প্রেমিক খুন-প্রেমিকার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

উজিরপুরে পুলিশ ও সাংবাদিক ম্যানেজের নামে গণচাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ

প্রেমিক সুখদেব মিস্ত্রিকে খুনের ঘটনায় প্রেমিকা মিতু সমদ্দারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগে ৪টি বসত ঘর,মন্দির ও ৩টি কুরের পালা সম্পূর্ণ ভস্মিভূত এবং নারীদের ওপর নগ্ন হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে রেহাই পেতে, সংবাদ প্রকাশে বিরত রাখতে পুলিশ ও সাংবাদিক ম্যানেজের নামে গণচাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জেলার উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ী গ্রামের।

সরেজমিন হারতা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ওই গ্রামের সুপেন মিস্ত্রির কলেজ পড়ুয়া পুত্র সুকদেব মিস্ত্রি (২২) হত্যাকান্ডের সাথে প্রেমিকা মিতু সমদ্দার ও তার পরিবার জড়িত রয়েছে বলে গ্রামের একটি প্রতারক চক্র গ্রামবাসীদের মধ্যে অপবাদ রটিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুকদেবের স্বজনসহ শত শত গ্রামবাসী গত ৩ মার্চ ৯ টা থেকে বেলা ১১ পর্যন্ত নারকীয় তান্ডব চালিয়ে প্রেমিকা মিতু, তার বোন কনকলতা, নমিতা, মা আলোমতির ওপর পুলিশের উপস্থিতিতে নগ্ন হামলা চালিয়ে ও বৃদ্ধ পিতা দশরথ সমদ্দার, নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া ভাই সজলকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

এসময় সুযোগ সন্ধানী ওই প্রতারক চক্রটি দিনমজুর দশরথ সমদ্দারের বসত ঘরে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে ৪ বসত ঘর,বাড়ির মন্দির ও ৩টি কুরের পালায় অগ্নিসংযোগ করে,এতে ৪ টি ঘর ও মন্দির সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়। একপর্যায়ে থানা পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রেমিকার বাড়িতে নারকীয় তান্ডব, নগ্ন হামলা ও ৪টি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মিতুর মা আলোমতি সমদ্দার (৪৫) বাদি হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৬’শ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় ওইদিন রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে তিনি তাদের ১৫/১৬ লাখ টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে কলেজ ছাত্র সুকদেব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে প্রেমিকা মিতু সমদ্দারসহ তার বোন কনকলতা, নমিতা ও তার বৃদ্ধ বাবা দশরথ সমদ্দারের নামে নিহত সুকদেবের বাবা সুপেন মিস্ত্রি বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

উভয় মামলায় পুলিশ গুরুতর আহত মিতু, তার দু’বোন ও বৃদ্ধ বাবাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করেন।
থানায় বসে প্রেমিকা মিতু সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, সুকদেবকে কোন প্রভাবশালী মহল হত্যা করে তার দায়ভার আমাদের ওপর চাঁপিয়ে দিয়ে অবৈধভাবে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে। ওইমহলটি পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর নগ্ন হামলা চালিয়ে বাড়িতে লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করেছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিতুর মায়ের দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা ৬’শ জনকে আসামি করার ফলে হারতা ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাবশালী এক ইউপি সদস্যর (মামলার আসামি) নেতৃত্বে নিরিহ গ্রামবাসীদের মামলা থেকে রেহাই পাইয়ে দেয়ার কথা বলে পুলিশ ও প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখার জন্য সাংবাদিক ম্যানেজের নামে গত দু’দিন থেকে প্রতিজনের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে গণচাঁদা উত্তোলণ শুরু করেছেন।

এ ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএ বলেন, যতোবড় প্রভাবশালী মহলই হোক না কেন, এ মামলা থেকে কোন দোষী ব্যক্তিই রেহাই পাবেনা। তিনি আরো বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিরা যাতে হয়রানীর স্বীকার না হয়, সেজন্যও পুলিশী তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, জামবাড়ী গ্রামের সুপেন মিস্ত্রির পুত্র সুকদেব মিস্ত্রির (২২) সাথে একই গ্রামের দিরমজুর দশরথ সমদ্দারের কন্যা কলেজ ছাত্রী মিতু সমদ্দারের (১৯) দীর্ঘদিন থেকে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো।

গত ৩ মার্চ সকালে প্রেমিকা মিতুদের বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বের বাগান থেকে সুকদেবের লাশ উদ্ধার করেছিলো গ্রামবাসী।

এ ঘটনায় কতিপয় সুবিধা বাদিদের প্ররোচনায় শতশত গ্রামবাসী সুখদেবকে হত্যার মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে দিয়ে মিতু সহ তার অসহায় পরিবারের ওপর নগ্ন হামলা চালিয়ে তাদের বসত ঘড় সহ ৪ টি ঘড়,মন্দির ও ৩টি কুরের পালা আগুন দিয়ে সম্পুর্ন ভস্মিভুত করে দেয়।



মন্তব্য চালু নেই