বাংলাদেশের রেকর্ডময় জয়

রাত জেগে যাদের খেলা দেখার অভ্যাস নেই, তারা হয়তো সকালে টিভি সেটের সামনে বসে অথবা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে থমকে গেছেন!

থমকে যাওয়ারই কথা! কারণ ওয়ানডের পুঁচকে স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছে ৩১৮ রান! মাশরাফির আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান করে স্কটল্যান্ড। সকালে স্কোরশিটটা দেখে মেজাজ হারানো স্বাভাবিক। কিন্তু চার ঘণ্টা পরের স্কোরশিটটি দেখলে গর্বে বুকটা ভরে যাওয়ার কথা।

স্কটল্যান্ডের ৩১৯ রানের টার্গেট বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের সামনে। ইনিংসের ১১ বল বাকি থাকতে স্কটিশদের ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে মাশরাফিরা। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের নেলসনের মাঠে রেকর্ডময় এক জয় সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে মাশরাফিরা। সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের; রয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত (তামিম) ইনিংসের রেকর্ড। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডও (তামিম-রিয়াদ)। নেলসনের মাঠে তাই অনেক স্বস্তির এক জয় সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। সঙ্গে আসরের কোয়ার্টার ফাইনালের পথটা আরেকটু মসৃণ হয়েছে বাংলাদেশের।

জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ৩১৯ রানের টার্গেট দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। দলীয় ৫ রানে আউট হয়েছেন এনামুল হক বিজয় ইনজুরিতে পড়ায় ওপেন করতে নামা সৌম্য সরকার। তবে তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দ্বিতীয উইকেট জুটিতে শক্ত হাতেই হাল ধরেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৮তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তামিম। ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন রিয়াদও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ১২তম হাফসেঞ্চুরি। এ জুটিতে ১৩৯ রান উঠেছে। বিশ্বকাপে যা বাংলাদেশের জন্য যে কোনো উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ব্যক্তিগত ৬২ রানে স্কটিশ বোলার ওয়ার্ডল’র বলে আউট হয়েছেন রিয়াদ। তিনি আউট হওয়ার পর মাঠে নেমেছেন মুশফিকুর রহিম। ৩১.২ ওভারে তামিম সাজঘরে ফিরে যান ব্যক্তিগত ৯৫ রানে। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তে না পারলেও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটি তিনি ঠিকই গড়েছেন। আগের রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের করা ৮৭ রান।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০তম হাফসেঞ্চুরি সঙ্গী হয়েছে সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের। তবে ৩৮তম ওভারের শেষ বলে ব্যক্তিগত ৬০ রানে আউট হয়েছেন তিনি। ৩৮ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছে ২৪৭ রান। বাকি কাজটা নির্বিঘ্নেই সেরেছেন সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান রুম্মন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে। আর রুম্মন অপরাজিত ছিলেন ৪২ রানে। ম্যাচের ১১ বল বাকি থাকতে তাই স্কটিশদের দেওয়া ৩১৯ রানের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ৬ উইকেট হাতে রেখেই। সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ডটাও সমৃদ্ধ করে নিয়েছে মাশরাফিরা। এর আগে ৩১৩ রান চেজ করে জয়ের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। টস হেরে আগে ব্যাটিং করা স্কটিশরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রান দাঁড় করিয়েছে। স্কটল্যান্ডের এই সংগ্রহের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন ওপেনার কেইল কোয়েটজার। প্রথম স্কটিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। কোয়েটজার খেলেছেন ১৩৪ বলে ১৫৬ রানের ইনিংস। এ ছাড়া স্কটিশ অধিনায়ক প্রেস্টন মমস্যান করেছেন ৩৯ রান। টু ডাউনে নামা ম্যাট ম্যাকহানের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৫ রান।

বাংলাদেশের পক্ষে পেসার তাসকিন আহমেদ ৩টি উইকেটে নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে মাঠে নামা অলরাউন্ডার নাসির হোসেন নিয়েছেন ২টি উইকেট।

টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতেই যেন দিনের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে স্কটিশ ওপেনার কালাম ম্যাকলয়েডের উইকেট তুলে নিয়েছেন মাশরাফি। স্কটল্যান্ডের সংগ্রহ তখন মাত্র ১৩ রান। বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়ে হ্যামিস গার্ডিনারকে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। ৯.৫ ওভারে দলীয় ৩৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে স্কটল্যান্ড। কিন্তু শুরুর এই সাফল্য ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। কোয়েটজারের ব্যাটে হতাশ হতে হয়েছে মাশরাফিদের।

ইতিহাসে ঢুকে গেছেন স্কটিশ ওপেনার কেইল কোয়েটজার। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মঞ্চে স্কটল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি; খেলেছেন ১৩৪ বলে ১৫৬ রানের ইনিংস। সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে স্কটিশদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডটিও ভেঙেছেন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল গ্যাভিন হেমিল্টনের । ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই রেকর্ড করেছিলেন হেমিল্টন। তৃতীয় উইকেটে ম্যাকহানের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়েছেন কোয়েটজার। এরপর অধিনায়ক মমসেনের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৪১ রান যোগ করেছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের নেলসনের সেক্সন ওভালে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হয় ম্যাচটি। সর্বশেষ ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দলে ১টি পরিবর্তন হয়। মুমিনুলের জায়গায় সুযোগ পেয়েছেন নাসির হোসেন।

উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছে একবার। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে একবারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশ ২২ রানের জয় পেয়েছিল। ১৬ বছর পর আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ের মুকুট বাংলাদেশের মাথায় শোভা পেয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

স্কটল্যান্ড : ৩১৮/৮, ওভার ৫০ (কোয়েটজার ১৫৬, মমসেন ৩৯, ম্যাকহান ৩৫; তাসকিন ৩/৪৩, নাসির ২/৩২)

বাংলাদেশ : ৩২২/৪, ওভার ৪৮.১, (তামিম ৯৫, মাহমুদউল্লাহ ৬২, মুশফিক ৬০, সাকিব ৫২*, সাব্বির ৪২*; ডেভি ২/৬৮)

ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী (১১ বল বাকি থাকতে)

ম্যাচসেরা : কেইল কোয়েটজার (স্কটল্যান্ড)

পয়েন্ট : বাংলাদেশ ২, স্কটল্যান্ড ০



মন্তব্য চালু নেই