জিতলেও চেনা ছন্দ উধাও আর্জেন্টিনার
সেই লিওনেল মেসিই জেতালেন আর্জেন্টিনাকে। ৬৫ মিনিটের মাথায় বসনিয়ার খান দু’য়েক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অসামান্য গোল করলেন তিনি। ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে হাফ ছেড়ে বাঁচল সাবেল্লার আর্জেন্টিনা।
মারাকানায় রবিবার গভীর রাতের এই ম্যাচকে ডেভিড বনাম গোলিয়াথের যুদ্ধ ভাবছিলেন বহু ফুটবল বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তাঁদের রীতিমত চমকে দিল বসনিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের ছোট্ট এই দেশকে দেখে মনেই হল না প্রথম বার বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে তাঁরা। আর্জেন্টিনীয় ফরোয়ার্ড লাইনকে কার্যত বোতল-বন্দি করে রাখে স্পাহিক-বেসিক-কোলাসিনাক-দের ডিফেন্স। ডিফেন্স মজবুত করে মাঝে মাঝেই প্রতি আক্রমণে উঠে আর্জেন্টিনীয় রক্ষণ কাঁপিয়ে দিচ্ছিল তারা। সবাইকে চমকে দিয়ে সাবেল্লা এ দিন দল সাজান ৫-৩-২ ছকে। পাঁচ ডিফেন্ডার থাকায় প্রথম থেকেই মাঝমাঠের দখল চলে যায় বসনিয়ার হাতে। কোচ সাফেট লুসিক দল সাজিয়েছিলেন ৪-৫-১ ছকে। সামনে জেকো-কে একমাত্র স্ট্রাইকার রেখে পাঁচ মিডফিল্ডার দিয়ে মাঝমাঠ দখল করেন তিনি। জেকো-দের দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না স্বাধীনতার পর প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্ট খেলছে তারা। তিন মিনিটের মাথায় মেসির ফ্রি কিক কোলাসিনাকের গায়ে লেগে গোলে ঢুকতেই যেন আরও তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকে বসনিয়া। মুহূর্মুহূ আক্রমণে তখন মাঠে রীতিমত খুঁজতে হচ্ছিল মেসি-মারিয়াদের। এরই মধ্যে লুলিচের একটি হেড কোনওমতে বাঁচান রোমেরো।
দ্বিতীয়ার্ধে সাবেল্লার দু’টি পরিবর্তনে খোলস ছাড়তে থাকে আর্জেন্টিনা। ব্যর্থ রডরিগেজের জায়গায় ইগুয়াইন আসায় শক্তিশালী হয় আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ। মাঝমাঠ থেকে বাড়তে থাকে বলের সাপ্লাই। সচল হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডরা। তবুও বসনিয়ার গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। ৬৪ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কাক পেয়ে বাইরে মারেন মেসি। এই সময়ে বসনিয়ার সমর্থকরা কটাক্ষ করেন তাঁকে। এই বিদ্রূপেই জ্বলে ওঠেন ফুটবলের রাজপুত্র। এক মিনিটের মধ্যে প্রায় একক প্রচেষ্টায় দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অনবদ্য গোল করেন মেসি। দু’গোলে পিছিয়ে গিয়েও লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে জেকো-রা। বসনিয়া লাগাতার আক্রমণের ফসল ৮৫ মিনিটের মাথায়, গোল করেন ইবুসেভিচ। তবে এ ক্ষেত্রে ইবিসেভিচের থেকে অবদান বেশি সের্জিও রোমেরোর। বসনিয়ার মিডফিল্ডারের আপাত নিরীহ শট রোমেরোর পায়ের তলা দিয়ে গলে জালে জড়িয়ে যায়। তবে এই গোলে বদলায়নি ম্যাচের ভাগ্য। ২-১ গোলে প্রথম ম্যাচ জিতেই রিও ছাড়েন মেসিরা।
এ দিনের ম্যাচে ৫৯% বলের দখল নিয়েও বসনিয়ার উপর জাঁকিয়ে বসতে পারেনি মেসিরা। গোটা ম্যাচে ৫১৬টি পাস খেলা আর্জেন্টিনার খেলাতেও যেন তিকিতাকার ছোঁয়া। প্রচুর পাস খেললেও বসনিয়ার থেকে কর্নার ও গোলমুখি শট— দু’ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। গ্রুপের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা তুলনায় কমজোরি হলেও নক আউটের কঠিন যুদ্ধের আগে এই পরিসংখ্যান চিন্তায় রাখবে সাবেল্লাকে।
মন্তব্য চালু নেই