বিএনপিকে একঘরে করার চেষ্টা আ’লীগের
৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের চলমান আন্দোলন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০ দলের বাইরের দলগুলোকে এ সরকারের অধীনে অন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এই উদ্দেশ্যে আসন্ন ঢাকা সিটি কপোরেশন নির্বাচনে ২০ দলের বাইরের দলগুলোকে অংশগ্রহণে প্রলুব্ধ করছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে বিএনপিকে অনেকটা একঘরে করার চেষ্টা করছে দলটি। এ জন্য ২০ দলের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, দিনে দিনে বিএনপির চলমান আন্দোলন যেমন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে, তেমনি নতুন নির্বাচনের অভিন্ন দাবি সত্ত্বেও নতুন মিত্র বানাতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাকি ১৮ দল চলমান আন্দোলনে তেমন দৃশ্যমান নয়। বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয়।
বিএনপির চলমান অবরোধ-হরতালে ২০ দলীয় জোট ছাড়া নির্বাচন বর্জনকারী অন্য দলসমূহের সম্পৃক্ত না হওয়াও সরকারের বড় সফলতা। এমনটাই মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করছে বলেই যারা ভুল বুঝে নির্বাচন বর্জন করেছিল তারা এখন বিএনপির আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে না। বিএনপি যে ভুল পথে হাঁটছে এটা তার প্রমাণ। এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী ২০ দলের বাইরের দলগুলোকে এ সরকারের অধীনে অন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ছাড়াও এর বাইরে থাকা অনেক দলই বর্জন করে। বিশেষ করে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নির্বাচন বর্জন করে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করেছিল এমন অনেক ব্যক্তি ও দলকেই আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দেওয়ার জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করা সিপিবি ও বাসদ ইতোমধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণে সিপিবি প্রার্থী ঘোষণা করেছে রুহিন হোসেন প্রিন্স ও উত্তরে আব্দুল্লাহিল কাফিকে। বাসদ দক্ষিণে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বজলুর রশিদ ফিরোজকে। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচক সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনিও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাসদ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘জাতীয় আর স্থানীয় নির্বাচন এক নয়। সব দলই তো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ’
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে এ দলগুলোর অভিন্ন দাবি ছিল, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের একই দাবি হলেও বিএনপির আন্দোলনে দলগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করেনি।
সূত্র মতে, চলমান আন্দোলন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে যেমন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। তেমনি দলগুলোও বিএনপির চলমান আন্দোলন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অনেক দলই আলাদাভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছে।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, তারা ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সরকারের দমন-পীড়নের ভয়ে অনেকেই আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বিএনপির চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারছেন না। কিন্তু আলাদাভাবে তো করছেন। কাদের সিদ্দিকী সাহেব রাস্তায় অবস্থান করছেন। এ সব তো আমাদেরই কথা। আমাদের দাবি তো অভিন্ন।’
এ বিষয়ে মতিঝিলের ফুটপাতে অবরোধ প্রত্যাহার ও সংলাপের দাবিতে অবস্থান নেওয়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, ‘প্রধান বিরোধী দলের সকল বিরোধী দলকে আস্থায় নিতে না পারাও এক ধরনের ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে বিএনপি শতভাগ ব্যর্থ। কেননা, বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হওয়ার পরেও সকল বিরোধী দলকে আস্থায় নিতে পারেনি।’
ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক এ টি এম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘আসলে বর্তমান সমস্যা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই হয়েছে। আমাদের দলের আমীর তো শুরু থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা নির্বাচনসহ শান্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছি। ৩ এপ্রিল ঢাকায় মার্চ ফর পিস কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা নতুন নির্বাচন চাই। দেশে শান্তি চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই কোনো জোটে নেই। আমরা ২০ দলেও নেই, ১৪ দলীয় জোটেও নেই। আমাদের সঙ্গে কোনো জোটের যোগাযোগও নেই।’
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সামনে আরও কত কিছু হবে। বিএনপি আর কিছুদিন পরেই একঘরে হয়ে যাবে। ’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা, সংলাপ এগুলো তো চলমান প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। আলোচনাও অব্যাহত আছে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি তো কোনো আন্দোলন করছে না। বিএনপি আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ মারছে। নারী-শিশুদের হত্যা করছে। এ জন্য খালেদা জিয়ার পাশে এখন কেউ নেই।’দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই