হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার রায়

বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বহাল

হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদের প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত এস.এম গোলাম শওকত সিরাজকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। ১০ নভেম্বর রাজবাড়ীর নির্বাচন ট্রাইবুনালের বিচারক (যুগ্ম-জেলা জজ ১ম) মোঃ সাইফুজ্জামান হিরো জনাকীর্ণ আদালতে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ১/২০১৪ নম্বর মামলায় এ রায় দিয়েছিলেন।

তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ জেলা জজ আদালতে আপীল করেন। রবিবার জেলা জজ এসএম রেজানুর রহমানের আদালত আবুল কালাম আজাদের আপীল আবেদন মঞ্জুর করে। এতে করে তার পদ বহাল থাকলো।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, অত্র নির্বাচন আপীল মামলা নং-১ রেসপনডেন্ট ( শওকত সিরাজ) প্রতিদ্বন্দিতা সুত্রে এবং ২/৩ নং রেসপনডেন্ট ( মোঃ খলিলুর রহমান ও আবুল হোসেন খান) বিরুদ্ধে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় আপীল মঞ্জুর হয়। ১/২০১৪ নং নির্বাচন ট্রাইব্যুানাল মামলা গত ১০/১১/১৪ তারিখের প্রদত্ত রায় এতদ্বারা বাতিল হয়। উক্ত রায়ের কপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদেশের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঢাকা, জেলা প্রশাসক রাজবাড়ী এবং নির্বাচন কমিশন রাজবাড়ী বরাবর প্রেরণ করার জন্য আদালতের আদেশে উলে¬খ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ তারিখে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ‘চেয়ারম্যান পদে’ আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে আবুল হোসেন খান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মোঃ খলিলুর রহমান এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এসএম গোলাম শওকত সিরাজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

উক্ত নির্বাচনে আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের ‘হলফনামা’ দাখিল করতে হয়, যাতে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংযুক্ত থাকতে হয়। আবুল কালাম আজাদ (যিনি গত টার্মেও চেয়ারম্যান থাকেন) কিন্তু চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তার দাখিলকৃত হলফনামায় তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে জি.আর-৩৭৫/২০০২, ধারাঃ ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩৪২/৩৭৯/২৮০/১০৯ দঃ বিঃ’র মামলায় অভিযুক্ত থেকে মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মহামান্য হাইকোর্টে বিচারাধীন ফৌজদারী রিভিশন-১৫১৩/২০০৯ রয়েছে মর্মে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু মামলায় কি ফলাফল এবং কেন ও কোন কারণে কোন পক্ষ ও কিসের ভিত্তিতে রিভিশনটি করেন তা অনুল্লেখ রাখা হয়। প্রকৃত পক্ষে ঐ মামলায় আবুল কালাম আজাদ বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হলেও এজাহারকারী বেগম দিল আফরোজ (বালিয়াকান্দির সোনাপুর মীর মোশাররফ হোসেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ রুহুল আমিনের স্ত্রী) রাজবাড়ীর বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী আপীল-৪০/২০০৮ দায়ের করলে মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বদলী হয়। বিগত ২৯/০৯/২০০৯ তারিখে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আসামী আবুল কালাম আজাদসহ মামলার অন্যান্য বিবাদীদের প্রত্যেককে দন্ড বিধির ৩২৩/১০৯ ধারায় ১বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১হাজার টাকা জরিমানার, জরিমানা অনাদায়ে আরও ১মাসের অতিরিক্ত কারাদন্ড প্রদান করে। উল্লেখিত দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন করে জামিনে মুক্ত থাকলেও দন্ডাদেশ বহাল থাকে।

এ কারণে হলফনামায় ‘তথ্য চেপে যাওয়ার’ অভিযোগে নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া এস.এম গোলাম শওকত সিরাজ বাদী হয়ে উলে¬খিত মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আবুল কালাম আজাদের নির্বাচিত থাকা অবৈধসহ এস.এম গোলাম শওকত সিরাজকে চেয়ারম্যান ঘোষণার প্রার্থনা জানানো হয়।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ তারিখের শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবুল কালাম আজাদ(মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে ৪১হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম শওকত সিরাজ(আনারস) পেয়েছিলেন ২৭হাজার ৩৪৭ ভোট। নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী মোঃ আবুল হোসেন খান(দোয়াত কলম) পেয়েছিলেন ২০ হাজার ৯০৮ ভোট। এ ছাড়াও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ খলিলুর রহমান খান (হেলিকপ্টার) পেয়েছিলেন ১০হাজার ৫৭৭ভোট।



মন্তব্য চালু নেই