‘ক্ষুধার্ত আফগান শিশু’

আলোকচিত্রের নিয়তি যেন আফগান শিশুদের তাড়া করে ফিরছে। বিখ্যাত আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাকুরির ‘আফগান গার্ল’ পোট্রের্টটির পর আবারও আলোচনায় ‘আফগান বয়’ নামের একটি আলোকচিত্র। তবে এবার আর স্টিভ ম্যাকুরি নয় বরংচ অ্যান্ড্রু কুইলটি নামের এক অখ্যাত আলোকচিত্রীর তোলা ছবি এটা। অনাহারে শীর্ণকায় গুল আহমেদ নামের এক বালক যাকে তার মা মশা আর ধুলা থেকে বাঁচানোর জন্য নিজের হলুদ ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধে দেশটির অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সবচেয়ে চরমতম উদাহরণ খুব সম্ভব কুইলটির তোলা এই ছবিটি।

আফগানিস্তানে অপুষ্টিতে থাকা লক্ষাধিক শিশুর চিত্র ঠিক গুল আহমেদের মতোই। প্রতি মাসে জাতিসংঘের ডাক্তাররা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন। গত মাসেও আড়াইশ অসুস্থ শিশুকে হেলমন্দ প্রদেশের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ইউনিসেফের করা এক গবেষণায় দেখা যায়, চলতি বছর নতুন করে লক্ষাধিক আফগান শিশু অপুষ্টির শিকার হবে।

অস্ট্রেলিয় আলোকচিত্রী কুইলটি যখন কাবুলে পৌছান, শুরুতেই তিনি যান হাসপাতালে। সেখানে তিনি অর্ধশতাধিক নারীকে তাদের রুগ্ন শিশুদের নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। তার ভাষ্য মতে, ‘আফগানিস্তানে একজন পুরুষের পক্ষে নারীদের ছবি তোলা সত্যিই খুব দুরুহ কাজ। আপনি ওয়ার্ডে ঢুকলেই দেখবেন নারীরা তাদের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলছে এবং অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে। একজন আলোকচিত্রী হিসেবে আপনাকে সবসময়ই শিশু এবং রোগিদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে এবং ততক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যতক্ষন পর্যন্ত ওই বাচ্চাদের মায়েরা আপনার প্রতি আশস্ত হতে না পারে। এরপর আপনি তাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে ছবি তুলতেও পারবেন।’

কুইলটি যখন সর্বপ্রথম গুল আহমদকে লক্ষ্য করে তখন তার মা একটি হলুদ ওড়না দিয়ে গুলের মাথা ঢেকে ফেলে। এভাবেই অনেক ঘটনার ভেতর দিয়ে কুইলটি ছবি তুলতে পারেন শেষমেষ। তার তোলা ছবি আমাদের সামনে ১৯৮০ সাল থেকে যুদ্ধরত একটি দেশকে সামনে এনে দেয়। আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আফগানরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও তাদের মুজাহিদিন বলা হচ্ছে, কখনও বলা হচ্ছে আলকায়েদা। সন্ত্রাস উৎপাদন আর সন্ত্রাস দমনের মাঝখানে এরকম অসংখ্য গুল আহমেদ মারা যায় অনাহারে।

নিজের তোলা ছবি নিয়ে কুইলটির যে খুব আহ্লাদ তা কিন্তু নয়। বরং নিজের তোলা ছবিই নিজেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন করে চলছে। তাইতো কুইলটি রাগান্বিত হয় যখন তিনি শুনতে পান তারই দেশের প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, ‘আফগানিস্তানে যুদ্ধের শেষে শান্তি ফিরে আসবে’। রাজনীতি আর অর্থনীতির নিজস্ব খাতায় শান্তির সংগা কিরকম তা জানেন না কুইলটি কিন্তু মানবিকতার খাতার শান্তির সংগায় যে মানুষকে বাঁচতে শেখানো হয় তা ভালোই জানেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই