নিজের জীবনের মূল্যাবান সময় বিক্রি করছেন অর্থের বিনিময়ে

সময় বিক্রি করতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন চীনের চেন শিয়াও। যার যতটুকু সময় দরকার অর্থের বিনিময়ে চাইলেই চেন শিয়াওয়ের কাছ থেকে কেনা যাবে। পাঠক, একটু অবাক লাগলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। নিজের কাপড়ের দোকানটি বিভিন্ন কারণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দিশেহারা চেন নিজের জীবন বিসর্জন দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। আত্মহত্যা করতে যাওয়ার একেবারে শেষদিকে এসে নিজের জীবনকে শেষবারের মতো বাজিয়ে দেখতে চাইলেন তিনি। অনলাইনে নিজের জীবনের মূল্যবান সময় বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিলেন তিনি।

এই উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি অনলাইনে বার্তা লিখতে শুরু করলেন। সেই বার্তায় তিনি লেখেন, ‘ক্লান্ত, আমি সত্যিই অনেক ক্লান্ত। মাঝে মনে হয়েছিল আত্মহত্যা করি। আমার আর বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছেই নেই। আমি স্রেফ অনলাইনে বেঁচে থাকতে চাই এবং অনলাইনের মানুষেরা আমার জীবনের বাকীটুকু নিয়ে যাক।’

এই বার্তা অনলাইনে প্রকাশের পরপরই অনেক মানুষ চেন শিয়াওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ বিচিত্র সব আবদার নিয়ে যোগাযোগ করতে শুরু করেন তার সঙ্গে। তবে এই আবদারকারীদের মধ্যে যাদের আবদার চেনের পছন্দ হয় কেবল তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন তিনি। কেউ যদি তার প্রেমিকার কাছে ফুল পাঠাতে চান তাহলে চেন শিয়াও সেই ব্যক্তির হয়ে এই কাজ করে দেন নির্দিধায়।

নিজের জীবনের মূল্যবান সময় বিক্রি করার মাঝে সময়কে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ক্যামেরাকে। যখনই তিনি কোনো মানুষের হয়ে কাজ করেন তখন তিনি সেই ঘটনার ছবি তুলে রাখেন এবং রাতে ছবিগুলো অনলাইনে আপলোড করেন, যাতে অন্যরা তার কাজ দেখতে পারে। এভাবেই আরও নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা হয় তার। যদিও সবার সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা যে ভালো তা নয়।

চেন শিয়াওয়ের ভাষায়, ‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমার তারুণ্য আমি অন্য দশজনের চেয়ে ভিন্নভাবে যাপন করবো। আমার ২৫ বছর বয়সের পরই আমি আমাকে মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। আমার প্রতিটি দিন এখন অন্যের দাবি মেটানোতে ব্যস্ত থাকে। আমি নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ছেড়ে দিয়েছি।’

চেন এখন যে জীবন যাপন করছে তা দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটা হলো বাস্তবিক আর অন্যটা হলো ভার্চুয়াল। চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মানবিক সম্পর্ক বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ নমুনা চেনের কর্মকাণ্ডেই ফুটে উঠেছে নিদারুনভাবে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে দাড়িয়ে চেন শিয়াওয়ের মতো একজন স্বাধীন ব্যবসায়ি চেষ্টা করে যাচ্ছেন মানবিক সম্পর্কগুলোকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করতে। কারণ যে রাষ্ট্রের কারণে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, সেই রাষ্ট্রের মানুষের কাছেই তিনি তার জীবনের স্বর্ণোজ্জ্বল সময় বিক্রি করে দিচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। এক মিনিট এক ডলার, এক ঘণ্টা তিন ডলার এবং চব্বিশ ঘণ্টা ১৫ ডলার করে চেন শিয়াও যে সময় বিক্রি করছেন, তাতে হয়তো অনেকের উপকার হচ্ছে। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে ঠিক কতদিন ধরে আমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত অন্যের হাত ধরে নির্ধারিত হবে সেটাই আজ চেন শিয়াও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের।

৪



মন্তব্য চালু নেই