এবার বিএনপির দুই টার্গেট !
বিএনপির নিশানা এবার রাজধানী অবরোধ-হরতালের ফাঁকে ঢাকায় দুটি সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সমাবেশের অনুমতি না মিললে প্রথমে ঢাকা ঘেরাও ও পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত হতে পারেহাসান মোল্লা টানা দুই মাসের আন্দোলনের পর কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনার চিন্তা করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এবার ঢাকাকে কেন্দ্র করে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে অবরোধ-হরতালের ফাঁকে ঢাকায় পরপর দুটি সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সমাবেশের অনুমতি না মিললে প্রথমে ঢাকা ঘেরাও ও পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে টানা দুই মাস আন্দোলন করে আসছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সঙ্কট নিরসনে চলছে দেশি-বিদেশি নানা উদ্যোগ। জাতিসংঘও সঙ্কট নিরসনে তাগাদা দিয়ে আসছে। এসব নানামুখী চাপের পরও সরকার আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকারের এই অনমনীয়তা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে ভাবনা থাকলেও চলমান আন্দোলনে কোনো ফল ছাড়া ঘরে না ফেরার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে তারা। এমন অবস্থায় আন্দোলনে নতুনত্ব এনে সফলতা পেতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। তাই ঢাকাকে টার্গেট করেই আন্দোলনের নতুন ছক সাজানো হচ্ছে।
২০ দলীয় জোটের নেতারা জানান, দুই মাসের কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট তারা। তাদের মতে, টানা আন্দোলনের পরেও ঢাকা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে বিরোধী জোট আন্দোলন বন্ধ করবে এমনই ভেবেছিল সরকার। কিন্তু তা হয়নি। সরকারের জুলুম-নির্যাতন জয় করে আন্দোলন চলছে। মার্চ মাসজুড়েই হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি চালানোর এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নেতারা মনে করছেন, বিতর্কিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন প্রায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছিল। কিন্তু ঢাকার নিয়ন্ত্রণের আগমুহূর্তে আচমকা আন্দোলন বন্ধ করে দেয়ায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এবারো সারাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এবার আগের মতো ভুল আর করা হবে না। কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন বন্ধ হবে না। রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিতে আগামী সপ্তাহে আন্দোলনে নতুনত্ব আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুর দিকেই ঢাকায় বিএনপির শোডাউনের পরিকল্পনা থাকলেও গত ৪ মার্চ খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা এবং গ্রেপ্তারের একটি সম্ভাবনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করছে না বিরোধী জোট। এখন একটাই চিন্তা ঢাকায় আন্দোলন সফল করা। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে অবরোধের মধ্যেই ঢাকায় একটি সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাওয়া হবে। সমাবেশ করার জন্য শুক্র ও শনিবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেদিন হরতালের কর্মসূচি দেয়া হবে না।
সমাবেশের অনুমতি দিলে প্রথমে খালেদা জিয়াকে ছাড়া শুধু সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে সমাবেশ করে ঢাকায় শোডাউন করবে ২০ দল। ওই সমাবেশের এক সপ্তাহ ব্যবধানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে আরেকটি সমাবেশ করা হবে। তাতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে ভিন্ন কৌশলে এগোবে আন্দোলন। তা হচ্ছে, প্রথমে ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হবে। সারাদেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঢাকাকে কার্যকরী অর্থেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। এ কর্মসূচির সফলতার ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হবে।
আসন্ন কর্মসূচির বিষয়ে নাম প্রকাশ না শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, আন্দোলনে নতুনত্ব আনার কথা ভাবা হচ্ছে। ঢাকা ঘিরেই আসবে সেই নতুনত্ব। সারাদেশের তৃণমূল নেতারা মাঠে নেমে আন্দোলন প্রায় সফলের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। এবার ঢাকার নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে তা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, টানা দুই মাস যেভাবে দেশ চলছে তা খুবই দুঃখজনক। টানা আন্দোলনের পরেও সরকার তাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করছে না। অন্যদিকে সরকার বারবার সবকিছু স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। গণতান্ত্রিক এই আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার কথা দেশনেত্রী জানিয়েছেন। আন্দোলনে পুরোপুরি সফলতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে কর্মসূচিতে নতুনত্ব আনা হতে পারে।
একই বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমন হবে, ভেবেছিল সরকার। তা হয়নি। আর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলেও আন্দোলনের প্রভাব পড়বে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। তখন আন্দোলন আরো জোরদার ও বেগবান হবে। আন্দোলন তার আপন গতিতেই চলবে। সফল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে কর্মসূচিতে নতুন কিছু যোগ হবে।-যায়যায়দিন
মন্তব্য চালু নেই