পৃথিবীর সবচাইতে দামি যে ৫টি খাবার
একটি খাবারের পেছনে আপনি কত টাকা ব্যয় করতে পারবেন? অথবা একবেলার খাবার আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা ব্যয় করে খেতে চাইবেন? পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা? সব থেকে বেশি খাদ্য প্রেমীরা পছন্দ কিংবা শখের জন্য সর্বোচ্চ পনের থেকে বিশ হাজার টাকাই না হয় ব্যয় করলেন নিজের সাধ্য অনুযায়ী। কিন্তু খাবারটির দাম যদি হয় লাখের ঘরে তখন?
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই দেখছেন, লাখ। সবার সাধ্যের মধ্যে না থাকলেও পৃথিবীতে লাখ খানেক টাকারও অনেক খাবার আছে। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা মাঝে মধ্যে নিজের মনের সাধে অথবা শখ মেটাতে এইসব খাবার খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার এই দামের খাবার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন করে নিয়েছেন। আসুন তবে দেখি বিশ্বের সব চাইতে দামী পাঁচটি খাবারের তালিকা।
১. ইটালিয়ান হোয়াইট অ্যালবা ট্রায়ফল- প্রতি কেজি ১,০৬,২৩০ ডলার
ট্রায়ফল হচ্ছে মাটির নিচে উৎপাদিত অ্যাস্কোমায়কোটা ছত্রাকের একটি ফ্রুটিং বডি। ট্রায়ফল বরাবরই একটি দামী খাবার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ইটালিয়ান হোয়াইট অ্যালবা ট্রায়ফল কেজি প্রতি ১,০৬,২৩০(এক লক্ষ ছয় হাজার দুশো ত্রিশ) ডলারে বিক্রি হয়ে বিশ্বের সবথেকে দামী খাবারের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে নিয়েছে।
এই দামের পেছনে রয়েছে এর কষ্টসাধ্যকর উৎপাদন। সব থেকে বড় প্রায় ১.৫১ কেজির ইটালিয়ান হোয়াইট অ্যালবা ট্রায়ফলটি বিক্রি হয় ১,৬০,৪০৬(এক লক্ষ ষাট হাজার চারশো ছয়) ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য হচ্ছে ১,২৮,৩২,৪৮০(এক কোটি আটাশ লক্ষ বত্রিশ হাজার চারশো আশি) টাকা প্রায়। এই অবিশ্বাস্য মূল্যের ট্রায়ফলটির ক্রেতা হং কং এর একজন রিটেইল ইনভেস্টর ও তার স্ত্রী।
২. অ্যালমাস ক্যাভিয়ার- প্রতি কেজি ২৫,০০০ ডলার
দামী খাবারের মধ্যে ক্যাভিয়ারকে অনেকই চেনেন। কিন্তু যে ক্যাভিয়ারের কথা বলা হচ্ছে তা হল অ্যালমাস কেভিয়ার যা বিশ্বের সবথেকে দুর্লভ ক্যাভিয়ারের মধ্যে একটি। এটা এতটাই দুর্লভ যে একে খুঁজতে যাওয়া ও খরের গাদায় সূচ খুঁজতে যাওয়া একই কথা। যে একটিমাত্র জায়গায় এই ক্যাভিয়ারটি দেখা যায় সেটা হচ্ছে লন্ডনের পিকাডেলির ‘ক্যাভিয়ার হাউজ অ্যান্ড প্রুনিয়ার’ এ।
আর এই অতি দুর্লভ খাদ্যবস্তুটি রাখা হয় এককেজি পরিমাণে আলাদা আলাদা টিনে এবং এই টিনগুলো প্রত্যেকটি ২৪ ক্যারট স্বর্ণ দ্বারা তৈরি। টিনসহ এই অ্যালমাস কেভিয়ারের দাম পড়বে ২৫,০০০(পঁচিশ হাজার) ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২০,০০,০০০(বিশ লক্ষ) টাকা। যদি শুধুমাত্র মুখে চেখে দেখতে চান তবে আপনাকে গুনতে হবে ১,২৫০ ডলার অর্থাৎ প্রায় এক লাখ টাকা।
৩. ইউব্যারি কিং মেলন- ২৩,০০০ ডলার
নাম শুনে অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন মেলন তো বাঙ্গি বা ফুটি। কিন্তু এটি কোন সাধারন ফুটি নয় যা আপনি যে কোনো সুপারমার্কেট থেকে কিনতে পারেন। ইউব্যারি কিং মেলনটি অনেকটা কমলার মত।
এবং এটির চাহিদা বেশি তার ভেতরের সুমিষ্টতার জন্য। এটা এত বেশি দুর্লভ একটি ফল যে ২০০৮ সালে উৎপাদিত ১০০ টি ফলের প্রথমটি যখন নিলামে তোলা হয় তখন একজন স্যুভেনির শপ এবং সীফুড লাঞ্চ রেস্টুরেন্টের মালিক প্রায় ২৩,০০০ (তেইশ হাজার) ডলার মূল্য হেঁকে তার ঘরে তোলেন। বাংলাদেশি টাকায় এই ইউব্যারি কিং মেলনটির মূল্য পড়ে প্রায় ১৮,৪০,০০০ (আঠারো লাখ চল্লিশ হাজার) টাকা।
৪. ডেনসুকে ব্ল্যাক ওয়াটারমেলন- ৬,১০০ ডলার
বিশ্বের দামী খাবারের তালিকায় চতুর্থ স্থান করে নেয়া এই কালো তরমুজটি অত্যন্ত দুর্লভ জাতের। এটি শুধুমাত্র জাপানে হক্কাইডো দ্বীপ জন্মায়। তাও এই ফলটি মৌসুমে মাত্র কয়েক ডজনই জন্মায় পুরো পৃথিবীতে। এই তরমুজটির দুর্লভতার পাশাপাশি নিখুঁত ও তুলনাহীন স্বাদের জন্য এর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। গেল বছর এই ডেনসুকে ব্ল্যাক ওয়াটারমেলনের মৌসুমে একটি ১৭ পাউন্ডের ফল বিক্রি হয় ৬,১০০(ছয় হাজার একশত) ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় এর মূল্য হয় ৪,৮৮,০০০(চার লক্ষ আটাশি হাজার) টাকা।
৫. রয়্যাল জিরো জিরো সেভেন পিৎজা – ১২ ইঞ্চি ৪,২০০ ডলার
ডমেনিকো ক্রোল্লা একজন স্কটিশ সেফ যিনি তার পিৎজার জাদুকরী স্বাদের জন্য বিশ্বে সমাদৃত। তিনি জেমস বন্ড মুভির আমেজের সাথে তাল মিলিয়ে একটি পিৎজা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন যার ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় এই রয়্যাল জিরো জিরো সেভেন পিৎজাটি। কেন এই পিৎজাটির এত দাম তা জানতে চান? তবে শুনুন।
এই ১২ ইঞ্চির এই পিৎজাটিতে ব্যবহার করা হয় কনিয়াক মেরিনেটেড লবস্টার, শ্যাম্পেইন এ ভিজিয়ে রাখা ক্যাভিয়ার, স্কটিশ পদ্ধতিতে তৈরি স্মোকড স্যামন, প্রস্কিউতো, হরিনের মাংস এবং বিশেষ ভাবে প্রস্তুতকৃত ভিনেগার। শুধু তাই নয় এই পিৎজাটির টপিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় খাঁটি ২৪ ক্যারট ভোজ্যস্বর্ণ। আর এই পিৎজাটি খেতে চাইলে আপনাকে ব্যয় করতে হবে ৪,২০০(চার হাজার দুশো) ডলার অর্থাৎ ৩,৩৬,০০০(তিন লাখ ছত্রিশ হাজার) টাকা।
মন্তব্য চালু নেই