রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হলে সিরিয়ার মতো পরিস্থিতির শঙ্কা
দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে নাগরিক সমাজ ও বিদেশি কূটনৈতিকদের উদ্যোগ ইতিবাচক ফল দিতে পারে। তবে ক্ষমতাসীন সরকার ও বিরোধীদলগুলো আলোচনায় বসে চলমান সংকটের সমাধান না করলে দেশে সিরিয়ার মতো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠানে এ শঙ্কার কথা উঠে আসে। রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির ১০৭তম পর্ব হয়। এতে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল অব. রুহুল আলম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাসিম আখতার হোসেন এবং পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
অনুষ্ঠানে দর্শকদের একজন জানতে চান- বাংলাদেশ কি খুব দ্রুত সিরিয়ার মতো রাষ্ট্রে পরিনত হতে যাচ্ছে?
উত্তরে ড.আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সোমালিয়া, সিরিয়ার মতো দেশগুলোর পরিস্থিতি কিন্তু এক সময় স্বাভাবিক ছিল। গণতন্ত্র সুসংহত না হলে বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে। তবে দেশ যেন সেদিকে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। (রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে) কীভাবে সংলাপ শুরু হতে পারে সেটি দেখতে হবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হোমোজিনিয়াস (সজাতি) দেশ। আমরা বিএনপি-আওয়ামীলীগ করা নিয়ে যদি নিজেদের ভাগাভাগি’র দিকে নিয়ে না যাই তবে সেরকম সহিংস পরিস্থিতি হবে না।”
রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, “সোমালিয়া বা সিরিয়ার পরিস্থিতির দিকে যেতে হবে না। তার আগেই সমাধান হবে আশা করি। আমাদের আন্দোলন কিন্তু অহিংস। বিএনপিজোট পেট্রলবোমার হামলাকে সমর্থন করে না, মদদও দেয় না। এসব হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে সরকারকে আমরা সাহায্যও করতে পারি। তাদের বিচারের আওতায় আনা ও নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি সিরিয়া, সোমালিয়ার মতো হওয়ার শঙ্কা নেই। এ দেশে ধর্মীয় ক্লেশ নেই। সহিংস পরিস্থিতি থেকে উন্নতি হয়নি এটা ঠিক নয়। দেশের পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক।”
তিনি বলেন, “আলোচনায় যেতে হলে নীতি-নৈতিকতার পথে আসতে হবে। আগামীকালই যদি বিএনপি গণতান্ত্রিক পথে ফিরে এসে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করে তবেই মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”
নাসিম আখতার হোসেন বলেন, “যুদ্ধ নয়, বাংলাদেশে যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়েছে। ক্ষমতায় যেতে দুই দলই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের পথে এসেছে। জনগণ কিন্তু দ্রুত বুঝে গেছে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরে আসছে। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপলব্ধি রাজনীতিবিদদের মধ্যে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”
অনুষ্ঠানে আরেকটি প্রশ্ন ছিল- চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে বিদেশী কুটনীতিকরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
উত্তরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “প্রচেষ্টা তো হতেই পারে। নাগরিক সমাজের চেষ্টা যে বিফল হয়ে গেছে এমনটা নয়। কূটনৈতিকদের প্রচেষ্টাসহ সবগুলো উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। এতে কোনো ফল হতে পারে। তবে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করা উচিত।”
তিনি বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক দল বলেই বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের আহ্বান জানানো হয়েছিলো। তবে এখন তাদের আচরণ সন্ত্রাসীদের মতো বলেই তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে।”
রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, “আমরা গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যে আছি। বিদেশিরা সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগি। তারা আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। সমস্যা যখন সৃষ্টি হয়েছে এর সমাধানও হবে। সমাধান করতে আমরা বাধ্য হবো। কারণ জনগণের জন্যই রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন।”
ড. নাসিম আখতার হোসেন বলেন, “কূটনৈতিকদের আলোচনা বা দেশের ভেতরে আলোচনা যে কোনোভাবেই সফল হওয়া সম্ভব। আমরা একটি বৈশ্বিক পরিবেশে বাস করছি।…বর্তমানে যে ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলছে, সেখানে কাউকে বিজয়ী হতে হবে এমন একটা ব্যাপার চলছে। এই হার-জিতের খেলা বন্ধ করতে হবে। বিদেশী উদ্যোগ হলেও সাড়া দেয়া উচিত।”
ড.আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কোনো উদ্যোগের প্রস্তাব নাকচ হলে পরে তা আবার কার্যকর হতেও পারে। নাগরিকদের উদ্যোগ এখনই ব্যর্থ বা সফল বলার সময় আসেনি। আমাদের একটা টেকসই নির্বাচনব্যবস্থা দরকার। চেক এন্ড ব্যালেন্সের মধ্যে দিয়ে একটি নির্বাচন হওয়া উচিত। দেশের মানুষের সঙ্গে কূটনৈতিকরাও উদ্বিগ্ন। যে পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছি আমরা, তাতে যে সোমালিয়া, সিরিয়া বা লিবিয়া হবোনা তা কে জানে?”
মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থাকছে, তবে অভিভাবক চাইলে ১৬ বছর বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেয়া যাবে বলে আইনের যে খসড়া তৈরী করা হয়েছে, সে বিষয়েও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়।
বেশিরভাগ আলোচক ও দর্শক মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮’র পক্ষে মত দেন।
নাসিম আখতার হোসেন বলেন, “একটি মেয়ের পরিপূর্ণ শারিরীক বিকাশ হয়না বলেই ১৮ বছরে বিয়ের নিয়ম ছিল। এখন আবার ১৬ বছরের বিষয়টি রাখা হলো। রাষ্ট্র কি করে এমন কাজ করে?”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আঠারো বছরই ভালো ছিলো। আবার অভিভাবকদের দিক থেকে একটা চাপের কারণে ষোল করা হয়েছে। তবে, মেয়ে যদি বিয়ে করতে রাজি না হয় তবে, বাবা-মা বিয়ে দিতে পারবে না।
অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয়ে দর্শকরা সরাসরি আলোচকদের কাছে প্রশ্ন বা মতামত দিতে পারেন।
মন্তব্য চালু নেই