মন্ত্রীর মাথায় মাটির ঝুড়ি !

একেই বলে দৃষ্টান্ত। এবং বিরলও বটে। কারণ মন্ত্রীর মাথায় মাটির ঝুড়ি। তাও আবার পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ ডেনমার্কের বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী মগেনস জেনসেন (mogens jensen)। যিনি মাথায় মাটির ঝুড়ি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেখিয়ে দিলেন কাজের ক্ষেত্রে ছোট বড় নেই।

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় বরিশাল শহর উপকণ্ঠের শাহেস্তাবাদ এলাকায় চলমান একটি সড়ক সংস্কারের কাজ স্বচোখে দেখে আবেগে আপ্লুত হন।

প্রকল্পের তিন কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ কাজ করছে এলাকার অসহায় নারীরা। তাদের কাজ দেখে মুগ্ধ হন। এক পর্যায়ে নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে নিজেই নেমে যান কাজে।

আর মন্ত্রীকে মাথায় মাটির ঝুড়ি নিতে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন নারী শ্রমিক ও অতিথিরা। অনেকেই মন্তব্য করেন, এমন কাজ করতে গেলে বাংলাদেশের যে কোনো মন্ত্রীর মাথা কাটা যেত!

সূত্রমতে, ডানিডা ও এলজিইডির বস্তাবায়ন করা বাংলাদেশের একটি প্রকল্পের কাজ সরেজমিনে দেখতে বরিশালে আসেন ডেনমার্কের বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী।

প্রকল্পের রাস্তার নির্মাণ কাজ করছিলেন এলাকার অসহায় নারীরা। তাদের দেখে মুগ্ধ হন ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে মাথায় মাটির ঝুড়ি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন। এসময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ডেনমার্ক বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত হেনে ফুগেল স্কেয়ার ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মূলত কাজের অগ্রগতি তার মনপুত হওয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের শুধু ধন্যবাদই নয় প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে নিজেই নেমে গেলেন মাঠে। এক পর্যায়ে মাটির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ প্রকল্পের কাজে সহয়তা করেন।

স্থানীয় এক শ্রমিক বলেন, একজন সাদামাটা মানুষ হিসেবে তিনি সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। অথচ তিনি একজন মন্ত্রী এবং ভিনদেশি। কিন্তু তার আচরণে অনুমান করা যায়নি। শুধু মাত্র বর্ণ বিভেদে সাদা চামড়ার মানুষ হিসেবে বোঝা গেছে তিনি ভিনদেশি।

মাথায় মাটির ঝুঁড়ি নিয়ে ডেনমার্কের বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন কাজ ও সময় জ্ঞান মানুষের জীবনের জন্য বড়ই মূল্যবান। তাছাড়া কজের ক্ষেত্রে ছোট বড় পরিমাপ করার অবকাশ নেই। তার এই অভিব্যক্তি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করলেও তার সহকারী বাংলায় অনুবাদ করে শোনান। এতে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।

বলা বাহুল্য, এক ধরনের দৃষ্টান্ত এদেশের মন্ত্রীদের জন্য অনুকরণীয় বটে। তিনি যেন সেটাই ইঙ্গিত করলেন। ডেনমার্কের এই মন্ত্রী বরিশালের পরিবেশ দেখেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যাওয়ার বেলায় তিনি নিজেকে মিলিয়ে নেন সবার সঙ্গে। বললেন, ইচ্ছা করছে আরও কিছু সময় থাকতে। কিন্তু এবার নয় আবার আসবো।

এদিকে, ভিনদেশি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গাঁওগ্রামে আসছেন এমন খবর আগেই চাউর হয়ে যাওয়ায় শাহেস্তাবাদের চুড়ামন গ্রামে মানুষের ভিড় জমে। এরপর মন্ত্রীর কাজ দেখে বিস্মিত হয়ে পড়ে সবাই। এক পর্যায়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় গোটা এলাকা। যাওয়ার বেলায় মন্ত্রী হেসে হেসে বিদায় নেন। প্রতিশ্রুতি দেন ফিরে আসার।



মন্তব্য চালু নেই