তারেক এখন ‘পাসপোর্টবিহীন’

খালেদা জিয়ার ছেলে ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানের বাংলাদেশি পাসপোর্টটি বৈধতা হারিয়েছে।

তিনি এখন শরণার্থী হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছে বলে ঢাকা ও লন্ডনের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। আর এই কারণেই দুই মাস আগে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তিনি।

ঢাকা ও লন্ডনের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে যাওয়ার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তার পাসপোর্ট সর্বশেষ নবায়ন করেন। তার মেয়াদ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছে।

এরপর তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করতে কখনোই লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেননি বলে দূতাবাস থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্র নিশ্চিত করেছে, তারেক ব্রিটিশ পাসপোর্টও পাননি।

“সম্ভবত তিনি ব্রিটিশ কোনো ডকুমেন্ট নিয়ে সেখানে রয়েছেন। আর ওই ডকুমেন্টে তাকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, আর তা নিয়ে তিনি অন্য দেশে যেতে পারবেন না,” বলছে ওই সূত্র।

ধারণা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় গত ২৪ জানুয়ারি ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর এই কারণেই তারেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখন কুয়ালালামপুরে যেতে পারেননি।

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলাসহ ডজন খানেক মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে ফিরিয়ে আনতে অনেক দিন ধরেই তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

লন্ডনের সূত্র  নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের বারংবার আহ্বানে যুক্তরাজ্য সরকারও তারেকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে; যদিও চিকিৎসাকেই অবস্থানের কারণ হিসেবে দেখিয়ে আসছেন তিনি।

২০০৮ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাড়ি দিলেও সেখানে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করে আসছিলেন।

মামলায় পলাতক থাকা তারেকের বিভিন্ন বক্তব্যে বিতর্কের ঝড় বইলে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের আদালত তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

১৯৫৮ সালে গৃহীত শরণার্থী সনদের ওপর ভিত্তি করে তারেকের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কথা যুক্তরাজ্যের কাছে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ সরকার।

ওই সনদ অনুযায়ী শরণার্থী যে দেশে থাকে সেখানে কোনো রাজনৈতিক তৎপরতায় অংশ নিতে পারে না।

“তারেককে দেশে ফেরত নিতে সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছে,” বলেছে লন্ডনের ওই সূত্র।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন তারেকের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব কার্যালয়ে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর কোনো আনুষ্ঠানিক ‍উত্তর না দিলেও তারেকের বিষয়টি সম্পর্কে হাই কমিশনকে জানিয়েছে। তারা বলেছে, আইনগত বাধা থাকায় কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য তারা দিতে পারছে না।

লন্ডন হাই কমিশন থেকে ঢাকাকে জানানো হয়েছে, গত দুই মাসে তারেক তার চলাফেরা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। কোকোর গায়েবানা জানাজা ছাড়া আর কোথাও তাকে দেখা যায়নি।

ওই সূত্র বলেছে, “সম্ভবত আমাদের চিঠির পর ব্রিটিশ সরকার তাকে (তারেক) রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বারণ করেছে।”

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, তারেককে ফেরতের বিষয়ে দেওয়া চিঠির কী জবাব দেবে যুক্তরাজ্য, এখন তার অপেক্ষায় রয়েছে সরকার এবং তা শিগগিরই আসবে বলে আশা করছেন তারা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর



মন্তব্য চালু নেই