অরাজনীতিকদের কব্জায় বিএনপি!

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়া নিয়েছেন দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে কথা বলে। কাগজে কলমে বিএনপির কোনো পদে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু বিএনপি কী করবে, কাকে সমর্থন দেবে, গণমাধ্যমে দলের সে বক্তব্যও তুলে ধরছেন তিনিই।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও প্রচারের সামনে রাখছে না নেতাদের। আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবী আর পেশাজীবীরা থাকছেন নেতৃত্বে। আর এতে বিএনপিতে কথা উঠেছে, রাজনৈতিক নেতাদের বদলে অরাজনৈতিকদের কজ্বায় চলে গেলো কি না দলটি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রথম পছন্দ আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা এই আসনে দলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন দেয়ার পক্ষে কথা বলেছিলেন। কিন্তু আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত দেন, মাহী না আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকেই সমর্থন দেবে বিএনপি।

এতসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন খালেদা জিয়া, কিন্তু অন্ধকারেই থাকছেন নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠের নেতারা। আসলে তারা নেই দৃশ্যপটেও। এমনকি এসব ক্ষেত্রে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ইসলামী ছাড়া অন্য শরিকদলগুলোর মতামত বেশিরভাগ সময় উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে টানা তিনমাস হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে দেশের দুই প্রধান সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। তার আগের তিন মাস আন্দোলনের সময় খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করলেও দলের শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তবে বিএনপিপন্থি শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক বা অন্য পেশাজীবীরা ধারাবহিকভাবেই দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রথমে উদ্যোগী হয় বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের মোর্চা শত নাগরিক কমিটি। খালেদা জিয়ার সাক্ষাত করে সংগঠনটির প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে বিএনপির নানা দাবি তুলে ধরেন। তাদের এই তৎপরতা শুরুর পর বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের মোর্চা সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ আরও কিছু সংগঠনের নেতারা আপত্তি তোলেন। পরে শত নাগরিক কমিটি বকেং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয় আদর্শ ঢাকা আন্দোলন।

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে একদিন বৈঠক করে এসেছেন বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকারসহ দলের মাঝারিপর্যায়ের ছয় জন নেতা। তবে এই বৈঠকের পর নেতাদেরকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ মানতে নারাজ যে, দলে গুরুত্ব হারিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিএনপির সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এটা আমি মানতে নারাজ। কারণ দলের পরে জোট আছে। আমাদের শুভাকাঙ্খী আছেন তারাও পরামর্শ দেন। সবগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়’।

ঢাকা উত্তরে মাহী বি চৌধুরীকে বিএনপি সমর্থন দেবে-এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন হান্নান শাহ। কিন্তু খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত আসে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হান্নান শাহ বলেন, ‘কর্মীদের মনোভাব ছিল রাজনৈতিক মাঠে পরিচিত এমন কাউকে প্রার্থী করলে ভালো হবে। আমিও তেমনটা বলছিলাম। কিন্তু আমার একার বক্তব্যে তো দল চলবে না’।

চট্টগ্রামে নেতাদের হাতেই নিয়ন্ত্রণ

ঢাকার চেয়ে পুরো বিপরীত চিত্র চট্টগ্রামে। সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমকে সমর্থন ঘোষণা, প্রচার-পুরোটাই চলছে রাজনৈতিক নেতাদের তত্ত্বাবধানেই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সামনের সারিতে থেকেই এম মনজুর আলমের পক্ষে কাজ করছেন।



মন্তব্য চালু নেই