মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ
মিঠা পানির একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছ। ঐতিহ্যকে ধারণ করে মেঘের গর্জন ও প্রবল বর্ষনের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সৃষ্ট স্রোতে গত ২০ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ১টায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। ডিম সংগ্রহের পরিমাণ গত বৎসরের তুলনায় এবার ডিম বেশি সংগ্রহ করায় সংগ্রহকারীদের মাঝে উৎসবের চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৫-৬শ ডিম সংহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে হালদার রাউজান ও হাটহাজারীর দুই অংশের নয়াহাট, গড়দুয়ারার টেক, আজিমার ঘাট, আমতোয়া, উত্তর মাদর্শা, রামদাশ্যার হাট, আমতলী, কচুখাইন, মোকামী পাড়া, উরকিরচর, আবুরখীল, মগদাই, কাগতিয়ারটেক, উরকিরচর, অংকুরী ঘোনা, বদুর ঘোনা এলাকায় বিভিন্ন ¯পটে জেলেরা মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করেছে। ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, হালদা নদীর গড়দুয়ারা নয়াহাট, আমতোয়া ও আজিমারঘাট এলাকায় ডিম সংহকারীরা বেশি পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে।
এ সময় প্রতিটি নৌকায় গড়ে ৫-৬ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে। এতে করে ডিম আহরণকারীদের পল্লীতে খুশির আমেজ দেখা গেছে। ডিম সংগ্রহকারী মাহাবুবুল আলম মেম্বার জানান, এ বছর হালদায় নদী থেকে প্রতিটি নৌকায় গড়ে প্রায় ৫-৬ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছি। তবে এবার যতটুকু ডিম সংগ্রহ করেছি তা অন্যান্য বারের তুলনায় একটু বেশি।
এদিকে বিগত ও বর্তমান সময়ে হালদা নদীতে নির্বিচারে মা-মাছ নিধন, হালদার বাঁক কাটা, ডিম ছাড়ার পরিবেশ নষ্ট, রাবার ড্যাম ও এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদা নদীতে পতিত না হত তা হলে আরো অধিক পরিমাণে ডিম ছাড়ত মা-মাছ বলে মনে করেন হালদা নদী বিশ্লেষকরা। হ্যাচারীর কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ ভাল। ডিম সংগ্রহকারীদের চাহিদা আরো বেশি ছিল বলে সম্পুর্ণরূপে চাহিদা মিটেনি বলে জানান। তবুও ডিম সংগ্রহকারীদের সংগ্রহিত ডিম রেনুতে পরিণত করতে হ্যাচারীতে আসার তোড়জো বেশ চোখে পড়েছে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর মা-মাছেরা বিশেষ করে গড়দুয়ারা নায়াহাট এলাকায় থেকে আমতোয়া, আজিমারঘাট পর্যন্ত ডিম ছেড়েছে। প্রতিটি নৌকায় গড়ে ৫ থেকে ৬ বালতি পর্যন্ত প্রতি নৌকায় কম বেশি ডিম সংগ্রহ করেছে সংগ্রহকারীরা। সেই হিসাবে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমান ২৫০০ বালতি। আর এই সংগৃহীত নিষিক্ত ডিম থেকে রেনু উৎপাদন হবে প্রায় ৪-৫শ কেজি। আর ওই উৎপাদিত রেনুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া সাথে এই বিষয়ে আলাপকালে জানা যায়, অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে হালদায় প্রবল বর্ষণ ও মেঘের গর্জনে স্বাভাবিক অবস্থায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরাও প্রস্তুতি ছিল। ডিম সংগ্রহকারীরা আশানুরুপ ডিম সংগ্রহ করতে না পারলেও যা ডিম তারা (জেলেরা) নদী থেকে আহরণ করেছে তাতে তাদের দূদাশা কিছুটা দূরবিত হতে পারে, তাই তারা সন্তুষ্ট।
তিনি আরো জানান, ফটিকছড়ি এলাকায় নির্মিত রাবার র্ড্যাম, অধিক পরিমাণে মা-মাছ নিধন, হালদার বাঁক কাটা, ডিম ছাড়ার পরিবেশ নষ্ট ও এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদা নদীতে পতিত হওয়ায় এমন প্রতিকুল অবস্থার কারণে মা-মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ আরো বাড়ত।
এই ব্যাপারে রাউজান উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, হালদা এবার যে পরিমাণে মা-মাছ ডিম ছেড়েছে কম নয়। তবে মা-মাছেরা যদি আমবস্যা পূর্ণিমাতে ডিম ছাড়ত তাহলে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ বেশি হত।
এছাড়াও দ্বিতীয় দফায় মা-মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে পারে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি আরো বলেন, মা-মাছ যাতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে এবং কেউ যাতে মা-মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য আমাদের অভিযান তথা পুলিশি টহল অব্যাহত ছিল ও থাকবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য চালু নেই