ইসলামে বায়াত হওয়া প্রয়োজনীয়তা কতটুকু (পর্ব-২)
বায়াত সম্পর্কি প্রথম পর্বে ধারাবাহিকতা দিয়ে শুরু করছি। আমার উচিত ছিল প্রথম পর্বে আলোচনাটা করা। যেহেতু ভুল বশত প্রকাশ হয়ে গেছে এই পর্বে আলোচনা না করলেই নয়। একটি সাধারন বিষয় হচ্ছে যেটা সকলেরই জানা আমি যদি ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার গাড়ির টিকেট করি সেটা দিয়ে তো আমাকে বরিশালের গাড়িতেই যেতে হবে। বরিশালেন গাড়িতে না যেয়ে যদি আমি খুলনা যেতে চাই সে বরিশালের টিকেট দিয়ে গাড়ি নিশ্চয়ই নিবে না। এই ব্যপারে যদি আমি চেষ্টা বা অনুরোধও করি সকলেই আমাকে পাগল বলবে। কিন্তু শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষদের কাছে আমি বলতে চাই বায়াতের শুরুতে একটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিবেন অন্তত্য যারা পিরদের হাতে বায়াত হয়ে মুরিদ হয়েছেন।
আমরা সকলেই তো মারেফত শিক্ষা নেওয়ার জন্য বায়াত হয়েছি। এটা নিশ্চয়ই এক মত হবেন আমার সাথে। খেয়াল করে দেখবেন আপনারা বায়াত হওয়ার জন্য অধিকাংশই হয়তো ওযু করে গিয়ে বসেছেন অথবা পির সাহেবের সামনের কোন মুরিদ বা পির সাহেব নিজেই বলেছেন ওযু আছে? না হয় ওযু করে আসেন। আপনারা যারা ওযু করে গেছেন তারা ছাড়া বাকী লোকজন ওযু করার জন্য উঠে গিয়ে ওযু করে ফিরে এলেন বায়াত হওয়ার জন্য। এখানেই কথাটা চিন্তা করতে বলবো। আপনি তো গিয়েছেন মারেফতের পথে বায়াত হতে। আপনি যে ওযু করে বসেছেন সেটা তো করলেন শরিয়তের ওযু। মারেফতের ওযু তো আপনাদের জানা নাই। চিন্তা করতে বলবো আমি যেমন এক জায়গার টিকেট কিনে অন্য যায়গায় যেতে চেয়ে পাগল অ্যাখ্যা পেয়েছিলাম আমার মত পাগল আপনাদের চোখে পরছে না? মারেফতের ওযু যাদের করিয়ে নিয়ে বায়াত করা হয়েছে তাদের দাখিলা অন্তত্য সঠিক হয়েছে। নাহয় যাদের ওযুই ঠিক হয় নাই। তাদের আবার মারেফত শিক্ষা। আমি চিন্তা করার জন্য বলছি আপনাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে।
এখানে হাসান বাসরীর রাহ. এর ইতিহাস পড়ে দেখতে বলবো। মওলা আলী আ. এর খেলাফত কালে একদিন হাসান বাসরীর ইমামতীতে নামাজ আদায় করেন এবং খুতবা শুনে মওলা আলী আ. বলেন এই ছেলে সুবক্তা। এই কথা বলে মসজিদ ত্যাগ করেন। কথাটা হাসান বাসরীর কানে যায় যে আপনাকে সুবক্তা বলে গেলেন। তখন হাসান বাসরী রাহ. মুক্তাদিদের কে জিজ্ঞাসা করলেন কে সেই লোক যিনি আমাকে এই কথা বলে গেলেন। কারণ হাসান বাসরী তিনিও ছিলেন শরিয়তের খুব জ্ঞানী মানুষ। তখন মুক্তাদিগন বললেন যিঁনি আপনার সুপারিশ করে গেলেন তিঁনি আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী করমল্লাহু। এই কথা শুনে হাসান বাসরী মওলা আলীর পিছু নিলেন। মরু প্রান্তরের এক গাছের নিচে বসে মওলা আলী বিশ্রাম নিচ্ছিলেন সেখানে হাজির হয়ে হাসান বাসরী বিনিত অনুরোধ জানালেন। হে আমীরুল মু’মিনিন আপনি আমাকে ওযু শিক্ষা দিন। তখন মওলা আলী বললে তুমি তো জ্ঞানী মানুষ। হাসান বাসরী নাছোড়বান্দা মওলা আলী তখন বাধ্য হয়েই পানি আনিয়ে ওযু করিয়ে নিয়ে বায়াত করলেন। আর বর্তমান পির সাহেবগন ওযুটাকে কোন রকম হিসাবেই আনেন না। এই গেল ওযুর পর্ব থাক পির সাহেবগন অন্তরের ময়লা দুর করেন। চিন্তা করেন না নোংড়ার মধ্যে যার অবস্থান তার ভিতর কেমন হবে কেউ হয়তো সেটা খোজ করাই অবান্তর। যেহেতু ইসলামের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও জরুরী।
এবার আসি বায়াতের দিকে। বাংলাদেশে অধিকাংশ বড় বড় পির সাহেবদের দরবারে বায়াত করার অবস্থা দেখে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হয় নিজের। কেন যে তারা রাছুল সা. এর হাতে বায়াত করেন না বা মওলা আলী আ. এর হাতে বায়াত করায় না মুরিদদের সেটাই আমার বড় কষ্ট। তাদের সিস্টেম মতে খুব সহজেই রাছুল সা অথবা মওলা আলী আ. এর কাছে বায়াত করার সুযোগ আছে। আপনারা হয়তো চিন্তা করছেন আমি কি আবোল তাবোল বলছি। আমার বলাতেই ভুল ধরা পরছে। আপনারা যখন এই ভুল পথটা মেনে চলছেন আপনাদের বিবেক বাধা দিচ্ছে না তখন কি বিবেক বাড়ি রেখে গিয়ে পির সাহেবের কাছে বায়াত হয়েছিলেন এটা আমার প্রশ্ন? আপনাদের মাথায় আসে নাই কিভাবে আপনাদের বায়াত করছে যে পির সাহেব মাটির উপর নেই তার কাছে বায়াত হচ্ছেন। বাংলাদেশে বড় বড় পির সাহেবদের আস্তানায় দলে দলে গরু, ছাগল এর সাথে বিবেকহীন প্রানীও যায় বায়াত হয়। তাদের হাতে হাত দিয়ে লম্বা লাইন, চাদরের কোনা, দড়ি ধরিয়ে দিয়ে অডিও রেকড করা বায়াতের বাণী বাজিয়ে এমনকি নারী পুরুষ উভয়ের বাম স্তনের নিচে আঙ্গুল দিয়ে গুতা দিয়ে মুরিদ করেন। এবং কিছু দরবারে এমনও দেখা যায় পির সাহেবের মাজারে হাত দিয়ে বায়াত করা হয়। পিছু পিরের দরবারেও যেতে হয় না রুহানী ভাবেই বা চিঠির মাধ্যমেই বায়াত করেন। এই রীতিগুলি আল্লার কোরআনে নাই তাদের কর্ম দেখে মনে হয় আল্লা এই সকল পদ্ধুতির কথা লিখতে ভুলে গেছেন। নাউজুবিল্লাহ। আল্লা বলেই দিয়েছেন কোরআনে বায়াত কিভাবে করতে হবে। সুরা ফাতহ এর ১০ নং আয়াতে বলেছেন “যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে।”
আপনাদের মনে কেন আসে না যে মানুষ বা ওলি ধরায় নাই সে যদি বায়াত করার অধিকার রাখেন তবে মওলা আলী আ. এর কাছে কেন বায়াত হবো না? আর সবচেয়ে ভাল হয় তো আমাদের সাক্ষ্যদাতা রাছুল সা. এর হাতে বায়াত হলে তো হাশরের মাঠে নতুন করে সাক্ষ্য দিতে চিনেই ফেলবেন। আল্লা যেমন কোরআনে বলেছেন কোরআন চিন্তাশীলদের জন্য আর এটা শতভাগ সত্য। আমি বলছি মারেফতের রাস্তাটাও নাবুঝ মানুষদের জন্য নয়। কারণ নাবুঝ প্রানী ভাল করলে যেমন মন্দ করলে তেমন প্রশংসা মুখে মুখেই। গরু যতই সুন্দর হাল দিক গরুকে কেউ চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া দিবে না। কাজেই চিন্তা করার জন্য এই সব তুলে ধরছি। মনে রাখা বড় বাঞ্ছনীয় যে ওলি ধরা থেকে চলে যায় তার দ্বারা কোন মানুষকে পবিত্র করে নসিয়তের পথে চালাতে পারে না। কারণ অনুপস্থিত নেতার হাতেই যদি বায়াত হওয়া যায় তবে রাছুল সা. এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে হতে পারে? আমরা রাছুল সা. এর হাতেই বায়াত হবো।
বায়াত হবেন বায়াত হলে আল্লার পুরুষ্কারের কথা বলেছেন ৪৮:১০ আয়াতের শেষ অংশে ৪৮:১০# “যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবে”। আর যদি বায়াত ঠিক না হয় পুরুষ্কার মিলবে কিনা চিন্তা করার অনুরোধ থাকলো। কেউ কেউ মনে করতে পারেন আমি সে দরবারে বায়াত হওয়ার পর আমার পয়সা রোজগার হয়েছে বা কামাই বেড়েছে ঝামেলা শেষ হয়েছে। এখানে আমি বলবো এটাকে কামিয়াবী মনে করার কোন কারণ নাই। বায়াত আল্লা হতে বলেছে আখেরাতের জন্য দ্বীনের পথে চলার জন্য। কারণ টাকা পয়সা তো নোংড়া দেহ ব্যবসায়ীরাও রোজগার করে। কাজেই দৈনন্দিন জীবনের উন্নতি টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি হতে পারে অন্তরের সুখ আনতে পারবে না এবং আখেরাতের জন্য কিছুই করতে পারবে না। চলবে……
লেখক : ফকির উয়ায়ছী, http://www.owaisitarikah.org/
মন্তব্য চালু নেই