স্মরণে সুহাসিনী দিব্যা ভারতী

বড় ভুল সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন প্রতিভাময়ী এক অভিনেত্রী। আর তাই সৃষ্টিকর্তা একটু তাড়াতাড়ি তাকে ডেকে নিয়ে গেলেন তার কাছে। মৃত্যুর ২২ বছর পরেও অসংখ্য দর্শক হৃদয়ে অমলিন হয়ে অছে একটি নাম- দিব্যা ভারতী। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে চলে যান মাত্র ১৯ বছর বয়সী দিব্যা। আজও তার মৃত্যু রহস্যঘেরা। তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হলেও এ নিয়ে কম বিতর্ক নেই।

ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াওয়ালাকে। কেউ বলেন প্রেম, আবার কেউ বলেন সাজিদের প্রলোভোন ও হিসাবের জাল কেটে বেরুতে পারেননি ১৮ বছরের দিব্যা। তবে গোপনেই পরিবার এবং সহকর্মীদের অমতেই বিয়ে করেন বিধর্মী সাজিদকে। সাজিদের ভাষ্যানুযায়ী, বিয়ে করার পরে সে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মও গ্রহন করে; এবং মুসলিম নাম হিসেবে ‘সানা নাদিদওয়ালা’ নামটি গ্রহণ করে। আর তাই তার মৃত্যুর পর কট্টর মুসলিমরা তাই প্রায়শই উষ্মা প্রকাশ করে যে, একজন মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কেন তাকে কবর না দিয়ে দাহ করা হলো?

দিব্যা ভারতী২তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সে রাতে দিব্যার মৃত্যুর সময় তিনজন মানুষ উপস্থিত ছিলঃ দিব্যা ভারতীর ড্রেস ডিজাইনার নীতা লুলা, নীতির স্বামী ডঃ শ্যাম লুলা এবং বাসার কাজের মেয়ে। দিব্যার স্বামী প্রযোজক সাজিদ নাদিদওয়ালা সেসময় বাসায় উপস্থিত ছিল না। সাক্ষী নীতা লুলার ভাষ্য অনুযায়ী, দিব্যা ভারতী ড্রিঙ্ক করতঃ অবস্থায় খোলা জানালার উপর একেবারে কিনারায় বসে কাজের মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো। এসময় সে হঠাৎ ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে এবং যার পরিণতিতে পাঁচ তলা থেকে নীচে পড়ে নিহত হয়। ঘটনা এরকম হতেই পারে, এটা অবিশ্বাস্য কিছু নয়।

তবে তদন্ত কমিটি ও সাক্ষীদেরকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে! এছাড়া আরেকটি সুত্র মতে, দিব্যার উচ্চতা ভীতি ছিলো। তথ্যটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে জানালার ধারে তার ওভাবে বসাটা কোনভাবেই মেলে না। তাছাড়া সম্ভাব্য হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহের তীর দিব্যার স্বামী সাজিদের দিকে। কারন বিয়ের পর থেকেই নাকি স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের চেয়ে দিব্যার প্রতি ব্যবসায়ী মনোভাব বেশী প্রকাশ পেতো।

দিব্যা ভারতীর মৃত্যুরহস্যের কারনে নয়, বরং দিব্যাকে আজো লাখো ভক্ত বুকের ভেতরে লালন করে তার অভিনয়ের কারনেই। তার আদরমাখা বুলি, নিষ্পাপ চাহনী, ফুলের মতো সুন্দর চেহারার জন্য। দিব্যা ভারতী ১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে জন্ম নেন। তার বাবা ওম প্রকাশ ভারতী একজন বীমা কর্মকর্তা এবং মা মীতা ভারতী গৃহিনী।মুম্বাইয়ে মানিকজী কুপার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন দিব্যা, রূপালী পর্দায় অভিষেকের আগে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন তিনি।

১৯৯০ সালে তেলুগু বব্বিলি রাজা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু হয়। এরপর ১৯৯২ সালে বিশ্বআত্মা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। একে একে ‘দিওয়ানা’, ‘দিল কা ক্যায়া কসুর’, ‘শোলে ওর শাবনাম’, ‘দিল হি তো হ্যায়’, ‘গীত’, ‘দিল আশনা হ্যায়’, ‘দুশমন জামানা’, ‘বলবান’ প্রভৃতি ছবির মাধ্যমে নিজেকে শীর্ষনায়িকা হিসেবে প্রমাণ করেন।

অভিষেক হিসেবে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি, ইতিহাসে যা রেকর্ড। জীবদ্দশায় তার সর্বশেষ ছবি ‘ক্ষত্রিয়’। তার মৃত্যুর পর মুক্তি পায় ‘খোলি মধু’, ‘রঙ’ এবং ‘শতরঞ্জ’। শেষের দুটি ছবিতে তার জন্য ডাবিং করেন অন্য শিল্পী। তার সৌন্দর্য্য ও অভিনয় প্রতিভার অপূর্ব নিদর্শন হয়ে আছে এই মুভিগুলো। এই গর্জিয়াস, হাস্যোজ্জ্বল, সদা চঞ্চল, প্রানোচ্ছ্বল, নিষ্পাপ চেহারার দিব্যা ভারতীকে কখনোই ভোলা সম্ভব নয়।



মন্তব্য চালু নেই