দালাল, ২টি গাড়ি সহ ১০৮ জন রোহিঙ্গা আটক, আহত-১৫

উখিয়ায় রোহিঙ্গা পাচারকারী দালালদের সাথে বিজিবির সংঘর্ষ, সুবেদার গুলিবিদ্ধ

কক্সবাজাররে উখিয়ার বালুখালী পানবাজার এলাকায় মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ১০৮ রোহিঙ্গাকে আটকের জের ধরে বিজিবি সদস্যদের উপর গুলি বর্ষণ করেছে স্থানীয় দালাল চক্র। এ সময় বিজিবির সুবেদার ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বিজিবি আত্মরক্ষার্থে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে উখিয়ার বালুখালীর পানবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় আহত বিজিবির সুবেদারকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিজিবি সহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অতিরিক্ত বিজিবি ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবি সূত্র জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ৩শতাধিক রোহিঙ্গা বহনকারী ৫টি চাঁদের গাড়ী উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের দিকে আসার সংবাদে কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের উখিয়ার বালুখালী পানবাজার বাস ষ্টেশনে বালুখালী বিজিবি বিওপির সদস্যরা অবস্থান নেয়।

শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে রোহিঙ্গা বহনকারী ৩টি চাঁদের গাড়ি আটক করে বিজিবি সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালকদের বললে স্থানীয় বালুখালী জুমের ছড়া গ্রামের চাঁদের গাড়ি চালক বাদশা মিয়া বিজিবির সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

এক পর্যায়ে আটক ৩টির মধ্যে ২টি গাড়ি রোহিঙ্গাসহ বিজিবি ক্যাম্পে রওনা দিলেও বাদশা মিয়া গাড়িটি রাস্তার উপর এলোপাতাড়ি করে রাখে এবং গাড়ি থেকে নেমে বিজিবি সদস্যদের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে উপস্থিত থাকা চাঁদের গাড়ির মালিক একই গ্রামের বিএনপি নেতা শাহ আলমগীর এগিয়ে এসে বিজিবির কাছ থেকে চালককে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং ছিনিয়ে নেয়। ততক্ষণে গাড়িতে থাকা অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। স্থানীয় রোহিঙ্গা পাচারকারী চক্র জড়ো হয়ে বিজিবি সদস্যদের ঘেরাও করে রাখে। ততক্ষণে বালুখালী বিজিবি ক্যাম্প থেকে ১০/১২ জন বিজিবি সদস্য এসে দালাল চক্রের কবলে পড়া বিজিবি সদস্যদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়।

পালংখালী ইউনিয়নের স্থানীয় বালুখালী ২নং ওয়ার্ড মেম্বার ফজলুল কাদের ভুট্টো বলেন, ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং আমি সহ স্থানীয় কিছু লোক আরো বিশৃংখলার আশংকায় উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান বিজিবি ও স্থানীয় রোহিঙ্গা পাচারকারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে বিজিবি ও পুলিশ অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

স্থানীয় দালাল চক্রের সাথে লোকজন জড়ো হয়ে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উচ্ছৃংখল লোকজনের ছোড়া গুলি ও ইট পাটকেলের আঘাতে বালুখালী বিজিবি সুবেদার ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। বিজিবি ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করলে জনতা ছত্র ভঙ্গ হলে গেলে রোহিঙ্গা পাচারকারীর দালাল বিএনপি নেতা শাহ আলমগীরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বালুখালী পানবাজার এলাকার স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য গফুর উল¬াহ, বদিউর রহমান, আব্দুস ছবি সহ অনেকে বিজিবির উক্ত বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করে বলেন, বিজিবি সদস্যরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের ছেড়ে দিয়ে মহাসড়ক ও হাটবাজারে রোহিঙ্গা আটকের নামে অহেতুক নিরীহ লোকজনের উপর প্রায় সময় অত্যচার নির্যাতন চালিয়ে থাকে।

তদ্রুপ গতকাল নির্যাতনের অংশ হিসেবে স্থানীয় গাড়ি চালক বাদশা মিয়াকে মারধর করায় স্থানীয় লোকজন ক্ষেপে যায়। তারা বলেন, আটক রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে নয় বরং টেকনাফের হোয়াইক্যং কাটাখালী এলাকায় শাহ আব্দুল কাদের ফকির সাহেবের বার্ষিক ওরশ মাহফিল শেষে গতকাল তারা কুতুপালং ক্যাম্পে ফিরছিল। স্থানীয় উচ্ছৃংখল জনতা বিজিবি উপর ইট পাটকেল ছোড়ার কথা তারা স্বীকার করলেও গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করেন।

ঘটনার পর থেেক ওই এলাকা পুলিশি ও বিজিবি সদস্যরা দালালদের আটকের জন্য অভিযান শুরু করেছে। কক্সবাজার ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল খন্দাকার সাইফুল আলম বলেন, গোপনে কোন এক সময় এসব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসে দালালরা। এদের পানবাজার এলাকায় ২ টি জীপ গাড়িতে তুলে কুতুপালং ক্যাম্পে পাচারের সময় বিজিবি সদস্যরা ১০৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দালালরা বিজিবি সদস্যদের উপর হামলা করে। তিনি বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় দালাল চক্র কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের চত্রছায়ায় মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পাচার সহ নানা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।

আটক রোহিঙ্গা পাচারকারী দালাল শাহ আলমগীর স্বীকার করেছেন স্থানীয় পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা গফুর উদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে গতকাল বিজিবি সদস্যদের উপর তারা এ হামলা চালায় বলে বিজিবি অধিনায়ক জানান।

পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী এ ঘটনার সাথে তার কোন সংশি¬ষ্টতা নেই এবং তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবী করেন। আটক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের উপর হামলা সাথে জড়িত ও রোহিঙ্গা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য,প্রায় ২ মাস ধরে চলমান দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির সুযোগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময়ে বিজিবি অনুপ্রবেশকালে প্রায় ২২ শ’ রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমার ফেরত পাঠিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই