কলকাতার সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার মুখে : প্রসেনজিৎ

কলকাতার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী প্রসেনজিৎ। দীর্ঘদিন টালিগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রি একাই কাঁধে নিয়ে বয়ে বেরিয়েছেন তিনি। এখনও তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সম্প্রতি টালিউড ইন্ডাস্ট্রির নানা বিষয় নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন এ অভিনতো। এ সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ আওয়ার নিউজ বিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
শোনা যাচ্ছে ১৭-১৮ বছরের মেয়েরা নাকি আপনার প্রেমে পড়ছে?
প্রসেনজিৎ : এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার। এ নিয়ে আমি ইয়ার্কি মারছি না। এখন জীবনের যে স্টেজে আছি তা নিয়ে দারুণ মজা হচ্ছে না কিন্তু খুব ভালো লাগছে।
মেয়েরা কি আপনাকে ফোনে প্রোপোজ করছে?
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ, ফোনে তবে বেশির ভাগই হোয়াটসঅ্যাপে। কিছু ফেসবুকেও করছে। আজকের কমিউনিকেশন সিস্টেমটাই এমন যে আপনি সর্বদা সবার সঙ্গে কানেক্টেড। খুব চট করে আমি কাউকে ফোনে ব্লক করি না যদি না সে মারাত্মক বাড়াবাড়ি না করে। সবাইকেই ছোটছোট মেসেজ পাঠাই, ‘গড ব্লেস’, ‘ভালো থেকো’ এ অবধি। আর কাউকে মনে কষ্ট দিতে ইচ্ছে করে না। ভাবি একটা মেসেজ পেলে একজন মানুষ খুশি তো হবে।
তাছাড়া তাদের অনেককেই বলতে শুনি, ‘নাউ ইউ আর লুকিং মোর হট’। আর যারা বলছে, তারা মিশুকের (তৃষাণজিৎ) থেকে একটু বড় হবে। ভাবতে পারছেন? এই বয়সে আমি নিজেকে বদলে ফেলেছি- ফিজিকটা চেঞ্জ করেছি। আর এটা যে মানুষের মনে ধরেছে তা ভেবে ভালো লাগছে। তবে প্রোপোজ করার পর যখন দেখছি বাড়াবাড়ি করছে তখন বোঝাচ্ছিও তাদের।
কাউন্সেলিংও করছেন?
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ, করতে হচ্ছে। তবে এ টুকু বুঝেছি- রোমান্টিক সিনেমা করা অনেক দিন হলো ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু কোথাও আমার রোমান্টিক ইমেজটা থেকে গেছে। রোমান্টিসিজমটা রয়ে গেছে। আর আমি বরাবরই স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। প্রেম করলাম, এক জায়গায় বললাম হ্যাঁ, এক জায়গায় না—এ সবের মধ্যে নেই। প্রেম করছি তো প্রেম করছি। ওই লোক দেখানো, ‘উই আর ফ্রেন্ডস’ কোনওদিন আমি বলিনি।
আপনার ব্যক্তিগত জীবন তো রোমান্টিক কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
প্রসেনজিৎ : সত্যি খুব খারাপ অবস্থা ইন্ডাস্ট্রির…। আর সত্যি বলতে আমি একজন মানুষ যে ১৬ লাখ টাকার বাজেট থেকে নিজের কাঁধে ইন্ডাস্ট্রিকে বয়ে নিয়ে ৬ কোটি টাকার সিনেমা করেছি। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার বন্ডিংটা বুঝতে পারছেন। নানা প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। সবাইকে একটাই জিনিস বলছি, কমার্শিয়াল বাংলা ছবিকে বাঁচাতে হবে। কমার্শিয়াল বাংলা ছবি না চললে ইন্ডাস্ট্রি চলবে না।
মাল্টিপ্লেক্সের চলচ্চিত্র দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে তো?
প্রসেনজিৎ : না, ইন্ডাস্ট্রি শুধু মাল্টিপ্লেক্সের সিনেমা দিয়ে বাঁচতে পারে না। ব্যাপারটা তো আজকের নয়। আগেও তাই হয়েছে। আগে কমার্শিয়াল ছবি বানাতেন অঞ্জন চৌধুরী, হরনাথ, স্বপন সাহা, অনুপ সেনগুপ্ত, প্রভাতদারা। আর অন্য ধারার ছবি বানাতেন অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ আর গৌতম ঘোষ।
সেই ফর্মুলাটা, এই বিভাজনটা গেল কোথায়? সেটাই তো বুঝতে পারছি না! গত দেড়-দুই মাসে আমি গ্রামগঞ্জে শো করেছি। কোন নতুন বাংলা সিনেমার পোস্টার দেখিনি। এটা ভাবা যায়? যা দেখেছি সব পুরনো ছবির রিপিট রান। ওই একটা ‘মিশর রহস্য’, ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘ব্যোমকেশ…’ কী ‘ফেলুদা’ তো বাঁচাতে পারবে না ইন্ডাস্ট্রিকে। রেগুলার কমার্শিয়াল বাংলা ছবি চাই।
রেগুলার কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমা হচ্ছে না কেন? তবে কী পরিচালকের অভাব?
প্রসেনজিৎ : না, পরিচালক আছে। আমি আগে যেটা বলেছিলাম- বাজেট কমাতে হবে। ভারতের সর্বত্র কমার্শিয়াল ছবির নায়করা ডমিনেট করে। আমি খুব শিগগিরি দেব আর জিতের সঙ্গে বসবো। ওদের বোঝাতে চাই, বছরে দুটো থেকে তিনটে সিনোম ওদের করা উচিৎ। দেড় বছরে ওরা যদি একটা ছবি করে, আমরা কেউ বাঁচব না।
এটা বলতে পারছি কারণ আমার মাইন্ডটা কমার্শিয়াল। আরে ৩৪ বছরে গোল্ডেন জুবিলি তো কম দেখলাম না। আমি নিজে কাজ করব না কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই। ওরা যাতে আরও বেশি কমার্শিয়াল সিনেমা করে সেই তাগিদটা দিতে চাই। কাউকে তো লিডারশিপ দিতে হবে।
আপনি দেব আর জিতের সঙ্গে বসতে চান এটা খুবই ভালো খবর। ওদের মোটিভেট করতে চান যাতে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচে, বাংলা নতুন বছরে এটাই তো টলিউডের সবচেয়ে বড় স্কুপ!
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ, আমি চাই ওরা আমার সঙ্গে বসুক। দেবের সঙ্গে আট চল্লিশ ঘণ্টা আগেও কথা হয়েছে। নতুন বছরে আমি ইন্ডাস্ট্রির কাছে হাত জোড় করছি। প্লিজ আর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবেন না। এটা তো একটা সংগঠন। আমাদের সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।
ইন্ডাস্ট্রিতে আগেও এ রকম প্রবলেম হয়েছে। তখন আমি, দীপকদা (চির়ঞ্জিত চক্রবর্তী) তাপস পাল রেগুলারলি প্রোডিউসারদের সঙ্গে বসতাম। সব প্রোডিউসারেরই আলাদা আলাদা ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতাগুলোকে পজিটিভ দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। দেব-জিৎকেও বসতে হবে প্রোডিউসারদের সঙ্গে। ওদের ফ্যানদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। সহজ নয় ব্যাপারটা। কিন্তু না করলে যে আমরা বাঁচব না।
এটাই কি বাংলা নতুন বছরে আপনার চাওয়া?
প্রসেনজিৎ : হ্যাঁ। এটাই আমার চাওয়া। সবাইকে বলছি- নিজেদের জিজ্ঞেস করুন কোথায় ভুল হচ্ছে। আগে শুনতাম গ্রামের দিকে হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আজকে তো কলকাতা শহরের বড় বড় সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার মুখে। ব্যাপারটা আমার আপনার বাড়ির পাশে ঘটছে। তাও কি আমাদের ঘুম ভাঙবে না?
মিনার-বিজলি-ছবিঘরের কথা ভাবুন। আগে জানতাম মিনার-বিজলি-ছবিঘরে একটু স্ট্যান্ডার্ড ছবি হলে ২৫ সপ্তাহ, ভালো ছবি হলে ৫০ সপ্তাহ — আজ বাংলা ছবির সেই পীঠস্থানগুলো বন্ধ হওয়ার মুখে! এর থেকে দুঃখের আর কী হতে পারে?
স্বপন সাহা, প্রভাত রায়ের মতো বাণিজ্যিক পরিচালকদের কথা আপনি আগে বলেছেন। প্রশ্ন হলো ওনারা তখন কী কী কাজ করতেন যা আজকে রাজ চক্রবর্তীরা পারছেন না?
প্রসেনজিৎ : দুটো ব্যাপার বলি। আমি ইন্টেলিজেন্স, স্মার্টনেসের কথা বলছি না। আরও গোদা জিনিসের কথা বলছি যা হয়তো অনেকের পছন্দ হবে না। ওই পরিচালকদের মধ্যে একজন মানুষের প্রতি অসম্ভব রকমের দায়বদ্ধতা থাকত। সেটা প্রোডিউসার। ওনাদের ধ্যানজ্ঞান ছিল, কী করে প্রোডিউসারের ঘরে টাকা ফেরত পাঠানো যায়।
আগে ছবি না চললে পরিচালকরা এসে বলতেন, ‘বুম্বাদা, ওই প্রযোজকের আগের ছবিতে টাকা ফেরত দিতে পারেনি। আপনি আর একটা ছবি প্লিজ করে দেবেন। হিট হয়ে গেলে ওই মানুষটা আবার লগ্নি করবে।’
আমি এ রকম প্রচুর সিনেমা করেছি যেখানে এক পয়সাও নিইনি। কিন্তু এই ব্যাপারটা ইনিশিয়েট করতেন পরিচালকরা নিজে। সেই দায়টা বোধহয় আজকে কমে গেছে। আমরা স্মার্ট কনটেন্ট, স্মার্ট কনটেন্ট বলতে বলতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি যে, মানুষ আর রিলেট করতে পারছে না।
আজ থেকে দশ বছর আগের সময়ের কথা ভাবুন। তখন কমার্শিয়াল ছবিতে ফাটাকেষ্ট, সাথী, মায়ের আঁচল, প্রর্ভতি ছবিগুলো তো মানুষ দেখত। এ গুলো ছিল সুপারহিট সিনেমা।
কলকাতায় ম্যাটিনি শো আর গ্রামের দিকে দুপুর দেড়টার শো হাউজ ফুল করে মা-বোনেরা। রোববারের পরে যদি সোমবারও ওই দুটো শো ফুল হয়, তা হলে চোখ বন্ধ করে বারো সপ্তাহ। আর এখানেই প্রশ্ন, স্মার্ট মেকিংয়ের চক্করে কী আমরা এতো স্মার্ট হয়ে গেলাম, যে ওই দর্শকদের হারিয়ে ফেললাম? হঠাৎ করে বড্ড বেশি বেলুনের মতো ফুলে গেলাম আমরা।
আমার তো কষ্ট হয় সেই দর্শকদের হারিয়ে, আপনাদের হয় না? যে জায়গাটা রুল করতাম আমরা সেখানে ঢুকে গেল টেলিভিশন। টেলিভিশনের কনটেন্ট কী? সেই ফ্যামিলি ড্রামা, ইমোশনস। আগে তারা সিনেমায় সেগুলো পেত, আজ টিভি থেকে পাচ্ছে। পাচ্ছে বলেই সিনেমা থেকে সরে গিয়ে ওটা বেশি করে দেখতে শুরু করল আমাদের মা-বোনেরা।
এতটাই দেখতে থাকল যে আমি গ্রামেগঞ্জে গিয়ে বুঝতে পারি কী অসম্ভব জনপ্রিয় এই টিভির নতুন ছেলেমেয়েরা! সবার নাম হয়তো মানুষ জানে না, কিন্তু ওদের চরিত্রগুলোকে চেনে।
তবে কী বাহা, মৌরি ফিল্মস্টারদের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাতে পেরেছে?
প্রসেনজিৎ : সাংগাতিকভাবে ভাগ বসাতে পেরেছে। একবার গ্রামে গিয়ে দেখে আসুন না। সিনেমা স্টারদের শোগুলোতে তো লোক কম হচ্ছে না। হাজার হাজার লোক দেখতে আসছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, ফিল্মস্টারদের দেখতে তাদের প্রচুর ইন্টারেস্ট, কিন্তু যে সিনেমাটা আমরা বানাচ্ছি সেটার সঙ্গে তারা রিলেট করতে পারছে না।
কিন্তু এতো কথার পর তাও বলছি একমাত্র রাজ (চক্রবর্তী)-ই পারে হার্ডকোর কমার্শিয়াল ঘরনার ছবি বানাতে। ওকে দেখে বুঝি ও ভীষণ রুটেড। এ ছাড়াও আর একটা প্রবলেম আছে। তাহলো- রাজকে বুঝতে হবে সব রকম দর্শক ওর ছবি দেখবে না। আরে স্বপন সাহা তো কোন দিন ভাবেননি নন্দনে ওনার ছবি চলবে। ঠিক যেমন ঋতুপর্ণ ঘোষও ভাবেনি ওনার সিনেমা পানাগড়ে চলবে।
স্বপন সাহা এক সময় একচেটিয়া কাজ করেছেন। কিন্তু সময়টা বদলে গেছে। গ্রাম বাংলাও বদলে গেছে। এখনকার সময়ে স্বপন সাহা কী প্রাসঙ্গিক হতেন?
প্রসেনজিৎ : গ্রাম বদলে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু স্বপন সাহা সেই সময়ের গ্রামের দর্শকদের ফাটিয়ে এন্টারটেইন করতেন। সেই মানুষগুলো, সেই দর্শককুল তো আজও আছে। মানছি সেই মানুষগুলোর হাতে স্মার্টফোন, কিন্তু তারাও তো আজ এন্টারটেন্ড হতে চান। সেই মানুষগুলোকে ভেবে কি আমরা কেউ কিছু বানাচ্ছি? মোটেই বানাচ্ছি না।
স্বপন সাহা আর ঋতুপর্ণ ঘোষের মধ্যে যে বিভাজনটা ছিল, সেটা উঠে যাওয়ার জন্য কি মিডিয়া দায়ী?
প্রসেনজিৎ : আজকে মিডিয়া সৃজিত, কৌশিক, কমলেশ্বরের ইন্টারভিউ নিয়মিত ছাপে। কাগজ খুললেই তাদের ছবি দেখা যায়। আজকে রাজ, রাজীবের মনে হতেই পারে, আরে অন্য রকম ছবি বানালেই তো কাগজে ছবি বেরোবে, না হলে নয়! এমন প্রশ্ন হতে পারে কিন্তু আগে তো স্বপন সাহা, অ়ঞ্জন চৌধুরীদের কখন মনে হয়নি কাগজে ছবি ছাপার কথা।
সময়টা যেহেতু পাল্টে গেছে। তাহলে কী স্বপন সাহাদের থেকে রাজদের ছবি ছাপানোর লোভ বেশি?
প্রসেনজিৎ : কাগজে ছবি বেরোলে সবার ভালো লাগে। কিন্তু রোজ রোজ ছবি ছাপিয়ে কী হবে বলুন তো? দেখি তো সব ছবি। দইয়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, কেকের দোকানে দাঁড়িয়ে সব ছবি তুলছে। কী লাভ তাতে? অপ্রিয় হলেও কথাগুলো বলতে হচ্ছে কারণ কাউকে না কাউকে তো বলতে হবে। আর একটা জিনিস, আজকাল শুধু দেখি সাকসেস পার্টি হচ্ছে।
আরে কীসের সাকসেস পার্টি! সাংবাদিক হিসেবে তো আপনিও যান ওই সব পার্টিতে। গিয়ে জিজ্ঞেস করেন তো প্রোডিউসারকে, আপনার পরের ছবি কী? দেখবেন প্রোডিউসার তার ছবিরই সাকসেস পার্টিতে বলছেন, না আমি কোন ছবি শুরু করছি না। তা হলে কীসের পার্টি হচ্ছে এ সব?
স্বপনদা, হরদা, অঞ্জন চৌধুরীর সময় কি পার্টি হয়নি? অবশ্যই হয়েছে। সেটা স্টুডিওর ঘেরা চত্বরে। সেখানে টেকনিশিয়ানরা থাকত। আজকাল তো পার্টিতে দেখি কেউ আর টেকনিশিয়ানদের ডাকে না। শুধু কিছু স্যুট পরা কর্পোরেট লোকজন ঘুরছে। সেটা খারাপ বলছি না, সেটাও ভালো কিন্তু টেকনিশিয়ানরা কেন বাদ যাবে বলুন? একটা ছবির মেরুদণ্ড হচ্ছে টেকনিশিয়ানরা।
তারাও তো আমাদের লোক। তারাও তো একটা ছবির জন্য পাগলের মতো খাটে। আনন্দের সময় তাদের তোমরা ডাকবে না? আর আপনি মিডিয়ার দোষের কথা বলছিলেন না, আমি দোষ দেখি না মিডিয়ার। মিডিয়া আমাদের প্রচুর পাবলিসিটি দেয়। কিন্তু আমরা কি তার সদ্ব্যবহার করতে পারছি? মনে হয় না।
আপনি বলছেন বাজেট কমানোর কথা কিন্তু আপনিই তো প্রতিদিন ২৪ হাজার টাকা নেন?
প্রসেনজিৎ : ২৪ হাজার হবে না। ১৮-২০ হাজার হবে। আরে আমি তো আর ওই টাকাটা নিজে নিচ্ছি না। আমার তো একটা মেক আপ আর্টিস্ট লাগবে, একটা ড্রেসের ছেলে লাগবে। এত বছর কাজ করার পর এটা তো ন্যাচারাল। পৃথিবীর সর্বত্র স্টারদের জন্য প্রযোজকেরা এই খরচাটা করে।
আমি ভাগ্যবান, এই মুহূর্তে তিনটে ছবি করছি যেখানে প্রোডিউসাররা এই খরচটা দিচ্ছে। আর প্রসঙ্গটা যখন তুললেন, তখন এটাও বলি আমি কিন্তু নিজের ভ্যানের ভাড়া মার্কেট রেটের থেকে কম নিই। শুধু মেইনটেনেন্স আর ড্রাইভারের টাকাটা নিই। তা-ও আমার ছেলেদের বলছি, ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো না তোরা প্যাকেজ করে নে। ওরা তাই করছে। ইন্ডাস্ট্রির খারাপ সময়ে উনিশ-কুড়ি করতেই হবে। গ্যাঁট হয়ে নিজের রেট কমাব না ভুল স্ট্র্যাটেজির।
দেব, জিৎ, অঙ্কুশ এই তিন কমার্শিয়াল হিরোকে আপনি কী উপদেশ দেবেন?
প্রসেনজিৎ : আমি উপদেশ দেবার কে? বলুন না? দেবকে বলতে পারেন- পলিটিক্স অনেক হলো এ বার সিনেমায় মন দে। জিৎকে বলতে পারেন নিজের রেমুনারেশন কমান। ওদের আরও বেশি ছবি করা উচিৎ। এখানে আমি আবীর, পরম, যিশুদের গ্রুপটার কথা বলছি না। ওটা আলাদা।
আমি বলছি, দেব আর জিৎ যদি দু’জন মিলে বছরে ছ’টা ছবি করে, অঙ্কুশ ধরুন দু’টো করল, তা হলে তো দশটা কমার্শিয়াল ছবি হল। এই দশটার মধ্যে দু’টো ছবি তো সুপারহিট হবেই। এই দু’টো ছবি সুপারহিট হলেই দেখবেন আরও দশটা ছবি শুরু হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে। এই ফর্মুলাটা মানলেই ইন্ডাস্ট্রিটা বাঁচবে।
কৌশিক, সৃজিত, কমলেশ্বর কমার্শিয়াল ছবি বানাতে পারে না?
প্রসেনজিৎ : হান্ড্রেড পার্সেন্ট পারে। আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে পারি। সৃজিত তো পারেই। ‘মহাভারত’ হলে কমলেশ্বরও দেখিয়ে দিত। কৌশিকও পারে তবে ওকে একটু ভেবে এগোতে হবে।
ওরা তিন জন যে দিন ঠিক করবে কমার্শিয়াল ছবি বানাবে, ইন্ডাস্ট্রি সে দিন বদলে যাবে। ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় ব্লেসিং হবে সেটা। যে রকম মণিরত্নম ‘রোজা’ করে কমার্শিয়াল ছবির চেহারাটা বদলে দিয়েছিল। এই তিনজনও কমার্শিয়াল বাংলা ছবির ধারাটা সারা জীবনের জন্য বদলে দিতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস।
মন্তব্য চালু নেই