খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা কোথায়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি দুর্নীতি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ১০ দিন পরও জারিকৃত পরোয়ানার হদিস জানা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বলছেন গ্রেফতারি পরোয়ানা কোথায় আছে সেটা তারা জানেন না।

আইনজীবী ও কোর্ট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কারও বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে নিয়ম অনুযায়ী দুটি পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট থানায় সেই পরোয়ানা পৌঁছানো হয়। প্রথমত, পরোয়ানা জারিকারী আদালত নিজের জারিকারক দিয়ে সেটি থানায় পৌঁছান। নতুবা পুলিশের ডিসি প্রসিকিউশনের মাধ্যমে থানায় পাঠানো হয়।

আদালতের আদেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট দুটি থানায় পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ১০ দিন পরও থানা দুটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন তাদের কাছে সেটি পৌঁছেনি।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আট দিনের মাথায় আবারও ওই আদালত বসলেও গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে জানতে চাননি। বিষয়টি আদালতের নজরে আনেননি দুদকের আইনজীবীরাও। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। একই সঙ্গে গুলশান ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানোর আদেশও দেন আদালত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান  বলেন, ‘কাগজ না পৌঁছালে তো আমাদের কিছু করার থাকে না। পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে পৌঁছালে আমাদের অবস্থানের কথা জানাতে পারব।’

আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠাতে, পুলিশ বলছে পরোয়ানা পায়নি, ১০ দিনেও ঢাকার মধ্যে একটি কাগজ একটি সরকারি দফতর থেকে আরেকটি দফতরে না পৌঁছানো কি বিশ্বাসযোগ্য?

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। মাঝে-মধ্যে সরকারি কাজে এমনটা হয়।’

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিশেষ জজ আদালতের একজন বেঞ্চ সহকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি গাড়িতে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছে দিয়ে আসেন। ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছেছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে খবর পরিবেশন হয়। এরপর, দায়িত্ব স্বীকার করে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্য না পাওয়ায় বদলে যায় গণমাধ্যমের খবরও।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে  বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা আমার হাতে আসেনি। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।’

আদালত আদেশ দিয়েছেন পরোয়ানা থানায় পৌঁছে দিতে, গত ১০ দিনেও তা আপনার হাতে আসেনি বলছেন, এর কোনো খোঁজ আপনারা নিয়েছিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো আইনজীবী নই। আমার কাছে কাগজ আসলে তখন বলতে পারব। এর (কাগজের) খবর নেওয়া আমাদের কাজ নয়।’

জানতে চাইলে ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমানও গ্রেফতারি পরোয়ানা পাননি বলে জানান।

এ বিষয়ে বিশেষ আদালতের বেঞ্চ সহকারী আরিফুল ইসলামের সঙ্গে  পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘কিছইু জানি না’বলে জানান। আদালতের নির্দেশে পরোয়ানা কোন প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয়েছে তা জানতে চাইলে আরিফুল ‘কিছুই বলতে পারব না’বলে উত্তর দেন।

তবে আদালতের নির্দেশের পর (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি গাড়িতে করে রায়ের কপি দুই থানায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের একজন কর্মচারী যান বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে আরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা মাঝে-মধ্যে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করি। কিন্তু এ বিষয়ে (পরোয়ানা) আমি কিছু বলতে পারব না।

পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আনিসুর রহমান  বলেন, ‘খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত আদালতের কোনো আদেশ আমার কাছে আসেনি। বিষয়টি আমার জানা নেই।’

দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জানান, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে আমাদের জানা থাকার কথা না। এটা কীভাবে কী হবে সেটা জানবে কোর্ট অথবা ডিসি প্রসিকিউশন।’ তবে দুদকের এ আইনজীবী জানান, অস্বাভাবিক দেরি হলে আদালত নিজে থেকেই পরোয়ানার বিষয়ে জানতে চাইতে পারেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানার কাগজ বিষয়ে সবকিছু জানে সরকার। আমাদের কিছুই জানা নেই।’

প্রসঙ্গত, ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা এই মামলাগুলোর বিচারকাজ চলছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ৫ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন আদালত।



মন্তব্য চালু নেই