খালেদার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূতদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক অপেক্ষামান সাংবাদিকদের কাছে একথা জানান।

অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মানবাধিকার. গণতন্ত্র ও অথেনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। দলগুলোর মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। গত ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক আমাদের হয়েছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা।’’

তিনি বলেন, ‘‘মানুষের নিরাপত্তা, দেশের স্থিতিশীলতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা বন্ধ করতে সকল পক্ষকে আহবান জানাই।একই সঙ্গে আমরা চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার জোর দিই।’’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হুসেইন মুফতুগলু, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপানসহ নয়টি দেশ।

বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক কেউ কোনো কথা বলেননি। তবে একাধিক নেতা যারা কার্যালয় অবস্থান করছেন, তারা বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, ‘‘আমরা রাজনৈতিক বর্তমান পরিস্থিতি ও সংকট উত্তরণে সংলাপের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি।’’

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পতাকাবিহীন একটি সাদা রঙের মার্সিটিজ মাইক্রোবাস গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এই গাড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাটসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা নামেন। তাদের অভ্যর্থনা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

এরপর রাষ্ট্রদূতরা সরাসরি দোতলায় খালেদা জিয়ার চেম্বারে ঢুকেন। যেখানে গত ৩ জানুয়ারি থেকে অবস্থান করছেন বেগম জিয়া।

বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এটি প্রথম সাক্ষাৎ।

পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বিকাল পৌনে ৬টার দিকে গুলশানের অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের সমবেত হন। সন্ধ্যায় ৬টা ২০ মিনিটের পতাকাবাহী গাড়িতে করে বার্নিকাট অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের আসেন। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে গুলশানের ৮৬ নং সড়কের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের অভিযুখে রওনা হন। ওই সময় সাদা মাইক্রোবাসটি সামনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের পুলিশ প্রোটেশন দুইটি গাড়ি পাহারায় ছিল।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল এবং ঢাকায় যুক্তরাজ্য ও তুরস্কের রাষ্ট্রদূত গিয়ে খালেদার সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল।

লাগাতার অবরোধ ডেকে ওই কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুটি মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বুধবার ওই দুই মামলার শুনানির পরবর্তী দিনকে কেন্দ্র করে খালেদাকে গ্রেফতারের আলোচনাও চলছে। এর মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ৯ দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারদের এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।



মন্তব্য চালু নেই