সব আয়োজন ছিল, তবুও তিনি এলেন না

আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের দেওয়া শর্ত অনুয়ায়ী সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও দুর্নীতির দুই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানিতে আদালতে হাজির হলেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদ্দারের আদালতে শুরু হয়।

এদিকে, আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত জজকোর্ট এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এর আগে জামিন সাপেক্ষে কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে বিএনপির চেয়ারপারসন বুধবার আদালতে যাবেন বলে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি সব সময়ই শ্রদ্ধাশীল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি আমরা এখনো হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে।’

বুধবার সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ‘খালেদা জিয়ার মামলা বিশেষ আদালত-৩ থেকে অন্য কোনো বিশেষ আদালতে নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে যে রিট করা হয়েছে, তার শুনানির জন্য অপেক্ষায় আছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে আজ তিনি আদালতে হাজির হবেন না।’

নানা কারণ দেখিয়ে এই দুই মামলার শুনানির নির্ধারিত ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৬ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। মাত্র সাতদিন হাজির হন তিনি।

এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি এ মামলার আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

একই সঙ্গে কোনো আসামি না থাকায় মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা বাতিল করে ৪ মার্চ দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ মামলার আসামি তারেক রহমানকে হাজির করানোর আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে চিকিৎসার কথা বলে জামিন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন তারেক রহমান। এখন তিনি সুস্থ আছেন বলে আমরা জেনেছি। তাই মামলার বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাকে আদালতে হাজির করানো প্রয়োজন।’

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াকে ৪ মার্চ অবশ্যই তারেক রহমানকে হাজির করানোর আদেশ দেন আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার প্রাক্তন সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার প্রাক্তন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার প্রাক্তন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। মামলায় হারিছ চৌধুরী শুরু থেকেই পলাতক।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। গত বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে মামলা দুটিতে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ-৩-এর বিচারক বাসুদেব রায়।



মন্তব্য চালু নেই