দেরিতে কথা বলা শিশুদের জন্য যা কিছু করনীয় আপনার
আপনার বাড়ির ছোট্ট সোনামণি এই বয়সে টুকটাক কথা বলার কথা। সব ঠিকঠাক চলছে। খাওয়া, ঘুম, খেলা। তাকে কিছু করতে বললে সেটাও সে করছে। তবে সমস্যা একটাই, সে কথা বলছে না! অনেকেই ভাবেন, শিশু বুঝি অটিজমে আক্রান্ত। ব্যাপারটি তেমন নাও হতে পারে। কথা দেরিতে বলার অনেক কারণ আছে।
গবেষণা অনুযায়ী, সাধারণত তিনবছর পার হওয়ার পর শিশুরা তাদের দেওয়া নির্দেশ বুঝতে পারে। পাশাপাশি তাদেরকে বলা কথার বেশিরভাগই বুঝতে পারে ও উত্তর দিতে পারে। চার বছর হলে, তারা বিষয় বুঝে প্রশ্নও করতে পারে এবং অভিন্ন বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কথাও পরিষ্কার হতে শুরু করে।
আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, স্পিচ থেরাপির সহায়তা নিলে শিশুটি দ্রুত কথা বলা শিখতে পারে-
১. যেসব শিশু দেরিতে কথা বলে বা ঠিকমতো কথা বলা শিখছে না তাদের ক্ষেত্রে প্রতিটি কাজে একটি নির্দিষ্ট শব্দের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলতে হবে। যেমন- শিশুকে গোসল করানোর সময় `গোসল` শব্দটির ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আবার বাইরে যাওয়ার সময় `যাব` শব্দটি বারবার বলে শিশুকে বোঝাতে হবে।
২. শিশু যদি ইশারার সাহায্যে যোগাযোগ করতে চায়, তবে সেই ইশারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং অর্থবোধক শব্দ যোগ করে তাকে কথা বলতে উৎসাহিত করুন। যেমন- শিশু বিদায় জানাতে হাত বাড়ালে আপনি বলুন `বাই বাই` অথবা `টা টা`।
৩. শিশুর সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটি একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় রেখে (শিশুর নাগালের বাইরে) তাকে জিনিসটি দেখান। যখন সে ওটা নিতে চাইবে বা আপনার হাত ধরে টানবে, তখন আপনি জিনিসটির নাম একটু স্পষ্টভাবে বলুন। যেমন- যদি `গাড়ি` হয় তবে বলুন `ও, তুমি গাড়ি খেলতে চাও?` অথবা `এই যে তোমার গাড়ি।`
৪. শিশুর অনুকরণের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর বেশি গুরুত্ব দিন। যেমন- শিশুর হাসি বা মুখভঙ্গির অনুকরণ করে দেখান। তারপর আপনার সঙ্গে শিশুকে অন্যান্য শারীরিক অঙ্গভঙ্গি যেমন- হাততালি দেওয়া, হাতের উল্টোপিঠে চুমু খাওয়া ইত্যাদি করান। পাশাপাশি উচ্চারণ স্থান দেখিয়ে বিভিন্ন শব্দ অনুকরণের ওপর গুরুত্ব দিন।
৫. বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু মূল শব্দের আগে অনেক ক্ষেত্রে আগে প্রতীকী শব্দ ব্যবহার শুরু করে। তাই এ ক্ষেত্রে আপনিও প্রাথমিকভাবে প্রতীকী শব্দ ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিন। যেমন- গাড়ি বোঝাতে পিপ্পিপ্। বেড়াল বোঝাতে মিঁউ মিঁউ ইত্যাদি।
৬. যেসব শিশু মাঝেমধ্যে দু-একটি শব্দ বলছে, তাদের শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির ওপর জোর দিন। যেমন- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (মাথা, হাত, পা), বিভিন্ন জিনিসের নাম (বল, গাড়ি, চিরুনি), বিভিন্ন ক্রিয়াবাচক শব্দ (খাব, যাব, ঘুম) ইত্যাদি শেখান।
৭. দুই বছরের বড় শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত এবং অতি পছন্দের ৮-১০টি ছবি নিয়ে একটি বই তৈরি করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে বই দেখিয়ে শিশুকে ছবির মাধ্যমে নাম শেখাতে পারেন।
৮. যেসব শিশু চোখে চোখে তাকায় না এবং মনোযোগ কম, আবার কথাও বলছে না, তাদের ক্ষেত্রে আগে চোখে চোখে তাকানো ও মনোযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিন। যেমন- লুকোচুরি খেলা, কাতুকুতু দেওয়া, চোখে চোখে তাকিয়ে শিশুর পছন্দের ছড়াগান অঙ্গভঙ্গি করে গাওয়া।
৯. আপনার কথা না বলা শিশুটির সামনে অন্য একটি শিশুর `দাও` বলার পরে পছন্দের জিনিস দিচ্ছেন এমন কৌশল দেখিয়ে তাকে কথা বলার গুরুত্ব বোঝাতে পারেন।
কী করবেন না:
১. কথা বলার জন্য অত্যধিক চাপ যেমন- `বল, বল` ইত্যাদি করা যাবে না।
২. শিশুকে অপ্রাসঙ্গিক অথবা অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
৩. একসঙ্গে অনেক শব্দ শেখানোর চেষ্টা করবেন না, এতে শিশু কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থা। সঠিক সময়ে এই পদ্ধতির কৌশলগত প্রয়োগ হলে শিশু কথা এবং যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে উন্নতি করবেই।
৪. অনেক মা-বাবাই ভাবেন, অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে তাঁদের পিছিয়ে পড়া শিশুর খেলার পরিবেশ করে দিলেই আপনা আপনিই কথা শিখে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। তাই নিজেরা বাড়িতে চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে স্পিচ থেরাপির সহায়তা নিন।
মন্তব্য চালু নেই