সৌম্য গর্জনে হোয়াইটওয়াশ পাকিস্তান
মিরপুর স্টেডিয়ামকে ‘পয়মন্ত’ বলতেই হবে। যেই মাঠে নিউজিল্যান্ডের মত দল হোয়াইটওয়াশ হয়েছে সেই মাঠে এবার হোয়াইটওয়াশ পাকিস্তান। ১৯৯২ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করতে বাংলাদেশের একটুও বেগ পেতে হয়নি। প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানের পর পরের ম্যাচে ৭ উইকেটে জয়। তৃতীয় ম্যাচটিকে আরেকটু বড় জয়। ৮ উইকেটে।
এই জয় শুধু ১৫জন ক্রিকেটারের নয়। গোটা বাঙালির। যেই জয়ের জন্যে বাংলাদেশকে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেই জয় বাংলাদেশ পেয়ে যায় অতি সহজেই। এরপর সিরিজ এরপর, হোয়াইটওয়াশ। পাকিস্তানকে জয়ের পর পুরো স্টেডিয়ামকে মনে হয়েছে এক টুকরো বাংলাদেশ। বারবার জয়-বাংলা গান চলছিল। আর স্টেডিয়ামের ২৫ হাজার দর্শক একসাথে বলে উঠছে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ।’ ২০১২ ও ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা জিততে না পারায় কেঁদেছিল। কেঁদেছিল ষোল কোটি বাঙালিও। এবার পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে সেই চোখের পানির বদলা নিল।
পাকিস্তানের দেওয়া ২৫১ রানের টার্গেট বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে ৮ উইকেট ও ৬৩ বল হাতে রেখে। জয়ের নায়ক সৌম্য সরকার। ১২৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে শুধু জয়ের স্বাদই দেননি সৌম্য, নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও তুলে নেন। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনফর্ম তামিম ও সৌম্য উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের ভিত গড়ে দেন। ১৪৫ রানের জুটি গড়েন। প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া তামিমও বেশ এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৬৪ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। ৭৬ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় তামিম তার ইনিংসটি সাজান।
তামিমের পর দ্রুত সাজঘরে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। তবে তৃতীয় উইকেটে জয়ের স্বাদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার অসাধারণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। ১২৭ রানের ইনিংসটি সাজান ১১০ বলে। ৬টি ছক্কা আর ১৩ চারে সৌম্য ইনিংসটি খেলেন। তার সঙ্গে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। ৪৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৯ রান করেন টেস্ট দলপতি। এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিষিক্ত সামি আসলাম ও সেঞ্চুরিয়ান আজহার আলী টাইগার বোলারদের বেশ দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকেন।
প্রথম পাওয়ারপ্লে’তে তুলে নেন ৫৮ রান। এর মধ্যে অভিষিক্ত সামি আসলাম ছিলেন দূর্দান্ত। বেশ কয়েকটি নান্দনিক শট থেলেন পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দলের অধিনায়ক। নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে তুলে নেন ৪৫ রান। এরপর নাসির হোসেনের শিকার হন বাহাতি এই ব্যাটসম্যান। এর আগে ৫০ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ইনিংসটি সাজান তিনি। নাসির ৯১ রানে ব্রেকথ্রু এনে দেওয়ার পর পরই হাফিজের উইকেট তুলে নেন বাহাতি সানী। সানীকে ডাউন দ্যা উইকেট এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ৪ রান করা হাফিজ।
তৃতীয় উইকেটে হারিস হোসেলকে সঙ্গে নিয়ে ৯৮ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক আজহার আলী। এ সময়ে আজহার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। একই সাথে অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। আজহার দলীয় ২০৩ রানে বিদায়ের পর হোঁচট খায় পাকিস্তান। মাত্র ৪৭ রান তুলতেই শেষ সাত উইকেট হারায় পাকিস্তান। পাকিস্তান শিবিরের আক্রমণ চালান সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও রুবেল হোসেন।
আজহার আলীকে ১০১ রানে বোল্ড করেন সাকিব। এক ওভার পর বোলিংয়ে এসে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরতি ক্যাচে সাজঘরে ফেরত পাঠান সাকিব। এর মাঝে হারিস সোলেহকে ৫২ রানে মুশফিকুর রহিমের হাতে তালুবন্দি করান মাশরাফি। হারিসের পর ফাওয়াদ আলমকেও (৪) সাজঘরের পথ দেখান মাশরাফি। এরপর রুবেল হোসেন ওয়াহাব রিয়াজ (৭) ও সাদ নাসিমকে (২২) আউট করেন।
পাকিস্তান শিবিরে শেষটা গুঁড়িয়ে দেন আরাফাত সানী। জুনায়েদ খানের উইকেট উপড়ে ফেলেন বাহাতি এই স্পিনার। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা খোলস খুলে বের হয়ে খেলার সময়ে বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে। যার কারণে শুরুটা খারাপ হলেও শেষটায় দাপট দেখায় বোলাররা।
মন্তব্য চালু নেই