রীদের ধর্ষণের হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফা সুলতানা এই হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফার হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে এ ঘটনা ঘটে।

ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা ধর্ষণের হুমকি দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ ছাত্রী হলে গিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে আবারো হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ছাত্রীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভূক্তভোগী ছাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে ইবির ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখার সভাপতি এবং আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী আরিফা সুলতানা তার কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের (২০১২-১৩) শিক্কল্পনাকে হলের ৩১২ নং কক্ষের একটি সিটে ওঠানোর জন্য যায়। এ সময় আরিফা ওই রুমের আবাসিক ছাত্রী ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মাহফুজা খানম এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তমাসহ ওই রুমের ছাত্রীদেরকে একটি খাট ছেড়ে দিতে বলে।

মাহফুজা ও তমার কোর্স ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় তারা আরিফাকে কয়েকদিন পরে উঠানোর কথা বলেন। এনিয়ে সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা ওই রুমের মাহফুজা ও তমার আসবাব পত্রসহ বই খাতা ছুড়ে ফেলে দেয়। ছাত্রীরা আরিফাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে সে তাদের উপরও চড়াও হয়। এ সময় ছাত্রীরাও রুখে দাঁড়ালে ছাত্রলীগ নেত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

পরে হলের অন্যান্য ছাত্রীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছাত্রলীগ নেত্রী আরিফা অশ্লীল ভাষায় ছাত্রীদেরকে গালিগালাজ করেন।

একপর্যায়ে আরিফা ছাত্রলীগের নেতাদের দিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করানোর হুমকি দেন। উপস্থিত ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে আরিফা ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগকে ফোন করে হলে নিয়ে আসেন।

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ হল প্রভোস্টসহ প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই হলে প্রবেশ করে। এ সময় সোহাগের সঙ্গে আসা ১২-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী হলের গেটে অবস্থান নিয়ে হইহুল্লোড় করলে ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সোহাগ ছাত্রলীগের নেত্রীদের দিয়ে ওই ছাত্রীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে হল ছাড়া করার হুমকি দেন।

এ ঘটনার পর হল প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়েদেরকে অভয় দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

এ বিষয়ে ওই কক্ষের আবাসিক ছাত্রীরা মোবাইল ফোনে বলেন,‘বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে অপরিচিত কোনো মেয়েকে হলে ওঠানোর ব্যপারে প্রভোস্ট স্যারের নিষেধ আছে।

এছাড়া আমাদের সকলের পরীক্ষা চলছে এজন্য আমরা আরিফাকে দুই একদিন দেরি করার কথা বললে আরিফা ক্ষেপে যায়। এ সময় আমরা হল থেকে বের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে রেফ করানোসহ বিভিন্ন বাজে ভাষায় গালাগালি করে।

ইবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমাদুল হক সোহাগ বলেন, “বিকেল তিনটা থেকেই হলের ছাত্রলীগ নেত্রীরা আমাকে ফোন দিচ্ছিল। তাদের ফোন পেয়ে আমি সন্ধ্যায় হলে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে ছাত্রীদের রেপ করানোর হুমকি প্রসঙ্গে হল ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফা সুলতানা বলেন, “এরকম কোনো কথা আমি বলেছি বলে মনে পড়ছে না।”

এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। সোহাগতো কুষ্টিয়ায় থাকে। সে ক্যাম্পাসে এসেছে সেটাও আমি জানি না। যদি মেয়েদেরকে এভাবে হুমকি দেয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এবিষয়ে হল প্রভোস্ট ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, “প্রশাসন কর্তৃক বরাদ্দের বাইরে হলে কোনো ছাত্রীকে সিটে তোলার অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি। এরপরও যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুঃখজনক। হল প্রশাসনের সদস্যদের নিয়ে আমি বৈঠকে বসেছি। এ ব্যপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”



মন্তব্য চালু নেই